কলড্রপে চার্জ কাটার ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা
১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৩১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: যখন তখন কলচার্জ বাড়ানো ও কলড্রপে টাকা কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের অধিকার সুরক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে রুল জারি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশসহ এ রুল জারি করেন।
পাশাপাশি অনাবশ্যক ক্ষুদে বার্তা পাঠানো কেন বন্ধ করা হবে না রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে এবং মোবাইলের বর্তমান কলরেট পর্যালোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, সেক্রেটারি, মোবাইল অপারেটর গ্রামীণ ফোন লিমিটেড, এয়ারটেল লিমিটেড, রবি আজিয়াটা লিমিটেড, বাংলালিংক লিমিটেড ও টেলিটক কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করেন আইন সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোটার্স ফোরামের সদস্য এম. বদিউজ্জামান, মেহেদী হাসান ডালিম, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমদ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাশিদুল হাসান।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম।
পরে আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, ‘এমনিতেই পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশে মোবাইল কলচার্জ বেশি। এরপরে গ্রাহকের মতামত না নিয়ে চলতি বছরের আগস্ট মাসে অতিরিক্ত কলরেট চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা গ্রাহকদের অধিকারের পরিপন্থি ও বেআইনি।’
ইশরাত হাসান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ১৩ মাসে ২২২ কোটি বার কলড্রপ করেছে মোবাইল অপারেটরগুলো।’
এর মধ্যে দেশে গ্রাহক সংখ্যায় শীর্ষে থাকা গ্রামীণফোন কলড্রপের ক্ষেত্রেও শীর্ষে অবস্থান করছে। গত ১৩ মাসে এ অপারেটরের কল ড্রপ হয়েছে ১০৩ কোটি ৪৩ লাখ বার। একই সময়ে গ্রাহক সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রবির কলড্রপ হয়েছে ৭৬ কোটি ১৮ লাখ বার। সক্রিয়তার বিবেচনায় গ্রামীণফোনের ৭ কোটি ৭ লাখ এবং রবি ও এয়ারটেলের রয়েছে ৪ কোটি ৬১ লাখ সংযোগ। গত ১৩ মাসে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর মোট কলড্রপ হয়েছে ২২২ কোটি বার।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩ মাসে দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটরের কলড্রপের পরিসংখ্যান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রামীণফোন ও রবির পর সবচেয়ে বেশি কলড্রপ হয়েছে বাংলালিংকের ৩৬ কোটি ৫৪ লাখ আর টেলিটকের আনুমানিক ৬ কোটি বার। বাংলালিংকের সংযোগ রয়েছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ এবং সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটকের রয়েছে ৩৮ লাখ ৭৩ হাজার সংযোগ।
২০১৪ সালে কয়েকটি অপারেটর কলড্রপের বিপরীতে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু করে। এ নিয়ে তারা প্রচারও চালায়। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই ঘোষণা ছাড়া ক্ষতিপূরণ বন্ধ করে দেয় অপারেটরগুলো। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এমনকি সরকারের একাধিক মন্ত্রীও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে অপারেটরগুলোর কাছ থেকে কলড্রপের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে কলড্রপের জন্য গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা অপারেটরগুলোর। কিন্তু অপারেটরদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে রিট পিটিশনারদের পক্ষ থেকে গত ১০ ডিসেম্বর বিবাদীদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
সারাবাংলা/এজেডকে/একে