ডেমোক্রেসি ওয়াচসহ ৪ পর্যবেক্ষক সংস্থার বিষয়ে আপত্তি আ.লীগের
১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:১৪
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনভুক্ত চারটি সংস্থাকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম।
ইসিকে দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে এইচ টি ইমাম এই দাবি করেন।
এইচ টি ইমামের অভিযোগ ওই চার সংস্থা বিএনপি সমর্থিত। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নামে দলীয় কাজ করে।
এইচ টি ইমাম বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে দেশি ও বিদেশিরা কাজ করেন। দেশীয় যে ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে এদের মধ্যে চারটি সংস্থা একেবারেই দলীয়। তাদের সম্পর্কে মারাত্মক তথ্য আছে। এরা হল- ডেমোক্রেসি ওয়াচ, খান ফাউন্ডেশন, লাইট হাউস ও বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ।
এরমধ্যে ডেমোক্রেসি ওয়াচের প্রধান হচ্ছেন তালেয়া রেহমান। যিনি বিএনপির বড় নেতা ও সাংবাদিক-লেখক শফিক রেহমানের স্ত্রী। খান ফাউন্ডেশন চালান বিএনপি নেতা ড. মঈন খানের স্ত্রী। লাইট হাউসের পেছনে প্রত্যক্ষভাবে রয়েছেন তারেক রহমান। আর বাংলাদেশ মানবাধিকার সম্বনয় পরিষদে নেপথ্যে এখন রয়েছেন আদিলুর রহমান খান। যার প্রতিষ্ঠান ‘অধিকার’। কয়েকদিন আগেই ইসি এর নিবন্ধন বাতিল করেছে।
ইসিকে লিখিত দাবি দেওয়ার পাশাপাশি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলও ছিল।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরি ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের বিষয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘কয়েকটি জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। পটুয়াখালী, ময়মনসিংহের ফুলপুর, মানিকগঞ্জের সিংগাইর, পাবনার শাহাজাদপুর ও নরসিংদী জেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে। নির্বাচন কমিশনকে আমরা সতর্ক করলাম এসব ঘটনায় দায়িদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নিতে আমরা কমিশনকে অনুরোধ করেছি। অপরাধীদের চিহ্নিহ করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
তিনি বলেন, ‘সব অভিযোগের বিষয়ে কমিশন জানত না। আমরা তাদের অবহিত করলাম। আলোচনা করে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। জবাবে ইসি আমাদের বৃহত্তম দল হিসেবে আমাদের দায়িত্বের বিষয়টি উল্লেখ করলে আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছি বলে জানিয়েছি। আমরা বলেছি, আমাদের আক্রমণ করলে রক্ষা তো আপনাদেরই করতে হবে। সেক্ষেত্রে কমিশনও তাদের দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছি। নির্বাচন কমিশন এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নির্দেশ দেবেন এবং ব্যবস্থা নেবে বলে জানান।’
‘সারাদেশে যেসব হামলা ও সহিসতা হয়েছে মোটামুটিভাবে তার বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের ওপর হয়েছে। আমাদের দুইজন সদস্য নিহত হয়েছেন। যারা তৃণমুলে নির্বাচনী কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন। বেছে বেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। সে বিষয়টি আমরা কমিশনকে অবহিত করেছি’ বলেন এইচটি ইমাম।
বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঠাঁকুরগাওয়ে হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে গুলশান ও নয়াপল্টন অফিসে মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে যে তুমুল তোলপাড় হয়েছিল, সেটার বহিঃপ্রকাশ ঠাঁকুরগাঁওয়ে হয়েছে। তারা নিজেরা মারামারি করেছে। সেখানে আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। তিনি যে সেখানে যাবেন সেটি পুলিশকে জানাননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে।। সে বিষয়ে আমরা সকলেই তৎপর।’
নোয়াখালীর সেনবাগে যুবলীগকর্মী নিহতের ঘটনাকে ২০১৪ সালের সহিংসতা ও মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার সঙ্গে তুলনা করে তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ‘বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণেই এ সব ঘটনা ঘটেছে। মূল আক্রমণ হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করায় মাহির গাড়িতে হামলা করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসির ব্যর্থতা বলব না। যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। এখন পর্যন্ত ইসি নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করছে।’
সারাবাংলা/জিএস/একে