Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যুদ্ধাপরাধী-জঙ্গি-জিহাদির হাতে ধানের শীষ, বিতর্কে বিএনপি


১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৫১

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী, জঙ্গিবাদে মদতদাতা ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীসহ বিতর্কিত ব্যক্তিদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে মনোনয়ন দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে বিএনপিসহ তাদের নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ভোটার ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

এর আগে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকেই এই জোটে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান নিয়ে ছিল প্রশ্ন। ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে একাধিকবার জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা থাকবে না বলে জানানো হলেও এ বিষয়ে বিএনপির কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। পরে মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শেষে দেখা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর ২২ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ধানের শীষ প্রতীকে।

আরও পড়ুন- জামায়াত ২২, ঐক্যফ্রন্ট ১৯, অন্য শরিক ১৮

এসব প্রার্থীর মধ্যে সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি যেমন আছেন, তেমনি আছেন একই অপরাধে দণ্ডিতদের ভাই কিংবা সন্তান। এছাড়া, জঙ্গিবাদের উত্থানে মদতদাতা এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদেরও ধানের শীষে মনোনয়ন দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে দুই মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বেশ কয়েকজন রয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থীর তালিকায়। এর মধ্যে খুলনা-৫ আসনে ধানের শীষে মনোনয়ন পেয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার। একাত্তরে রাজাকার হিসেবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রত্যক্ষ সহায়তা করেছিলেন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে খুলনা-৫ আসন থেকে চার দলীয় জোটের ব্যানারে জামায়াতের এই নেতা জয়ী হলে রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর আদলে গড়ে তোলেন কুখ্যাত বাহিনী ‘জিহাদী পার্টি’। এই বাহিনীর মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চলে নির্যাতন। বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে কক্সবাজার-২ আসনেও আছেন মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ। অবশ্য ধানের শীষ নয়, আপেল প্রতীকে নির্বাচন করবেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের মওলানা আব্দুল হাকিম, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনের আ ন ম শামসুল আলমও মনোনয়ন পেয়েছেন ধানের শীষে। তারা প্রত্যেকেই একাত্তরে ছাত্রসংঘের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজ নিজ এলাকায় আলবদর বাহিনীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। আ ন ম শামসুল আলম জামায়াতের ডোনার হিসেবেও দলীয় ঘরানায় পরিচিত।

অন্যদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত বেশ কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা এই নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকে। এর মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত আবদুল আলীমের ছেলে ফয়সাল আলীম মনোনয়ন পেয়েছেন জয়পুরহাট-১ আসন থেকে। একাত্তরে এলাকায় রাজাকার কমান্ডার ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ড পেয়ে পলাতক আসামি আব্দুল মোমিন তালুকদার। তার স্ত্রী মাসুদা মোমিন তালুকদারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বগুড়া-৩ আসন থেকে। অন্যদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত আসামি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পুত্র শামীম বিন সাঈদীকে ধানের শীষে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে পিরোজপুর-১ আসন থেকে।

সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও দেওয়া হয়েছিল মনোনয়ন। যদিও শেষ পর্যন্ত তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। পাবনা-১ (সাঁথিয়া উপজেলা ও বেড়া উপজেলার আংশিক) আসনে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমানও নির্বাচন করছেন এবার। তবে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন এবং শেষ সময় পেরিয়ে গেলেও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি তিনি।

বিজ্ঞাপন

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জঙ্গিদের মদতদাতা হিসেবে চিহ্নিতদেরও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ধানের শীষ প্রতীকে। এর মধ্যে রয়েছেন নওগাঁ-৬ আসনের আলমগীর কবির, উত্তরবঙ্গে জঙ্গিবাদ বিস্তারে প্রত্যক্ষ মদতদাতা হিসেবে তিনি পরিচিত। জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে তার নাম। একইসঙ্গে রাজশাহী-৫ আসনের নাদিম মোস্তফাও বিরুদ্ধেও রাজশাহী, তথা উত্তরাঞ্চলে জঙ্গিবাদ বিস্তারে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। এছাড়া, রাজশাহী-১ আসন থেকে ধানের শীষে মনোনয়ন পাওয়া ব্যরিস্টার আমিনুল হক এবং রাজশাহী-২ আসন থেকে ধানের শীষে মনোনয়ন পাওয়া রাজশাহী সিটি করপোরেশেনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে, তারা রাজশাহী অঞ্চলে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছিলেন।

এছাড়া, নাটোর-১ আসনের আলোচিত রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, নাটোরসহ উত্তরবঙ্গে জঙ্গিবাদ, মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদত দিয়েছেন তিনি। আবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই সুলতান সালাউদ্দীন টুকুকে ধানের শীষে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে টাঙ্গাইল-২ আসন থেকে। তার বিরুদ্ধেও বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে জঙ্গিদের মদত দেওয়াসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

এর বাইরেও বিতর্কিত ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত— এমন অভিযোগে অভিযুক্তরাও রয়েছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের তালিকায়। তাদের মধ্যে আছেন চট্টগ্রাম-৪ আসনের ইসহাক চৌধুরী। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভারতে বসে মোসাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছিলেন বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী। ইসহাক চৌধুরীর তার বড় ভাই বলে জানা গেছে। আবার রংপুর-৩ আসনের প্রার্থী রিটা রহমান বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত মেজর (অব.) খায়রুজ্জামানের স্ত্রী। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার রায়ে দণ্ড পাওয়া বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের স্ত্রী তাহমিনা জামানকেও নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা/টিআর

জঙ্গি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ধানের শীষ বিএনপি মানবতাবিরোধী অপরাধী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর