বাবার বিরুদ্ধে শিশুর অভিযোগ যেভাবে পাল্টে দিল ভারতের এক শহরতলী
১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:১৪
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি না রাখায় বাবার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেছে ভারতের সাত বছর বয়সী এক বালিকা। ওই বালিকার নাম হানিফা জারা। খবর বিবিসির।
জারা পুলিশকে এক চিঠিতে বলেছে, তারা বাবা তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এজন্য তাদের উচিত তার বাবাকে গ্রেফতার করা।
জারা আরও জানায়, বাইরে মলত্যাগ করতে লজ্জিত বোধ করে সে।
ইউনিসেফ অনুসারে বহু ভারতীয় শৌচাগার সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রায় ৫০ কোটি ভারতীয় জনগণ খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করে থাকে। এমনকি যেসব জায়গায় শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে সেসব জায়গায়ও অনেকে খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করে থাকে।
জারা তারা বাবা-মা’র সঙ্গে তামিল নাডু অঙ্গরাজ্যের আম্বুর শহরে বাস করে।তার বাড়িতে কোন শৌচাগার নেই।
বিবিসিকে জারা বলেছে, তাদের প্রতিবেশী কিছু বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে। সেসব দেখে সে তার বাবাকে একটি শৌচাগার নির্মাণ করে দিতে বলে। সে তখন নার্সারিতে পড়তো।
সে বলে, আমি বাইরে যেতে লজ্জা পেতাম। মানুষ আমার দিকে যেভাবে তাকাতো তা আমার ভাল লাগতো না। এক সময় স্কুলে খোলা আকাশে মলত্যাগ করার সমস্যা সম্পর্কে জানার পর শৌচাগার নির্মাণে সে আরও উদ্বুদ্ধ হয়।
নার্সারি থেকে প্রতিবার ক্লাসে প্রথম হয়েছি
পুলিশকে পাঠানো চিঠিতে জারা লিখেছে, তারা বাবা তাকে প্রতিশ্রুতি করেছিল যে, সে যদি তার ক্লাসে প্রথম হয় তাহলে একটি শৌচাগার নির্মাণ করে দেবেন।
সে লিখেছে, আমি নার্সারি থেকে প্রতিবার ক্লাসে প্রথম হয়েছি। আমি এখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি। কিন্তু বাবা এখনও বলে নির্মাণ করে দেবে। এটা এক ধরনের প্রতারণা। দয়া করে তাকে গ্রেফতার করুন। আর যদি গ্রেফতার না করা যায় তাহলে তারা যেন তার বাবাকে বাধ্য করে একটি স্বাক্ষর করা চিঠিতে তাকে জানাতে, কবে শৌচাগারটি নির্মিত হবে।
এদিকে জারার বাবা এহসানুল্লাহ বিবিসিকে বলেন, তিনি আদতে শৌচাগারটি নির্মাণ শুরু করেছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে কাজ শেষ করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি বেকার।
তিনি বলেন, আমি হানিফাকে বলেছি আমায় আরও কিছুদিন সময় দিতে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি না রাখতে পারায় সে আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।
কিন্তু হানিফার সহানুভূতির দিন ফুরিয়ে গেছে। সে বলে, আমি আর কতদিন তার কাছে একই জিনিস চাইবো? তিনি প্রত্যেকবার আমায় একই অজুহাত দিয়েছেন- পর্যাপ্ত অর্থ নেই। তাই আমি পুলিশের কাছে গেছি।
পুলিশে গমন
জারা সোমবার তার স্কুলের নিকটে অবস্থিত পুলিশ স্টেশনে যায়। সঙ্গে যান তার মা। স্থানীয় পুলিশ কর্মী এ ভালামারথি বলেন, জারা একটি ব্যাগ ভর্তি ট্রফি ও মেধা সার্টিফিকেট নিয়ে হাজির হয়েছিল। সেগুলো আমার টেবিলে রেখেছে। এরপর বলেছে, আপনি আমায় একটি শৌচাগার দিতে পারবেন?
ভালামারথি বলেন, তিনি এহসানুল্লাহকে তলব করেছিলেন। এহসানুল্লাহ তড়িঘড়ি করে থানায় যান। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, তার স্ত্রী ও মেয়ে বিপদে পড়েছে। কিন্তু থানায় পৌঁছে মূল ঘটনা জানার পর বেশ হতভম্বই হয়ে ওঠেছিলেন।
জারার লেখা চিঠিটি পড়ার পর এহসানুল্লাহ জানান, জারা তাকে দেখে দেখে এভাবে লেখা শিখেছে। এহসানুল্লাহ প্রায়ই গ্রামবাসীদের পক্ষে সরকারি কাগজপত্র পূরণ করে দেন এবং স্থানীয় কর্মকর্তা ও আইনপ্রণেতাদের কাছে চিঠি লিখেন।
তিনি বলেন, আমি কখনো ভাবিনি এটা এভাবে আমার বিরুদ্ধে যাবে।
৫০০ শৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা
হানিফার চেষ্টা পুলিশকর্মীদের মন জয় করে নিয়েছে। তারা তাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভালামারথি বলেন, তার অভিযোগটি খুবই আন্তরিক ছিল। আমরা তাই সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করেছি।
ভালামারথি স্থানীয় জেলা কর্মকর্তাদের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করেছে। তারা এখন জারার এলাকায় ৫০০ শৌচাগার নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে।
নগর কমিশনার এস পার্থসারথি বলেন, আমরা তার অভিযোগ দেখে খুবই খুশি হয়েছিলাম। আমরা স্কুলে শিশুদেরকে তাদের বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের কথা জানাতে শেখাই।
পার্থসারথি আরও বলেন, তিনি জারাকে ভারতের ‘সোয়াচ ভারত আভিয়া’ প্রচারণার প্রতীক করে তুলতে চান।
সারাবাংলা/ আরএ