।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর মাঠে নেমেছে নৌকা, ধানের শীষ ও লাঙ্গলসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। নির্বাচনি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন ও মনোনয়ন বঞ্চিতদের কথা মাথায় রেখে ‘নৌকার প্রার্থী টু নৌকা বঞ্চিত তৃণমূলের নেতাদের মানসিক দূরত্ব’ কমিয়ে আনতে এখন থেকে মাঠে নেমে কাজ শুরু করবে আওয়ামী লীগ।
মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার নেতার নেতৃত্বে মহাজোটের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিতে আট বিভাগেই দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কাজ করবে বলে সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন একাধিক সূত্র।
আগামীকাল (১২ ডিসেম্বর) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা শুরু করবে আওয়ামী লীগ। দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নৌকায় ভোটের আহ্বান জানাবেন শেখ হাসিনা।
এরপর আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের আটটি টিম আট বিভাগে নৌকায় ভোট চাওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলের মানসিক দূরত্ব কমাতে কাজ শুরু করবেন। দেশের নির্বাচনি ইতিহাসে এবার প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন দলের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটের মাঠে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপি নেতৃত্বধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট না ঐক্যফ্রন্ট সরকার গঠনে জনগণের ম্যান্ডেট পাবে।
এ বিষয়ে নির্বাচনি দায়িত্ব পাওয়া আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসলে মাল্টিপ্লাস পার্টিতে একটি মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। আমরা এবারের নির্বাচনটিকে রাজনৈতিকভাবে মনে করি যে, এটি একটি আমাদের রাজনৈতিক যুদ্ধ এবং আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্ন। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি এটির ধারাবাহিকতা থাকবে কি থাকবে না, না বাংলাদেশ আবার মুখ থুবড়ে পড়বে। এই রাজনৈতিক মানসিকতা নিয়ে আসলেই আমরা চেষ্টা করছি সব জায়গায় যে মনোদূরত্ব বা তৃণমূলে মানসিক যে দূরত্বটা সৃষ্টি হয়েছে সেটা কমিয়ে আনতে। প্রার্থী টু অপর প্রার্থী পরিপন্থীদের, এটি আমরা কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন জায়গায় সফরে বের হচ্ছি। আগামীকাল ১২ ডিসেম্বর থেকে নেত্রী সফর করবেন। উনি প্রথমেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর টুঙ্গিপাড়া ও কোটালিপাড়ায় জনসভার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করবেন। এরপর পাশ্ববর্তী এলাকায় যাবেন। এরপর যাবেন সিলেট, সিলেট হযরত (র) শাহজালাল ও শাহ পরাণের মাজার জিয়ারত করবেন। উনি সবগুলো বিভাগেই সফর করবেন।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা হলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ব্যবহার না করে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচনি কার্যক্রম ধানমন্ডি ৫ নম্বরে নিজের বাড়ি ‘সুধাসদন’ থেকে পরিচালনা ও মনিটরিং করবেন। এখানে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, নীতিনির্ধারণী বৈঠকসহ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে তৃণমূল নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে গণভবনে ৩ শতাধিক সাবেক সরকারি আমলাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত শীর্ষ নেতাদের বিভাগওয়ারী নির্বাচনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমাদের অনেক নেতাদের এবার ইলেকশন করতে না দিয়ে ইলেকশন পরিচালনার জন্য এবং সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য তাদেরকে রেখেছি। এক একটা গ্রুপের দায়িত্ব আমরা দিয়ে দিচ্ছি। কাজেই তারা এই বিষয়টা দেখবে।
এ ছাড়াও গত ৮ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে খোলা চিঠি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিশেষ করে তিনি দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে যারা বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হয়েছেন তাদের উদ্দেশে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন। চিঠিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘আপনার কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ, ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে আপনার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে মহাজোটকে বিজয়ী করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন। আপনার ত্যাগ, শ্রম ও আন্তরিকতা সবকিছুই আমার বিবেচনায় আছে।’
চিঠিতে তিনি আরও বলেছেন, বিএনপি জামায়াতের হিংস্র থাবা থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে বাংলাদেশকে টেকসই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমরা সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আবারও বাংলাদেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবে। সেই বিজয়ের অংশীদার হবেন আপনিও। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে নৌকা মার্কাকে পরাজিত করার সাংগঠনিক শক্তি আর কারও নেই। আশা করি, আগামী নির্বাচনে আপনার নির্বাচনি এলাকায় আওয়ামী লীগ ও মহাজোট মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে আপনার সকল সাংগঠনিক দক্ষতা, শক্তি ও সামর্থ্য আওয়ামী লীগের বিজয়কে সুনিশ্চিত করবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের গত এক দশকের অর্জিত উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সংগঠনের একজন আদর্শবান, ত্যাগী ও বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা ও সার্বিক কর্মকাণ্ডে আপনার স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্তভাবে প্রত্যাশা করছি।’
সারাবাংলা/এনআর/এমআই