Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা-১২ আসন: প্রচারণায় কামাল, নীরবেই নীরব


১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৩৪

॥ এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট॥

ঢাকা: নির্বাচনী প্রচারণার চতুর্থ দিনে প্রথমবারের মতো স্বশরীরে মাঠে নেমেছিলেন ঢাকা-১২ আসনের নৌকার প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তবে এর আগে থেকেই আসনটিতে মাঠ গরম ছিল আওয়ামী লীগের। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠতে থাকে নির্বাচনী ক্যাম্প। সেগুলো এখন বর্ণিল সাজসজ্জায় পরিপূর্ণ।

বর্তমানে নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। তবে এ আসনের কোথাও বিএনপির কোনো পোস্টার দেখা যায়নি। মাঠে নেই বিএনপির কোনো প্রচার-প্রচারণাও। আসনটির বিএনপির প্রার্থী সাইফুল আলম নীরবের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোটাররা বলছেন, নীরব এখনও নীরবেই।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খাঁন মুঠোফোনে সারাবাংলাকে কামাল বলেন, ‘আমার প্রচার-প্রচারণায় তেমন কোনো ভিন্নতা নেই। প্রতিবারের মতো যা হয় তাই হচ্ছে।’

ব্যতিক্রম বা নতুন কোন প্রতিশ্রতি আছে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রেগুলার যা হয় তাই হবে। নতুন কোন প্রতিশ্রতি নেই।’

ঢাকা-১২ আসনটি তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, শেরে-ই-বাংলা নগর ও হাতিরঝিল এলাকা নিয়ে গঠিত। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৫ ও ৩৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে এই আসন। আসটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭১৮ জন। এতে নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ধানের শীষের প্রার্থী সাইফুল আলম নীরব, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ শওকত আলী হাওলাদার (হাতপাখা), বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মো. জোনায়েদ আবদুর রহিম সাকি ( কোদাল), জাতীয় পার্টির মো. নাসিরউদ্দিন সরকার (লাঙ্গল) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাহীন খান (আম)।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা গেছে, তেজগাঁও এলাকার প্রতিটি অলি-গলি ছেয়ে গেছে নৌকার পোস্টারে। বৃহস্পতিবারও কোনো কোনো রাস্তায় পোস্টার টানাতে দেখা গেছে। আর তেজগাঁও এলাকার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে রয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা টিম। প্রচারণার অস্থায়ী স্থানগুলোও আলোকসজ্জায় সেজেছে। তবে এই এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার কোথাও চোখে পড়েনি। শুধুমাত্র বাংলামোটরে জোনায়েদ সাকির কোদাল মার্কার কয়েকটি পোস্টার দেখা গেছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার প্রথমদিনের মতো স্বশরীরে মাঠে প্রচারণা চালিয়েছেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত তিনি প্রচারণায় অংশ নেন। বসুন্ধরা সিটি, ফার্মগেট, মণিপুরীপাড়া, বিজয়সরণী, তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও রেলওয়ে কলোনি, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন ও তেজতুড়ি বাজার এলাকা ঘুরে বিভিন্ন ভোটারের কাছে ভোট চেয়েছেন তিনি। দোকানে দোকানে, ভোটারদের বাসায়, কখনওবা রেলওয়ে কলোনির বৃদ্ধের সঙ্গেও তাকে হাত মেলাতে দেখা গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেছেন ভোটার কিংবা কখনও তাকেও বুক মেলাতেও দেখা গেছে।

প্রচারণার মাঠে আছেন জোনায়েদ সাকিও (কোদাল)। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির এই প্রার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ১১ তারিখ থেকেই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় নেমেছি। বিভিন্ন এলাকায় ব্যানার ফেস্টুন বিলি করছি। মিটিং-মিছিল হচ্ছে। কিন্তু পোস্টার টানানো হলেও রাতে মোটরসাইকেলে এসে কারা যেন তা নামিয়ে ফেলছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে আমরা অভিযোগ দিয়েছি। বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরের পর পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় গণসংযোগে অংশ নেন জোনায়েদ সাকি। তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা এসময় তাদের বাঁধা দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে তিনি আবারও এ এলাকায় প্রচারণায় অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

তবে মাঠে নেই বিএনপির প্রার্থী সাইফুল আলম নীরব। আসনটিতে তার পক্ষে কোনো প্রচারণা দেখা যায়নি। কোথাও নেই ধানের শীষের পোস্টার। তবে এই এলাকার একাধিক ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে বাসায় লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সাইফুল আলম নীরব, নীরবেই রয়েছেন। তবে  বিএনপির লোকেরা বোরখা পরে বাসায় বাসায় গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। দশ বাসায় গেলে দুই বাসাতেও দরজা খোলা হচ্ছে না।

এদিকে, তেজগাঁও এলাকায় বিএনপি নেতাদেরও মাঠে কোনো হদিস নেই। খোদ প্রার্থীকেই খোঁজে পাওয়া যায়নি। বিএনপির প্রেস উইং থেকে পাওয়া এই আসনের প্রার্থী নীরবের দুটি ফোন নম্বরই (০১৭১১-৫৩..১৩, +৪৪৭৪৪০১..৭৬৪) বন্ধ পাওয়া গেছে।

নাখালপাড়ার বাসিন্দা শ্যামল চন্দ্র সাহা বলেন, ‘নৌকার পোস্টারে এলাকা ছেয়ে গেছে। তবে বিএনপির কোনো পোস্টার নেই। নৌকার পক্ষে বাসায় বাসায় ভোট চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিএনপির কাউকে আসতে দেখিনি।’

মহাখালী মেট্রোপলিটন এলাকার বাসিন্দা ওয়াসিম সাজ্জাদ বলেন, ‘এ এলাকায় বিএনপির কোনো প্রচারণা নেই। পুরো তেজগাঁও আওয়ামী লীগের পোস্টারে সয়লাব। এখানকার আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সবার কাছেই শ্রদ্ধাভাজন ও প্রিয়। মন্ত্রী হয়ে খৎনার অনুষ্ঠানে এসেও মানুষকে চমকে দিতে দেখা গেছে তাকে।’

আওয়ামী লীগের প্রচারণার বিষয় জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হক জিল্লু সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসনটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ইজম রয়েছে। তিনি তেজগাঁওয়ের মানুষ। এখানেই তার জন্ম, এখানেই বেড়ে ওঠা। তেজগাঁওবাসীর সুখে-দুখে তিনি সব সময় পাশে থাকেন। প্রতিটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেটা বড়লোক কিংবা গরিবের হোক। যে কেউ দাওয়াত দিলে তিনি তা রক্ষা করেন।’ জানা গেছে, জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে জনসম্পৃক্ততাই কামালের সবচেয়ে বড় পুঁজি।

কামালের নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান সমন্বয়ক প্রিন্সিপাল আবদুর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রার্থী নিজে বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। এছাড়া ৭টি ওয়ার্ডে নির্বচানী প্রচারণা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা সাধারণ ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরছেন। এলাকার বিভিন্ন স্থানে উন্নয়নমূলক গান পরিবেশিত হচ্ছে। মসজিদের ইমাম, আইনজীবী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে হচ্ছে মতবিনিয়ম সভাও।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিরোধী প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না। তারপরেও যদি কোনো সুনির্দিষ্ট  অভিযোগ পাওয়া যায়, ওইসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/একে

একাদশ নির্বাচন জাতীয়-নির্বাচন ঢাকা-১২ আসন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর