হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : পরীক্ষা কেন্দ্রেই পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এজন্য গত সপ্তাহে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইন এ প্রসঙ্গে সারাবাংলা’কে জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটা বড় চ্যালেজ্ঞ। এজন্য আমরা প্রশ্ন ছাপানোর প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছি।
তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে প্রশ্ন ছাপানো প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্যক্তির সংখ্যা আমরা কমিয়ে এসেছি। আগের ঘটনাগুলোর অভিজ্ঞতা থাকে আমরা বুঝতে পেরেছি ট্রেজারিতে বেশি লোক থাকার কারণেই প্রশ্ন ফাঁস হত। আগে এই প্রক্রিয়ায় ২১৮ জন ছিল। এখন মাত্র ১৮ জন কাজ করছেন।
সোহরাব হোসাইন আরও বলেন, আমরা ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ছাপানোর কাজটি করতে চাই। কেন্দ্র থেকেই এটি করা হবে। এজন্য নির্দিষ্ট একটি সফওয়্যার বানানোর বিষয়েও চিন্তা চলছে। এর বাইরে এখন আর কোন বিকল্পও দেখছি না। বিষয়টি নিয়ে এখন আমরা কাজ করছি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় প্রশ্ন ব্যাংকে সকল ধরনের বা সেটের প্রশ্ন থাকবে। প্রতিটি পরীক্ষার দিন সকালে অনলাইনে প্রশ্নপত্র সকল কেন্দ্রে পাঠানো হবে। পরে কেন্দ্রগুলোর একটি নির্দিষ্ট কক্ষে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিনের মাধ্যমে ছাপানো হবে। প্রশ্নপত্র ছাপানোর সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকল ধরনের তদারকি করবেন জেলা বা উপজেলা প্রশাসন। দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা কেন্দ্রের নির্দিষ্ট কক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরির বিষয়েও আলোচনা চলছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
এর আগে প্রশ্নপত্র রোধ করতে গত বছরের জুনে বর্তমান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিব তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসাইনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি একই বছরের ১৭ জুন পৃথক তিনটি সাব-কমিটি গঠন করে। কমিটিগুলো হচ্ছে সেন্ট্রাল কোশ্চেন ব্যাংক এন্ড সিকিউরিটি সাব-কমিটি, প্রিন্টিং ম্যানেজমেন্ট এন্ড সিকিউরিটি সাব-কমিটি এবং লজিস্টিক সার্পোট সাব-কমিটি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাহাবুবর রহমান এই তিন কমিটির কো-অর্ডিনেশনের দায়িত্বে ছিলেন। এই কমিটি গত বছরের শেষে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল। ওইসব সুপারিশের মধ্যে কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রশ্ন ছাপানো এবং নির্দিষ্ট সফটওয়্যার তৈরির বিষয়টি ছিল। ছাপানোর নতুন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা গেলে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হবে এবং ব্যয় অনেক কমে আসবে।
বর্তমানে পরীক্ষা শুরুর কয়েক সপ্তাহ আগে সরকারের বিজি প্রেসে প্রশ্ন ছাপানো হয়। প্রতিটি বিষয়ে ৩২ সেট প্রশ্ন ছাপানো হয়। পরে লটারীর মাধ্যমে ৮ সেট প্রশ্ন প্যাকেটজাত করে প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়। আইনশৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতায় একজন ম্যাজিস্টেট এই পৌছানোর দায়িত্ব পালন করেন। পরে পরীক্ষার দিন সকালে বোর্ড থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নতুন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। তার আগে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রক্রিয়ায় দেশের কয়েকটি স্কুলের এসএসসির প্রি-টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় এই প্রক্রিয়ার কোনো ত্রুটি থাকলে তা সংশোধন করা হবে।
সারাবাংলা/এইচএ/এমএ