Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রচারণার প্রথম দিনেই সারাদেশে হামলা-সংঘর্ষ, নিহত ১


১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ২২:৪৩

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণার প্রথম দিনেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত এবং শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) দিনভর নোয়াখালী, বগুড়া, ঠাকুরগাঁও এবং রাজবাড়ীতে বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এদিন (মঙ্গলবার) বিকেলে নোয়াখালীর সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহিম রিজভীর বাড়িতে ধানের শীষের পক্ষে উঠান বৈঠক চলছিল। এ সময় নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে এলাকায় আসেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতাকর্মীরা। দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে মো. হানিফ নামে এক যুবলীগ নেতাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে সকাল ১১টার দিকে কবিরহাট বাজার জিরো পয়েন্টে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের পূর্ব ঘোষিত পথসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষে উভয় দলের ৪০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মওদুদ আহমদ। অভিযোগ ওঠে, এ সময় কমপক্ষে ২৫টি দোকান, ঘর-বাড়ি ও বিএনপি অফিস ভাঙচুর করা হয়।

কবিরহাট পৌর বিএনপি’র সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু জানান, তার বাড়ি এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিএনপি অফিস ভাঙচুর করা হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা কবিরহাট উপজেলা জাসাসের সভাপতি আবদুস সাত্তারের বাড়িতে গিয়ে তাকে মারধর করেছে।

এছাড়া নরোত্তমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ, কবিরহাট পৌর যুবদল সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন ও কবিরহাট বিএনপি প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোমিত ফয়সল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, নেতাকর্মীরা পথসভায় আসার সময় ভূঁইয়ারহাট, শাহজীর হাট, কাচারীহাট, কালামুন্সী, ব্যাপারীহাটে বিএনপির মিছিলে হামলা চালানো হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন ১০ জন।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে কবিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন রুমি পাল্টা অভিযোগ করে সারাবাংলাকে জানান, বিএনপি কর্মীদের হামলায় আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মো. ইসমাইল ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবদুল জলিলকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ কবিরহাট পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও বিএনপি নেতা একরাম উদ্দিনকে আটক করেছে।

এদিকে বগুড়ার ধুনটে নির্বাচনি প্রচারণার প্রথম দিনে বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে বলে দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর এবং চারটি মোটরসাইকেলে আগ্নিসংযোগ করা হয়। এর জের ধরে আওয়ামী লীগ বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার ধুনট পৌর শহরের কলাপট্টি এলাকায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ অভিযোগ করে বলেন, “পরিকল্পিতভাবে আমার গাড়ি বহরে হামলা করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।”

শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, “বিএনপি নেতাকর্মীরা কুলখানি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্তমানে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।”

অন্যদিকে নির্বাচনি প্রচারে যাওয়ার সময় ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় বহরে থাকা বেশ কয়েকটি ভাঙচুর করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বহরের ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে মির্জা ফখরুলকে বহনকারী গাড়িটিও রয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল জানান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দানারহাট এলাকায় নির্বাচনি গণসংযোগে গেলে তার গাড়িবহরে এ হামলা চালানো হয়। এ সময় ৬টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। মির্জা ফখরুলের সফরসঙ্গীদের মধ্যে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে তিনি আহত হননি। ঘটনার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান জানান, বেগুনবাড়িতে মির্জা ফখরুল গণসংযোগ করতে নেমেছিলেন। এ সময় পেছন থেকে তার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। তার এই গণসংযোগ নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী হয়নি। সে কারণে পুলিশের কিছু জানা ছিল না। জানা থাকলে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হতো। তবে হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।

এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় ময়মনসিংহের ফুলপুরে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী শরীফ আহমেদ ও বিএনপি প্রার্থী শাহ শহীদ সারওয়ার সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদরুল আলম জানান, সার্বিক পরিস্থিতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

হামলা ও ভাঙচুরের তথ্য পাওয়া গেছে রাজবাড়ী জেলাতেও। মঙ্গলবার বিএনপি’র নির্বাচনি পথসভায় ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে দাবি করেছেন দলের নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, হামলায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। এ সময় স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে দিক-বিদিক ছুটাছুটি করে- এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মুহূর্তের মধ্যে রাজবাড়ী বাজারের সব দোকান-পাট ও মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়।

রাজবাড়ীর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল করিম সারাবাংলাকে বলেন, বিএনপি খলিফাপট্টিতে পথসভা করবে সেটা আমাদের জানা ছিল না। যখন তারা সভার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন দুর্বৃত্তরা এসে হামলা চালায় বলে আমরা জানতে পেরেছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এই ঘটনায় জড়িতেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/ইউজে/এটি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর