ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৮ সদস্য
১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২১
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পাহারায় থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬ জন সদস্য। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য তিন জন, অঙ্গীভূত আনসার সদস্য ১২ জন ও একজন করে থাকবেন গ্রাম পুলিশ। অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে বাড়তি দুই পুলিশ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবেন মোট ১৮ জন।
এছাড়া, মেট্রোপলিটনের বাইরে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন পুলিশ সদস্যসহ ১৪ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে দু’জন পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জন সদস্য রাখা হবে। আর পার্বত্য এলাকা, দুর্গম ও দ্বীপ এলাকায় প্রতিটি ভোটকেন্দ্র দু’জন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পুলিশ সদস্য একজন বাড়িয়ে ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। ইসি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন- ২৪ ডিসেম্বর থেকে মাঠে সশস্ত্র বাহিনী
ইসি সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে, ভোটের দিন ও ভোটের পরের দিন পর্যন্ত মোট চার দিন মাঠে থাকবেন। বেসরকারি প্রশাসনকে সহায়তায় ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সারাদেশে সেনাবাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হবে। তবে উপকূলবর্তী এলাকায় মোতায়েন থাকবেন নৌবাহিনীর সদস্যরা।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জেলা, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট ও সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান করবেন। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তারা সহায়তা কামনা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য সংস্থাকে সহায়তা দেবেন তারা। রিটার্নিং বা প্রিজাইডিং অফিসার না চাইলে তারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোটগণনা কক্ষে যাবেন না। এছাড়াও ভোটের দিনে ভোটারদের যাতায়াতের পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভোটারদের যাতায়াতের পথ নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলোকে নিবিড় টহলের নির্দেশনা দেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও ভোটকেন্দ্রে যেন বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক রাখা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে প্রয়োজনে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করা হতে পারে। এছাড়া, ভোটকেন্দ্রে ফল প্রকাশের পর তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিরাপদে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেওয়া হবে।
ইসি জানিয়েছে, দুর্গম এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনি মালামাল ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের যাতায়াতে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হবে। ভোটের দিন যান চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
এর আগে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনেও একইভাবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করেছিল ইসি। যদিও ২০০৮ সালে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে সেনা মোতায়েন করা হয়। ওই সময়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও)-তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এদিকে, আসন্ন সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে সকাল সাড়ে ১০টায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। এতে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠকে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অসবে।
সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। এছাড়া র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আচরণবিধি প্রতিপালনে দেড় হাজারের বেশি জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। সবমিলিয়ে ভোটের মাঠের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছয় লাখের বেশি সদস্য।
ইসি সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আদলে এবারে নির্বাচনের ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে সেনা ও অন্যান্য বাহিনী মোতায়েনের দিন সংখ্যার ক্ষেত্রে কিছুটা তারতম্য আনা হচ্ছে। এবার ভোট বর্জনে রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকায় সহিংসতার পরিমাণ কম হবে— এমনটি ধরে নিয়েই নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা আগামী ২৪ ডিসেম্বর মাঠে নামবেন। ভোটের পর আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা নির্বাচনি এলাকায় থাকবেন। বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান সদস্যরা স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিম হিসেবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি মাঠে থাকবেন। আর আগামী ২৯ ডিসেম্বর ৩০০ সংসদীয় আসনে সবমিলিয়ে ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামবেন। তারা ভোটের পরও দুই দিনসহ সবমিলিয়ে চার দিন মাঠে থাকবেন। এ সময় নির্বাচনি অপরাধে সংক্ষিপ্ত বিচার করবেন তারা।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র সেনামোতায়েন