‘বিএনপির চাদরে থেকে জামায়াত নির্বাচনে অঘটন ঘটাতে পারে’
১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৩৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বৃটিশ হাই কমিশনের রাজনৈতিক শাখার প্রধানসহ দুই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেছেন। বৈঠক শেষে নওফেল জানান, ‘নির্বাচনী পরিবেশের পাশাপাশি বৃটিশ হাই কমিশনের কর্মকর্তারা জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।’
এ সময় নওফেল তাদের বলেছেন, ‘জামায়াতের সশ্রস্ত্র ক্যাডাররা বিএনপিতে আশ্রয় নিয়েছে। বিএনপির চাদরে থেকে তারা অঘটন ঘটাতে পারে।’
বুধবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর চশমা হিলে নওফেলের বাসায় যান বৃটিশ হাই কমিশনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান আবু জাকী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইজাজ আহমেদ। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বেরিয়ে যাবার সময় দুই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নগরীর মেহেদিবাগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় যান। সেখানেও তারা এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে নওফেল সাংবাদিকদের জানান, ‘আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে তারা এসেছিলেন।’
আলাপে জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গ উভয়পক্ষ থেকে ‘নেতিবাচকভাবে’ উঠে এসেছে জানিয়ে নওফেল বলেন, ‘জামায়াত ইসলামী যেহেতু উগ্র একটা দল, তারা যেহেতু উগ্র ধর্মীয় রাজনীতি করে, সেক্ষেত্রে তারা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে কি-না, কোনো সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে কি-না, সেটা জানতে চেয়েছিলেন।’
‘আমি বলেছি- জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তাই বলে তো জামায়াত বাতাসে মিলিয়ে যায়নি। জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা বিএনপিতে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা ধারণা করছি, বিএনপির চাদরে লুকিয়ে থেকে জামায়াত কোনো ঘটাতেও পারে। এটা অস্বাভাবিক কোনো ধারণা নয়।’
নওফেল বলেন, ‘যেহেতু জামায়াত চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় একটা সিট পেয়েছিল, কক্সবাজারে একটা সিট পেয়েছিল, তাদের রাজনৈতিক সংঘাতের পূর্ব যে ইতিহাস এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার যে ইতিহাস, সেটার ক্ষেত্রে তারা কোনো ফ্যাক্টর হতে পারবে কি-না, এটা উনারা বিশেষভাবে জানতে চেয়েছেন।’
‘আমি বলেছি- জামায়াত তো এখন বিএনপিতে মিশে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত মিলে কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে।’
সংখ্যালঘু ভোটারদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গও আলাপে উঠে এসেছে বলে জানান নওফেল।
‘উনার সংখ্যালঘু ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয় জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি- আমাদের দৃষ্টিতে তো সেটা অবশ্যই আমরা করতে পেরেছি। আমাদের দেশে বড় অংশের সংখ্যালঘু ভোট আছে এবং সেটা আমাদের দলের জন্য একটা পজিটিভ ফলাফল বয়ে আনে। আমরা বলেছি যে, বাংলাদেশকে যদি অসাম্প্রদায়িক-প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে নিতে হয় তাহলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। সংখ্যালঘুদের আস্থা আছে আওয়ামী লীগের ওপর’ বলেন নওফেল
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নওফেল জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন জেলায় সংগঠিত সহিংসতার বিষয়েও বৃটিশ হাই কমিশনের কর্মকর্তারা জানতে চেয়েছেন।
‘আমি বলেছি, এগুলো আইন-শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা। নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা সমস্যা হয়। এমনকি পশ্চিমা দেশেও এই ধরনের ঘটনা ঘটে। বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই যেখানে কেউ বলতে পারবে যে, নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শতভাগ ঠিক থাকে। কিছু কিছু সমস্যা অবশ্যই হয়।’ বলেন নওফেল
নওফেলের ভাষ্যমতে, চট্টগ্রামে উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশ থাকার বিষয়টি তিনি বৃটিশ হাই কমিশনের কর্মকর্তাদের নিশ্চিত করেছেন। তারাও সার্বিকভাবে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে নওফেলের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের কারাগারে থাকার বিষয়টি নিয়েও আলোচনায় এসেছে বলে জানান নওফেল।
‘আমি বলেছি, এটা আইনি বিষয়। মন্তব্য করা ঠিক হবে না। উনারাও বলেছেন, যেহেতু এটা আইনি বিষয়, আইন নিজস্ব গতিতে চললে এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো বক্তব্য নেই।’
বৃটিশ হাই কমিশনের দুই কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে আলাপের বিষয় বৃহস্পতিবার নওফেল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসা থেকে বেরিয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি বৃটিশ হাই কমিশনের কর্মকর্তারা। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে টেলিফোনে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই