Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হ্যাটট্রিক মিশন: ২১ অঙ্গীকারের ইশতেহার আ.লীগের


১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ২৩:৩৩

।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ’ মূল স্লোগান ধরে খাতওয়ারি বিভিন্ন চমকপ্রদ উপ-স্লোগান ঠিক করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ের মিশনে ‘ইশতেহার-২০১৮’ প্রস্তুত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইশতেহারের চূড়ান্ত খসড়াটি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২১টি বিশেষ অঙ্গীকারকে প্রাধান্য প্রণীত এই ইশতেহারে ১৬ ডিসেম্বরের পর যেকোনো দিন এই ইশতেহার ঘোষণা করা হবে।

আওয়ামী লীগের ইশতেহার উপকমিটির একাধিক সদস্য সারাবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে ইশতেহার প্রণয়ণ কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ইশতেহারের খসড়া প্রস্তুত। এটি এখন আমাদের নেত্রীর (দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা) হাতে। নেত্রী কোনটা মূল স্লোগান হিসাবে নির্বাচন করবেন, সেটি এখনই আমরা বলতে পারব না।

আরও পড়ুন- ১২ ডিসেম্বর আ.লীগের নির্বাচনি প্রচার, ইশতেহার বিজয় দিবসের পর

ইশতেহারে কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে খসড়া প্রস্তুত করেছি। নেত্রী কোনটা সামনে রাখেন, কোনটাকে অগ্রাধিকার দেন, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। আমাদের হাতে ছাপা কপি হাতে পাওয়ার পর সেটা বলতে পারব।

ইশতেহার উপকমিটির একাধিক সদস্য জানান, ৬৪ পৃষ্ঠার খসড়া ইশতেহার জমা দিয়েছেন তারা। তারা যে বিষয়গুলো ইশতেহারে রেখেছিলেন, তার সঙ্গে আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে দলীয় সভাপতির নিদের্শনায়। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টিও।

তারা জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনায় দুয়েকদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত ইশতেহারটি ছাপানোর জন্য প্রেসে দেওয়া হবে। আগামী ১৭ বা ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ইশতেহার প্রকাশ করা হবে।

আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিশেষ উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। সেটি হলো— ‘এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকুরি না পায় বা কাজ না পায়।’

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর এই উক্তিকে সামনে রেখেই ২১টি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে। এগুলো হলো— আমার গ্রাম- আমার শহর: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ; তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি: তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ; নারীর ক্ষমতায়ন; লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণ; পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূল; মেগা প্রজেক্টসমূহের দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন; গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা; সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি; দারিদ্র্য নির্মূল; সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি; সকল স্তরে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা; সার্বিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার; আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা; দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন; ব্লু-ইকোনমি, তথা সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন; নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা; প্রবাসী কল্যাণ কর্মসূচি এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন।

আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে রয়েছে সাতটি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে ইশতেহারের অঙ্গীকার, দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে পটভূমি, তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে গত দুই মেয়াদে সরকারের সাফল্য ও আগামী মেয়াদের জন্য পরিকল্পনা, চতুর্থ অধ্যায়ে দেশের অর্থনীতির চিত্র, পঞ্চম অধ্যায়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, ষষ্ঠ অধ্যায়ে ভবিষ্যৎ দিক দর্শন এবং সপ্তম অধ্যায়ে রয়েছে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান। এসব অধ্যায়ের মধ্যে আবার উপ-অধ্যায়ে ভাগ করে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন বিষয়।

দ্বিতীয় অধ্যায়ের বিষয়গুলো হলো— ২.১ উপ-অধ্যায়ে গৌরবোজ্জল পাঁচ বছর (জুন-১৯৯৬-২০০১): স্বাধীনতার আকঙ্ক্ষা পূরণের সুবর্ণ সময়; ২.২ উপ-অধ্যায়ে বিএনপি জামাত জোট সরকার: লুণ্ঠন, দুঃশাসন ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ; ২.৩ উপ-অধ্যায়ে অধ্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল: গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও উত্তরণ; ২.৪ উপ-অধ্যায়ে আওয়ামী লীগ শাসনামল: সংকট উত্তরণ এবং দিন বদলের পথে যাত্রা (জানুয়ারি ২০০৯-ডিসেম্বর ২০১৩) এবং ২.৫ উপ-অধ্যায়ে আওয়ামী লীগ শাসনামল: উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ (জানুয়ারি-২০১৪ থেকে ডিসেম্বর২০১৮)।

তৃতীয় অধ্যায়ে ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সরকারের দুই মেয়াদের সাফল্য ও অর্জন এবং ২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পাঁচ বচরের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে সবিস্তারে। এই অধ্যায়ের বিষয়গুলো হলো— ৩.১ উপ-অধ্যায়ে গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ; ৩.২ উপ-অধ্যায়ে আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা; ৩.৩ উপ-অধ্যায়ে দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন; ৩.৪ উপ-অধ্যায়ে জনবান্ধব পুলিশ প্রশাসন গড়ে তোলা; ৩.৫ উপ-অধ্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ এবং ৩.৬ উপ-অধ্যায়ে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক।

চতুর্থ অধ্যায়ে সামষ্টিক অর্থনীতি, উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। এই অধ্যায়ের বিষয়গুলো হলো— ৪.১ উপ-অধ্যায়ে অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্প (মেগাপ্রজেক্ট), ৪.২ উপ-অধ্যায়ে আমার গ্রাম- আমার শহর: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ; ৪.৩ উপ-অধ্যায়ে তরুণ যুব সমাজ: তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি; ৪.৪ উপ-অধ্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস; ৪.৫ উপ-অধ্যায়ে কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি: খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের নিশ্চয়তা; ৪.৬ উপ-অধ্যায়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি; ৪.৭ উপ-অধ্যায়ে শিল্প উন্নয়ন; ৪.৮ উপ-অধ্যায়ে শ্রমিক কল্যাণ ও শ্রমনীতি; ৪.৯ উপ-অধ্যায়ে স্থানীয় সরকার: জনগণের ক্ষমতায়ন; ৪.১০ উপ-অধ্যায়ে শিক্ষা; ৪.১১ উপ-অধ্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবারকল্যাণ; ৪.১২ উপ-অধ্যায়ে যোগাযোগ; ৪.১৩ উপ-অধ্যায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণ; ৪.১৪ উপ-অধ্যায়ে সমুদ্র বিজয়: ব্লু-ইকোনমি; সমুদ্র বিজয়- উন্নয়নের দিগন্ত উন্মোচন; ৪.১৫ উপ-অধ্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা; ৪.১৬ উপ-অধ্যায়ে শিশু কল্যাণ; ৪.১৭ উপ-অধ্যায়ে প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ কল্যাণ; ৪.১৮ উপ-অধ্যায়ে নারীর ক্ষমতায়ন; ৪.১৯ উপ-অধ্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন; ৪.২০ উপ-অধ্যায়ে সংস্কৃতি; ৪.২১ উপ-অধ্যায়ে ক্রীড়া; ৪.২২ উপ-অধ্যায়ে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়; ৪.২৩ উপ-অধ্যায়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহ; ৪.২৪ উপ-অধ্যায়ে প্রতিরক্ষা: নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার সুরক্ষা; ৪.২৫ উপ-অধ্যায়ে পররাষ্ট্র; ৪.২৬ উপ-অধ্যায়ে এনজিও; ৪.২৭ উপ-অধ্যায়ে মুজিববর্ষ পালন: উন্নয়ন অগ্রযাত্রার শপথ গ্রহণ; ৪.২৮ উপ-অধ্যায়ে ২০৩০ সালে এসডিজি বাস্তবায়ন এবং ৪.২৯ উপ-অধ্যায়ে ব-দ্বীপ বা ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০।

এছাড়া, পঞ্চম অধ্যায়ে ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার সম্মোহনী নেতৃত্বের বিশ্বজনীন স্বীকৃতি’, ষষ্ঠ অধ্যায়ে ‘ভবিষ্যৎ দিক দর্শন’ এবং সপ্তম অধ্যায়ে ‘দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান’ রেখে শেষ করা হয়েছে এবারের আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইশতেহার উপকমিটির সদস্যরা জানান, ভবিষ্যত দিকদর্শনে আজকের বাংলাদেশ আগামীতে কোথায় থাকবে, কী কী পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার কর্মসূচিতে এগিয়ে যাবে— সেই রূপরেখা রয়েছে এবারের ইশতেহারে। এতে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনসহ জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরিকল্পনা রয়েছে।

তাা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবার্ষিকী পালনের অঙ্গীকারও রয়েছে। বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মে তথা প্রজন্ম পরম্পরার ভাবনা মাথায় রেখে ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। ডেল্টা প্ল্যানে ব্লু-ইকোনমির যথোপযুক্ত ব্যবহার করে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার ও দিক-নির্দেশনা রয়েছে এতে।

উল্লেখ্য, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে এই নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দও শেষ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে নির্বাচনি প্রচারণা। তবে আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করবে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, গত বেশকিছু জাতীয় নির্বাচনে সিলেট থেকে নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর রেওয়াজ তৈরি হলেও এবারে ১২ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করবেন শেখ হাসিনা। এরপর দুপুরে টুঙ্গিপাড়ার কোটালিপাড়ায় একটি জনসভায় বক্তৃতা করবেন তিনি।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ইশতেহার হ্যাটট্রিক মিশন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর