Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতীয় পার্টির ইশতেহারে ৮ প্রদেশের অঙ্গীকার


১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:৫৩

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করে দেশের আট বিভাগকে আটটি প্রদেশে রূপ দিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রচলিত শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। দেশের আটটি বিভাগকে আটটি প্রদেশে উন্নীত করা হবে। আটটি প্রদেশের নাম হবে— উত্তরবঙ্গ প্রদেশ, বরেন্দ্র প্রদেশ, জাহাঙ্গীরনগর প্রদেশ, জালালাবাদ প্রদেশ, জাহানাবাদ প্রদেশ, চন্দ্রদীপ প্রদেশ, ময়নামতি প্রদেশ ও চট্টলা প্রদেশ।

বিজ্ঞাপন

ইশতেহারে বলা হয়েছে, সরকার কাঠামো হবে দুই স্তর বিশিষ্ট। কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হবে ফেডারেল সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারে থাকবে ৩০০ আসন বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ। আরেকটি স্তর হবে প্রাদেশিক সরকার। প্রতি উপজেলা কিংবা থানাকে প্রাদেশিক সরকারের একেকটি আসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে প্রাদেশিক ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন করা হবে। বিকেন্দ্রীকরণের মধ্যে ঢাকা শহর থেকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ সদর দফতর প্রাদেশিক রাজধানীতে স্থানান্তর করা হবে। প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের ব্যাপারে এরই মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার লেখা একটি বইয়ে বিস্তারিত ধারণা দিয়েছেন।

শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টির বনানীর কার্যালয়ে জাপা চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার মোট ১৮ দফা সম্বলিত নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন। জাতীয় পার্টি বলছে, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, সুষ্ঠু গণতন্ত্রের বিকাশ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করাই জাতীয় পার্টির অঙ্গীকার।

বিজ্ঞাপন

রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমাদের পার্টির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি ছিল ১৮ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়ন। জাতীয় পার্টির শাসনামলের সেই উন্নয়নের চিহ্ন দেশ এখনও ধারণ করে আছে। যারা ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশ পরিচালনা দেখেছেন তারা এখনও স্মরণ করেন সেই স্বর্ণোজ্জ্বল দিনের কথা। আগামী দিনের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং নতুন প্রজন্মের জন্য আগামী অর্ধশতাব্দী সময়কে সামনে রেখে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাতীয় পার্টি নতুনভাবে ১৮ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করছে।

ইশতেহারের বাকি ১৭ দফা কর্মসূচি হলো-

নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার: নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান করা হবে, নির্বাচন কমিশনের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেওয়া হবে, সন্ত্রাস, অস্ত্র ও কালো টাকার প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এটা বাস্তবায়ন করতে হয়তো সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সময় লাগবে।

পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন: উপজেলা আদালত ও পারিবারিক আদালতসহ পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা চালু করা হবে, স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করে এবং নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে উপজেলার ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: জাতীয় পার্টি সুযোগ পেলে এক বছর সময়ের মধ্যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। পাঁচ বছরের মধ্যে মামলার জট শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা দায়ের করার প্রবণতা বন্ধ করা হবে। প্রাদেশিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে প্রত্যেক প্রাদেশিক রাজধানীতে হাইকোর্ট বেঞ্চ বসানো হবে।

ধর্মীয় মূল্যবোধ: ধর্মীয় মূল্যবোধকে সবার ঊর্ধ্বে জায়গা দেওয়া হবে। মসজিদ, মাদরাসা, মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় উপসনালয়ের বিদ্যুৎ ও পানির বিল মওকুফ করে দেওয়া হবে। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যেতে পারলে প্রথমেই এ ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়া হবে এবং এক বছরের মধ্যে এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে।

কৃষকের কল্যাণ: কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে সার, ডিজেল, কীটনাশক সরবরাহ করা হবে। কৃষি উপকরণের কর-শুল্ক মওকুফ করা হবে। কৃষকদের বিরুদ্ধে কোনো সার্টিফিকেট মামলা হবে না। সহজ শর্তে কৃষি ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

সন্ত্রাস দমনে কঠোর ব্যবস্থা: সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দূর্নীতি দমনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করা হবে। সন্ত্রাসসহ অপরাপর অপরাধ দমন করা কঠিন কোনো কাজ নয়, এ ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছাই বড় কথা। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলে তিন মাসের মধ্যে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি সমূলে নির্মূল করা হবে। হত্যা-খুন-গুম-ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করা হবে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ: গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি স্থিতিশীল রাখা হবে, সারাদেশে পর্যায়ক্রমে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে এবং প্রত্যেক উপজেলায় কৃষিভিত্তিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হবে। উত্তরবঙ্গে শিল্পায়নের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে মঙ্গা প্রতিরোধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ সমস্যা হচ্ছে মঙ্গার আগ্রাসন। এই অঞ্চলের মানুষ বছরের তিন মাস কাজের সুযোগ পায় বাকি নয় মাস বেকার থাকে। ফলে সেখানে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। স্থানীয়ভাবে সেটাকেই বলে মঙ্গা। এই মঙ্গা দূর করতে মানুষের কাজের ব্যবস্থা করা হবে। দেশের অনগ্রসর অঞ্চলে শিল্প স্থাপনে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না: একমাত্র জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় শিল্প প্রতিষ্ঠা ছাড়া কৃষি জমি বা ফসলি জমি নষ্ট করে কোনো স্থাপনা কিংবা আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা আইন করে বন্ধ করা হবে।

খাদ্য নিরাপত্তা: খাদ্যে ভেজাল কিংবা খাদ্যে বিষাক্ত পদার্থ মেশানোর বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হবে।

শিক্ষা পদ্ধতির সংশোধণ: শিক্ষা পদ্ধতি সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিউশন নির্ভরতা কমানো হবে এবং কোচিং ব্যবসা বন্ধ করা হবে। সুলভ মূল্যে শিক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হবে। নিবন্ধনকৃত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন সরকারি শিক্ষকদের সমতুল্য করা হবে। এই কর্মসূচিও এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।

দেশে একটি স্বতন্ত্র ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। কওমি মাদরাসার সনদকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। স্মাতক পর্যন্ত নারী শিক্ষা অবৈতনিক করা হবে। দেশে সুষমভাবে শিক্ষা বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে রংপুরে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় এবং রংপুরে শিক্ষাবোর্ড স্থাপন করা হবে।

স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ: ইউনিয়নভিত্তিক সেবা খাত উন্নত করা হবে। সবার জন্য স্বাস্থ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। প্রতি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারের দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা হবে।

শান্তি ও সহাবস্থানের রাজনীতি প্রবর্তন: হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক এবং জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হবে। শান্তি ও সহাবস্থানের রাজনীতি প্রবর্তনের মাধ্যমে সত্যিকার গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটানো হবে।

সড়ক নিরাপত্তা: সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সব রাস্তা-ঘাট সংস্কার করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকে কর্মপক্ষে ৫০ ভাগ প্রশস্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেই সাথে সড়ক বিভাজন (ডিভাইডার) নির্মাণ করা হবে।

গুচ্ছগ্রাম পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা: গুচ্ছগ্রাম, পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। এর আগে জাতীয় পার্টির শাসনামলে যেসব গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল সেগুলো আদর্শ গ্রামে গুচ্ছগ্রামে উন্নীত করা হবে। গত ২৫ বছরে অভাবের তাড়নায় কিংবা নদী ভাঙনে লাখো লাখো মানুষ ছিন্নমূল হয়ে পড়েছে। ফলে ঢাকা মহরে বাড়ছে ভাসমান মানুষের ভিড়। তাদের গুচ্ছগ্রামে একটা ঠিকানা দেওয়া হবে।

পল্লী রেশনিং চালু: পল্লী অঞ্চলের মানুষের ন্যূনতম অন্নের সংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পল্লী অঞ্চলে পল্লী রেশনিং চালু করা হবে। এক বছরের মধ্যে পল্লী রেশনিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রামের মানুষের কাছে রেশনিং ব্যবস্থায় চাল-ডাল-তেল-চিনি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে গ্রামের মানুষ নিয়মিতভাবে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে।

শিল্প ও অর্থনীতির অগ্রগতি সাধন: দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশের অঞ্চলে অঞ্চলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস করার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিল্প ঋণ সহজলভ্য এবং নতুন শিল্প স্থাপন করা হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের দেশে অর্থ প্রেরণকে উৎসাহিত করা হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হবে এবং পুঁজি বাজারে আস্থা ফিরিয়ে এনে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ সম্প্রসারিত করার অনুকূলে পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা: সাধারণ নির্বাচন বাদে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ৩০টি আসন সংরক্ষিত করা হবে। সে ক্ষেত্রে সংসদের মোট আসন সংখ্যা হবে ৩৮০। এর জন্য সংবিধানে সংশোধনী আনা হবে। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যার হার অনুসারে তাদের চাকরি ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে।

ইশতেহার ঘোষণার সময়ে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান, এস.এম. ফয়সল চিশতী, ভাইস চেয়ারম্যান- মো. আরিফুর রহমান খান, আলমগীর সিকদার লোটন, যুগ্ম মহাসচিব- মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, শেখ আলমগীর হোসেনসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/জেএ/এটি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বিপদসীমার ওপরে পানি, ৪৪ জলকপাট খোলা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৬

তৃতীয় দিনের খেলাও পরিত্যক্ত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৪

সিটিকে সরিয়ে শীর্ষে লিভারপুল
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

পদ্মায় কমেছে পানি, থামছে না ভাঙন
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:১৯

সম্পর্কিত খবর