প্রকৃত সংখ্যা জানা গেলেই হিজড়াদের মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে
১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ২০:২৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জাতীয় বাজেটে যথাযথ বরাদ্দসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হিজড়াদের জনশুমারিতে গণনার দাবি জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে—সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে হিজড়াদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা চকরিতে কোটা সংরক্ষণ, পারিবারিক বা উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত সম্পদের অধিকার ও সন্তান দত্তক নেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাস্তবভিত্তিক কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
এ কারণে আগামী ২০২১ সালে যে জনশুমারি (আদম শুমারি) হতে যাচ্ছে—সেখানে হিজড়াদের গণনা করা প্রয়োজন। এতে করে নীতি নির্ধারকরা সঠিক নীতি প্রণয়ন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে অবস্থিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সম্মেলন কক্ষে ‘আদমশুমারিতে হিজড়া জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্তিকরণ’ শীর্ষক এক পরামর্শক সভায় এ দাবি জানানো হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘হিজড়া জনগোঠী দেশের সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠী। কিন্তু তাদের মধ্যেও সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে, সেটি অনেকেই জানেন না। সরকার হিজড়াদের প্রতি সংবেদনশীল। তাই হিজড়াদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। হিজড়াদের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘হিজড়াদের কাজে ব্যবহার করতে হবে নিজেদের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে এবং দেশের স্বার্থে। তারা জনশুমারিতে অন্তর্ভুক্ত হলে তাদের সঠিক হিসাব জানা সম্ভব হবে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। বক্তব্য রাখেন বন্ধু স্যোসাল ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমেদ, অনন্যা বনিক, তানিয়া ইয়াসমিন চৈতিসহ অন্যরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন বলেন, ‘২০২১ সালে অনুষ্ঠেয় জনশুমারিতে হিজড়াদের অর্ন্তভুক্ত করা যাবে। আর সেজন্য এই জনগোষ্ঠীর সদস্যদেরও নিজেদের তথ্য জানাতে হবে এবং এজন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। তিনি জানান জনশুমারিতে হিজড়াদের গণনা করা হবে। এ ছাড়া আগামী বছর হতে যাওয়া কৃষি শুমারিতেও হিজড়া জনগোষ্ঠীকে যুক্ত করা হয়েছে।’
বাংলাদেশ পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল হাবিবুর রহমান বলেন, ‘হিজড়াদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হিজড়াদের জন্য একটি বিশেষ জরিপ পরিচালনা করা প্রয়োজন। হিজড়াদের উন্নয়নে সরকার যেমন এগিয়ে এসেছে তেমনি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীও বদলানো প্রয়োজন।’
তিনি বেসরকারি পর্যায়ে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কেউ যেন নিজেকে গুটিয়ে না রাখেন, নিজেদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর উপমহাপরিচালক গোকুল কৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘হিজড়াদের উন্নয়নে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আর এ কাজ শুধু সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়, বেসরকারি পর্যায়ে অংশগ্রহণ জরুরি।’
হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা বন্ধু স্যোসাল ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির চেয়ারপারসন আনিসুল ইসলাম হিরোর সভাপতিত্বে পরামর্শক সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএসএআইডির পলিটিক্যাল প্রসেস টিম লিডার স্লাভিকা রাডোসিভিক এবং অষ্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারি কেভিন গো।
সারাবাংলা/জেএ/এমআই