‘মনোনয়নপত্র গ্রহণে নির্বাচন কমিশন পিক অ্যান্ড চুজ করেছে’
১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:৫১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র গ্রহণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন পিক অ্যান্ড চুজ (পক্ষপাতিত্ব) করেছে বলে আপিল বিভাগকে জানিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী ফিদা এম কামাল।
বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়নপত্র গ্রহণে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশনের করা আবেদনের শুনানিকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বুধবার (১২ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতির সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল রেখে আদেশ দেন।
আপিলে শুনানির সময় দুলুর আইনজীবী ফিদা এম কামাল বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পরও ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও হাজী সেলিমের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ আমার মক্কেলের সেটি করা হয়নি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো মানদণ্ডই রক্ষা করেনি। বরং তারা পিক অ্যান্ড চুজ করেছেন। তবে এর জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো বক্তব্য দেননি।
এর আগে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নির্বাচন কমিশনের পক্ষে তার বক্তব্য দেন।
উভয়পক্ষের বক্তব্য শেষে দণ্ডিত বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়নপত্র গ্রহণে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রেখে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। ফলে এ দুই প্রার্থীর নির্বাচন আটকে গেল সর্বোচ্চ আদালতে।
আদালতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে টুকুর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। দুলুর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল।
পরে আজমালুল হোসেন কিউসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মামলায় হাইকোর্ট থেকে আদেশ পেয়েছিলাম, যেন তিনি নির্বাচন করতে পারেন। সেখানে একটি রুল দেওয়া হয়েছিল, উনার মনোনয়নপত্র বাতিল করে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সে বিষয়ে রুল জারি করা হয়েছে। সেটা বিচার্য বিষয়, সঠিকভাবে উনারা রুলটা দিয়েছেন কিনা।
দ্বিতীয়ত, উনাকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন এসে গতকাল চেম্বার আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়েছিলেন। চেম্বার বিচারপতি আজ সেটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছিলেন।
আজ সেটি শুনানির পর স্টে যেটা দিয়েছিলেন চেম্বার জাজ, সেটা কন্টিনিউ করেছেন। তার মানে হল উনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এই হলো আজকের আদেশ।
আজকে আরেকজন ছিলেন দুলু সাহেব (রুহু কুদ্দুস তালুকদার দুলু)। ফৌজদারী কার্যবিধির ৪২৬ ধারায় উনাদের কনভিকশনটা সাসপেন্ড করে দিয়েছিল হাইকোর্ট। তো আজকের আদেশের পর দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে তারা নির্বাচন করতে করতে পারছেন না।’
এক প্রশ্নের জবাবে কিউসি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম বিষয়টি সেটেল করে দিতে। যেহেতু লিভ পিটিশনের সুযোগ রয়েছে, আমার মতে বিষয়টি এখনও সেটেল হয়নি।’
সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তাদের দুজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশনে আপিলেও সেই সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। এর বিরুদ্ধে টুকু ও বুলু হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে শুনানি করে গত সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের মনোনয়ন গ্রহণের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দেন।
সেই সঙ্গে ওই দুই আসনে দলের কোনো বিকল্প প্রার্থী থাকলে এবং তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে চাইলে সেই সুযোগও দিতে বলা হয়েছে। এ আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে টুকু সিরাজগঞ্জ-২ আসনে এবং দুলু নাটোর-২ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই