মানুষের মাঝে নওফেল, যেন ফিরলেন মহিউদ্দিন!
১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৩৪
।। রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আজীবন মানুষের সঙ্গে মিশে রাজনীতি করে গেছেন বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। গায়ে সফেদ পাঞ্জাবির উপর মুজিব কোট, মাথায় টুপি দেওয়া মহিউদ্দিন ভোট চাইতে গিয়ে রিকশাওয়ালা, কুলি-মজুর, বস্তিবাসী, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতেন। বাবার প্রজন্মের রাজনীতি সমাপ্তির পথে, সন্তানের প্রজন্মের রাজনীতির শুরু। অবয়বে ‘পিতার ছায়া’ নিয়ে সন্তান মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও মিশে যেতে শুরু করেছেন জনতার কাতারে।
মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) সাত সকালেই ভোটের প্রচারে নেমেছিলেন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের নৌকার প্রার্থী নওফেল। নগরীর জেল রোড এলাকায় নওফেলের উপস্থিতির খবর পেয়েই ছুটে আসতে থাকে সাধারণ মানুষ। ‘আঁরার মহিউদ্দিনর পোয়া আইস্যি’(আমাদের মহিউদ্দিনের ছেলে এসেছে)- নওফেলকে নিয়ে মানুষের মধ্যে ছিল এমনই উদ্দীপনা। ভালোবেসে কেউ নওফেলকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন, কেউ মাথায় রেখেছেন ‘ভালোবাসার হাত’।
সকাল ৮ টার দিকে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে জেল রোডে আমানত শাহ’র মাজারে যান সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের ছেলে নওফেল। মাজার জেয়ারত শেষে আশপাশের এলাকায় নেমে পড়েন গণসংযোগে।
লিফলেট নিয়ে নওফেল যান বিভিন্ন দোকানে। কুশল বিনিময় করেন। ভোট দেওয়ার অনুরোধও করেন। রিকশাওয়ালা, সাধারণ নারীপুরুষ যারাই ছুটে এসেছেন তাদের কাছে গিয়ে দোয়া নিয়েছেন।
একজন রিকশাওয়ালা নওফেলকে বুকে টেনে নিয়ে বলেন, ‘অনে আঁরার মহিউদ্দিনর পোয়া। অনর বাপে আঁরারলাই বহুত কিছু গইরয্যি। অনরে আঁরা দোয়া গরির।’ (আপনি আমাদের মহিউদ্দিনের ছেলে। আপনার বাবা আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমরা আপনার জন্য দোয়া করছি।)
স্থানীয় বস্তির কয়েকজন নারীও এসেছিলেন ভিড়ের মধ্যে। আওয়ামী লীগের এক নেতা তাদের বললেন, ‘ইবা আঁরার মহিউদ্দিন চৌধুরীর পোয়া।’ (ইনি আমাদের মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে।) শুনে এক বৃদ্ধা এসে নওফেলের মাথায় রাখেন পরম মমতায়। প্রয়াত মহিউদ্দিনের স্মৃতি হাতড়ে আবেগপ্রবণও হয়ে পড়েন কেউ কেউ। একবছর আগে বাবা হারানো নওফেলও তখন কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
এসময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘১৯৯৪ সালে মহিউদ্দিন ভাই যখন প্রথমবার মেয়র ইলেকশন করেছিলেন, তখন আমরা এখান (আমানত শাহ মাজার) থেকেই প্রচারণা শুরু করেছিলাম। নওফেলকে নিয়েও আমরা এখান থেকেই প্রচারণা শুরু করলাম। আমরা অবশ্যই জয়ী হবো।’
প্রচারণা শুরুর সময় মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে চট্টগ্রামের সকলেই শাহ আমানতের মাজার জিয়ারত করে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। আমিও শাহ আমানতের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছি।
নির্বাচনী ওয়াদা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নওফেল বলেন, দলের মূল ইশতেহার কয়েকদিনের মধ্যে ঘোষণা হবে। ইশতেহার আসার আগে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে নিজে কিছু বলার এখতিয়ার নেই। তবে দলের একজন প্রার্থী হিসেবে জয়ী হলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামের নাগরিক সমস্যা সমাধানে অবদান রাখতে চান বলে জানান তিনি।
প্রচারণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন নওফেল। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের যে মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন তার সুফল নগরবাসী দেখতে পাচ্ছে। আমরা যা বলি তা করি। মানুষের আস্থা আমাদের (আওয়ামী লীগ) সাথে আছে। রায় আমাদের পক্ষে যাবে প্রত্যাশা করি। চট্টগ্রামের ১৬ টি আসন আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারব এ আশা করি।’
প্রচারণায় নওফেলের সঙ্গে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও জহিরুল আলম দোভাষ, মিরসরাইয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী ও হাসান মুরাদ বিপ্লব, আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম ফারুক, মশিউর রহমান ও চন্দন ধর।
জেল রোড, বক্সিরহাট এলাকায় গণসংযোগের পর নওফেল নগরীর চশমাহিলের বাসায় গিয়ে পিতার কবর জিয়ারত করেন। এরপর কেসিদে রোডে এসে নির্বাচনী কার্যালয় ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন।
আশপাশের এলাকায় গণসংযোগের পর নওফেল বিকেলে নগরীর পাথরঘাটা এলাকায় প্রচারণা চালানোর কথা রয়েছে।
বন্দরনগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম-৯ আসনে নওফেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন বিএনপির মহানগর কমিটির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে আরও আছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও প্রবীণ শ্রমিক নেতা মৃণাল চৌধুরী।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের টানা ১৭ বছরের মেয়র ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর জীবনাবসান ঘটে।
সারাবাংলা/আরডি/জেএএম