উন্নয়নের ধারায় আওয়ামী লীগের ফের জয়ের প্রত্যাশা ইআইইউ’র
১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:০৯
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রত্যাশা করছে, আগামী এই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর জন্য এই সরকারের আমলে হওয়া মজবুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে চিহ্নিত করেছে ইউনিটটি। পাশাপাশি স্থানীয় সমর্থনও তাদের জয়ে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা জানিয়েছে ইআইইউ।
ইআইইউ জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক পরিবেশ নির্ধারিত হবে আগামী ২০১৯-২০২৩ সালের মধ্যকার সামাজিক অস্থিরতার সম্ভাবনা ঘিরে। এর পাশাপাশি রয়েছে সন্ত্রাসীদের হামলার সম্ভাবনা, বিরোধীদলের বিক্ষোভ ও ভাঙচুর। এসবে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে।
২০১৯-২৩ সালের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জনগণ নতুন সরকার নির্বাচনে ভোট দেবে। বিরোধীদলীয় বিক্ষোভ ও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় এখনই দেশজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট প্রত্যাশা করে যে, ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার আসন্ন নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় লাভ করবে। তবে এর আগ পর্যন্ত দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা বজায় থাকবে।
চলমান ও আসন্ন রাজনৈতিক ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনে সন্ত্রাসী হামলা। এতে করে ব্যাপক আকারে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা বা প্রধান শহরগুলো টার্গেট করবে। এতে আতঙ্ক সৃষ্টি হবে ও জাতীয় নিরাপত্তার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আরও ভূমিকা রাখবে বিরোধীদলগুলোর বিক্ষোভ। বর্তমানে প্রধান অনানুষ্ঠানিক বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী রয়েছেন। তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মতে, তারা খালেদার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বাতিল হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখে না। তবে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ২০১৪ সালে যেক্ষেত্রে তারা নির্বাচন বর্জন করেছিল। ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ধারণা, খালেদার সমর্থকরা তার মুক্তির জন্য বিক্ষোভ-মিছিল অব্যাহত রাখবে। তাদের থামাতে মোতায়েন করা হবে নিরাপত্তা বাহিনী।
ইআইইউ রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধির অপর একটি প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে চলমান রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটকে। তাদের ধারণা, এই সংকট আরও চার থেকে পাঁচ বছর স্থায়ী হবে। এই সংকট যত দীর্ঘমেয়াদী হবে তত বাংলাদেশে সন্ত্রাসী সংগঠনের উৎপত্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে বাংলাদেশ ও এর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
রাজনৈতিক দল বা সন্ত্রাসী ছাড়াও বিভিন্ন নিরপেক্ষ দলের বিক্ষোভের কারণেও রাজনৈতিক অস্থিরতা তীব্র করে তুলতে পারে। যেমন চলতি বছর সড়কে নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ
আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ইআইইউ জানিয়েছে, এতে আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও কিছু অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তাদের প্রধান বিরোধীদলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ঝানু রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের সংবিধানের লেখক কামাল হোসেন।
বিশ্বজুড়ে তিনি একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। দেশে তার আলাদা জনপ্রিয়তা রয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তাদের ওপর বলপ্রয়োগ তরুণ ভোটারদের মধ্যে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এর সঙ্গে সম্প্রতি বিরোধীদলের অনেক নেতাকে গ্রেফতার করায় তা বিরোধীদলের পক্ষে কাজ করতে পারে। তারপরও আসন্ন নির্বাচনে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা অদ্বিতীয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট অনুসারে, নির্বাচনের পর আগামী বছরগুলোতেও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যেই কেন্দ্রীভূত থাকবে। চীন ও ভারত ক্রমাগত হারে দেশটিতে তাদের প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
২০১৯-২৩ সালের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। তবে আসামে অবৈধ বাংলাদেশীদের অভিবাসন দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে চির ধরাতে পারে। এছাড়া তিস্তার পানি বণ্টন নিয়েও দেখা দিতে পারে বিরোধ।
এদিকে চীনের সঙ্গেও ২০১৯-২৩ সালের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার হবে বাংলাদেশের। এমনটাই ধারণা ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের। দেশটিতে বেশ কয়েকটি অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে চীনা সহায়তায়। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বর্তমানের মতো উত্তেজনাপূর্ণই থাকবে বলে ধারণা করছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। এর মূল কারণ হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট।
পরিবর্তন
ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রত্যাশানুযায়ী, ২০১৯ সালে টাকার মান কমবে। সে হিসেবে আগামী বছর ভোক্তাদের খরচ বৃদ্ধি পাবে ৫.৬ শতাংশ। পূর্বে এই বৃদ্ধি ছিল ৫.৫ শতাংশ।
ইআইইউ আগামী বছরের জন্য আমদানি হার নিয়েও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। তাদের প্রত্যাশানুযায়ী, ব্যাপক আর্থিক ঘাটতি সৃষ্টির কারণে কমবে টাকার দর। বর্তমান মার্কিন ডলারের তুলনায় ১ ডলার হচ্ছে ৮৬.৪ টাকার সমান। পূর্বে তা ছিল ৮৫.৮টাকা।
অর্থনীতি
আগামী বছরগুলোতে অবকাঠামোগত প্রকল্প নির্মাণে খরচ বৃদ্ধি ও কর খাতে অনগ্রতি ২০১৮/১৯ অর্থবছরের সমপরিমাণ বাজেট ঘাটতির সৃষ্টি করবে ২০২২-২৩ সালে। বিগত পাঁচ বছরের এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩.৭ শতাংশ। ৪ শতাংশে বৃদ্ধি পেলে তা বিগত পাঁচ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
ইআইইউ এ সংকট কাটাতে, বাংলাদেশ ব্যাংককে আমদানি খরচ ৭৫ বেসিস পয়েন্টে ৬.৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি রিজার্ভ রেপো হার ৪.৭৫ শতাংশে রাখার আহ্বান জানিয়েছে। এর সঙ্গে ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আর্থিক ইস্যুতে কিছুটা নরম হতে পরামর্শ দিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।এতে করে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাড়বে। পরবর্তীতে ২০২২ সালে পুনরায় হার বৃদ্ধি করতে হবে তাদের।
ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রত্যাশানুযায়ী, এই উপায় অবলম্বনে ২০১৮/১৯-২০২২/২৩ অর্থবছরে গড় জিডিপি বৃদ্ধি হবে ৭.৭ শতাংশ। শক্ত হবে বেসরকারি খাত।
ইন্টেলিজেন্স ইউনিট যেসব জায়গায় ভুল হতে পারে
যেকোনো বিদেশী নাগরিকের ওপর হামলা বাংলাদেশের আমদানি-খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি বিরোধীদলীয় বিক্ষোভও একই ভূমিকা রাখবে। ব্যাপক সংখ্যার শরণার্থীর কারণে ইসলামি চরমপন্থিতার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট…
ইআইইউ হচ্ছে একটি ব্রিটিশ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। তারা ব্যবসায়িক উন্নয়ন, অর্থনীতি, রাজনৈতিক প্রবাহ ও সরকারের নীতিমালা বিশ্লেষণ করে থাকে। তারা সাধারণত চার ভাবে তথ্য সরবরাহ করে থাকে- ডিজিটাল পোর্টফোলিও, প্রিন্ট, গবেষণা প্রতিবেদন ও বিভিন্ন সেমিনার। এটি দ্য ইকোনমিস্ট গ্রুপের একটি শাখা প্রতিষ্ঠান।
সারাবাংলা/ আরএ