ভোটের ময়দানে কোন আসনে কোন দল শক্তিশালী
১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:৩৩
।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপেন্ডন্ট ।।
ঢাকা: বড় রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত সাংগঠনিকভাবে সারাদেশেই নিজেদের শক্তিশালী করে তোলার চেষ্টা করলেও ভোটের ময়দানে অঞ্চল বা আসনভিত্তিক কোনো একটিরই প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যেমন বৃহত্তর গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চলে, তেমনি রাজপথের বিরোধী দল বেশ শক্তিশালী উত্তরাঞ্চলসহ একাধিক বিভাগে। আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টি বৃহত্তর রংপুরে শক্তিশালী।
‘স্বৈরশাসক’ এইচ এম এরশাদের পতনের পর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত সব জাতীয় নির্বাচনের ফল (ষষ্ঠ ও দশম নির্বাচন বাদে) বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম— এই চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯ আসনের ভোটারদের মধ্যে আওয়ামী লীগ অনেক বেশি শক্তিশালী। এই চারটি নির্বাচনের প্রতিটিতেই ২৭ আসনে আওয়ামী লীগ একটানা চার বার জয়লাভ করেছিল। বাকি দুইটি আসনে আবার এই চারটি সংসদ নির্বাচনের তিনটিতেই জয়ী দল ছিল আওয়ামী লীগ।
যে ২৭ আসনে আওয়ামী লীগ একটানা চার বার জয় পেয়েছিল, সেই আসনগুলো হলো— দিনাজপুর-৫, সিরাজগঞ্জ-১, নড়াইল-২, বাগেরহাট-১, বাগেরহাট-৩, খুলনা-১, পটুয়াখালী-৩, পটুয়াখালী-৪, টাঙ্গাইল-১, জামালপুর-৩, ময়মনসিংহ-১০, কিশোরগঞ্জ-৫, গাজীপুর-১, ফরিদপুর-১, গোপালগঞ্জ-১, গোপালগঞ্জ-২, গোপালগঞ্জ-৩, মাদারীপুর-১, মাদারীপুর-২, মাদারীপুর-৩, শরীয়তপুর-২, শরীয়তপুর-৩, সুনামগঞ্জ-৩, মৌলভীবাজার-৪, হবিগঞ্জ-২, হবিগঞ্জ-৪ ও পার্বত্য বান্দরবান।
অন্যদিকে, নড়াইল-১ও চট্টগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামী লীগ একটানা তিন সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল।
এছাড়া, ফরিদপুর-৫ আসন থেকেও আওয়ামী লীগ পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটানা তিন বার জয় পেয়েছিল। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করলে ফরিদপুর-৫ আসনটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
ক্ষমতাসীনদের শরিক দল জাতীয় পার্টি বৃহত্তর রংপুরের ১২টি আসনের ভোটারদের মধ্যে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম— এই চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিবারেই ছয়টি আসনেই একটানা চার বার জয়লাভ করেছিল। এই ছয়টি আসনের মধ্যে একটি আসন বৃহত্তর রংপুরের বাইরে। আবার পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিবারেই সাতটি আসন থেকে জাতীয় পার্টি একটানা তিন বার জয়লাভ করেছিল।
যে ছয় আসনে জাতীয় পার্টি একটানা চার বার জয়লাভ করেছিল, সেই আসনগুলো হলো— রংপুর-৪, রংপুর-৫, রংপুর-৬, কুড়িগ্রাম-৪, গাইবান্ধা-৫ ও পিরোজপুর-২।
অন্যদিকে, লালমনিরহাট-২, রংপুর-১, রংপুর-২, রংপুর-৩, কুড়িগ্রাম-১, কুড়িগ্রাম-২ ও গাইবান্ধা-৩— এই সাত আসনে পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।
এদিকে, রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম— এই চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিবারেই ১৮টি আসন থেকে একটানা জয় পেয়েছিল। আর পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিটিতেই জয় পেয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থীরা।
বিএনপি যে ১৮ আসনে টানা চার নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল, সেই আসনগুলো হচ্ছে— জয়পুরহাট-১, জয়পুরহাট-২, বগুড়া-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, বগুড়া-৭, খুলনা-২, বরিশাল-৫, কুমিল্লা-২, চাঁদপুর-৪, ফেনী-১, ফেনী-৩, নোয়াখালী-১, নোয়াখালী-২, নোয়াখালী-৩, লক্ষ্মীপুর-১, লক্ষ্মীপুর-২ ও লক্ষ্মীপুর-৩।
অন্যদিকে, বিএনপি যে ৫২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম নির্বাচনে টানা জয় পেয়েছিলে, সেই আসনগুলো হচ্ছে— পঞ্চগড়-১, বগুড়া-১, বগুড়া-৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, নওগাঁ-৩, নওগাঁ-৬, রাজশাহী-১, রাজশাহী-২, রাজশাহী-৫, নাটোর-১, সিরাজগঞ্জ-৩, কুষ্টিয়া-১, কুষ্টিয়া-২, কুষ্টিয়া-৩, চুয়াডাঙ্গা-১, ঝিনাইদহ-২, ঝিনাইদহ-৩, ঝিনাইদহ-৪, বরিশাল-৩, টাঙ্গাইল-৩, টাঙ্গাইল-৬, ময়মনসিংহ-৫, কিশোরগঞ্জ-৬, মানিকগঞ্জ-১, মানিকগঞ্জ-৩, মুন্সীগঞ্জ-১, মুন্সীগঞ্জ-২, মুন্সীগঞ্জ-৩, ঢাকা-১, ঢাকা-২, ঢাকা-৩, ঢাকা-৭, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৩, নরসিংদী-১, নরসিংদী-২, নরসিংদী-৩, নারায়ণগঞ্জ-৩, ফরিদপুর-৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩, কুমিল্লা-১, কুমিল্লা-৪, কুমিল্লা-৮, চাঁদপুর-৩, নোয়াখালী-৪, চট্টগ্রাম-১, চট্টগ্রাম-৫, চট্টগ্রাম-৮, চট্টগ্রাম-১০, চট্টগ্রাম-১১ ও চট্টগ্রাম-১৩।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর ওই সময়ের স্বৈরশাসক এইম এম এরশাদকে হঠানোর পর থেকে দেশে গণতন্ত্রের যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। এর আগে বহুবার এবং এরপর একবার (ওয়ান-ইলেভেনের সময়) গণতন্ত্রের যাত্রা পদে পদে হোঁচট খেয়েছে। ১৯৯০ সালের আগে চার বার জাতীয় সংসদ ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯০-এর পর অনুষ্ঠিত হয় ছয় বার।
১৯৯০-এর পর যে ছয়টি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এর মধ্যে দুইটি নির্বাচন ছিল একতরফা। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির অধীনে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেমন অংশগ্রহণমূলক ছিল না, তেমনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনও বর্জন করে বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল। ২০১৪ সালের নির্বাচনেই দেড় শতাধিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এই দুইটি নির্বাচন বাদ দিলে ১৯৯০ সালের পরে অনুষ্ঠিত বাকি চারটি নির্বাচনেই প্রায় সব দলের অংশগ্রহণ ছিল।
‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯১’ শীর্ষক নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।’
এরপর ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয়, ১৯৮৬ সালে তৃতীয়, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ, ১৯৯১ সালে পঞ্চম, ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ, ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম, ২০০৯ সালে নবম ও ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর