Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নজিবুল বশরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীকে ‘হত্যাচেষ্টা’র অভিযোগ


১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৩৭

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তরিকত ফেডারেশনের নেতা নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম।

সোমবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) নগরীতে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেছেন পেয়ারুল ইসলাম।

‘ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পেয়ারুল সংঘাতের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী এবং আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি এ হামলা চালিয়েছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী তৈয়বের নেতৃত্বে মুখোশধারীরা গুলি ছোড়ে। অ্যাম্বুলেন্সে থাকা সন্ত্রাসীরা নাজিমের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে। তারা আমাকেও অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে।’

এর আগে, সোমবার রাতে ফটিকছড়ি উপজেলার আজাদী বাজারে ভাণ্ডারি ও পেয়ারুলের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাহমুদুল হকসহ অন্তত পাঁচ জন আহত হন।

সংঘাতের পরদিন নগরীর নাসিরাবাদে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে এসে পেয়ারুল দাবি করেন, তিনি দলের শীর্ষ মহলের সবুজ সংকেত পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ী হবেন বলেও আশাবাদের কথা জানিয়েছেন তিনি। পেয়ারুল বলেন, ‘আমি জয়ী হব। বিএনপি প্রার্থী নিকটতম হবেন। সবচেয়ে কম ভোট পাবেন নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি।’

‘উনি (নজিবুল বশর) আওয়ামী লীগের যত ক্ষতি করেছেন, জামায়াত-শিবিরও অতটা করেনি। ফটিকছড়িতে উনি আওয়ামী লীগের কবর রচনা করবেন। এত কিছুর পরও উনি প্রার্থী থাকলে আমাদের দল ধ্বংস হয়ে যাবে’,— বলেন পেয়ারুল।

বিজ্ঞাপন

নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির বিরুদ্ধে নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী, মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক, ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মজিবুর রহমানকে হত্যার অভিযোগও এনেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তৎকালীন বিএনপি নেতা নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি তিন হাজার হিন্দুকে এলাকাছাড়া করেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে নাজিম উদ্দিন মুহুরী বলেন, ‘২০০১-০৬ সালে ফটিকছড়িতে ১৭ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী তার (মাইজভাণ্ডারি) প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদতে খুন হন। ২০০৮ সালে তিনি তরিকত ফেডারেশন গঠন করেন। ২০১৪ সালে নেত্রীর দিকে তাকিয়ে শত কষ্ট সয়ে আমরা উনার জন্য কাজ করি। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ফটিকছড়িবাসীর দাবি না মেনে উন্নয়নের নামে দুর্নীতি করেছেন।

তিনি বলেন, ‘উনি (মাইজভাণ্ডারি) সংগঠনকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তিও করেছেন। এরপর আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় উনাকে ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মজিবুল হক, সুয়াবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তালেব, ভক্তপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুল আজম, আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমান স্বপন, শফিউল আলম, আমানুল্লাহ চৌধুরী ও সালামত উল্লাহ চৌধুরী।

এর আগে, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ফটিকছড়ি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি। সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় তিনি যোগ দিয়েছিলেন বিএনপিতে।

বিজ্ঞাপন

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৯৬ সালের আরেকটি নির্বাচন ও ২০০১ সালে তিনি বিএনপি থেকে নির্বাচিত হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল আনোয়ারের কাছে হেরে যান।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি বিএনপি ত্যাগ করে তরিকত ফেডারেশন নামে একটি দল গঠন করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি জোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পেয়ে ফটিকছড়ি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল এ টি এম পেয়ারুল ইসলামকে। তবে তিনি যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কাছে হেরে যান। ২০১৪ সালে জোটের কাছে আসনটি ছেড়ে দিলে পেয়ারুল নির্বাচন থেকে বিরত থাকেন। তবে এবার মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তিনি।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর