হামলা পরিকল্পিত, লক্ষ্য ভোট থেকে সরিয়ে দেওয়া: ঐক্যফ্রন্ট
১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:১৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ড. কামাল হোসেন ও আ স ম আব্দুর রবের গাড়ি বহরে হামলা এবং কর্মী সমর্থকদের পিটিয়ে আহত করার ঘটনাকে পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে দেখছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের নেতাদের অভিযোগ, ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই এ হামলা করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর পল্টনে প্রিতম-জামান টাওয়ারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসব কথা বলেন ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু ও ড. রেজা কিবরিয়া।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে পায়ে হেঁটে বের হবার সময় দেখলাম একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এখন আপনারা রব সাহেবের মুখে শুনবেন, আমি বেরিয়ে যাওয়ার পর কী ঘটেছে।’
ড. কামাল হোসেন এই স্বাগত বক্তব্যের পর আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘এটা খুব দুঃখজনক, মর্মান্তিক! আমার ৬০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আমি অনেক হামলা মোকাবেলা করেছি। কিন্তু, এই ধরনের হামলা— যেখানে ড. কামাল হোসেনসহ আমাদের ওপর হামলা করার দুঃসাহস দেখাল ওরা, এটা কল্পনার বাইরে।’
তিনি বলেন, ‘হামলা এই কারণেই যে, আমরা যেন ৩০ তারিখের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই। কিন্তু, ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, কাদের সিদ্দিকী ভয় পাওয়ার লোক না। আমরা ১৯৭১ সালে ৯ মাস যুদ্ধের মাঠে ছিলাম। সুতরাং আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে ভোটের মাঠ থেকে তাড়ানো যাবে না।’
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘আমাদের নেতা ড. কামাল হোসেন, বিএনপির ঢাকা মহানগরের নেতা আব্দুস সালাম, রেজা কিবরিয়া, আমাদের প্রার্থী ব্যারিস্টার বাদল, কায়সার, আফ্রিদসহ আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আমাদের নেতারা কথা বললেন। কথা শেষ করে আমরা যখন বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের প্রথম গেটের পর মধ্যখানের গেটে এসে উপস্থিত হয়েছি, তখন তারা ব্ল্যাংক ফায়ার করেছে ভয় দেখানোর জন্য। এরপর ইট-পাটকেল, লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে হামলা করেছে। আমার ড্রাইভার যদি সাহস করে গাড়ি না চালাত, তাহলে আমার কী হতো, সেটা বলতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করতে চাই। আমরা আজ শহীদ বুদ্ধিজীবীর মাজারে যাব, ওরা (সরকার) তা জানত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফুল দিয়ে চলে আসার পর সব পুলিশ তুলে নেওয়া হলো। আমাদের ওপর যখন হামলা হয়, ভেতরে তখন কোনো পুলিশ ছিল না— এটা পরিকল্পিত।
রব বলেন, ‘আমাদের কর্মীদের এখন আমরা প্রতিরোধের নির্দেশ দিচ্ছি না। আমাদের নেতার নির্দেশ- শান্ত থাকতে হবে, সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। আমরা ৩০ তারিখে জনগণকে সাথে নিয়ে ব্যালট বিপ্লব ঘটাতে চাই। আমরা ব্যালটে যুদ্ধ করতে চাই, ব্যালটে লড়াই করতে চাই। স্বৈরশাসনকে বাংলাদেশ থেকে বিদায় করতে চাই।’
‘এ লড়াই জনগণের অধিকার, কর্তৃত্ব, সাংবিধানিক মালিকানা প্রতিষ্ঠার লড়াই। এই লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। আমরা মরব, সরব না’— বলেন আ স ম আব্দুর রব।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এটা ভাবাই যায় না, আজ সকালে এটা ঘটেছে। ড. কামাল হোসেন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবীই শুধু নন, রাজনীতিবিদ হিসেবে একজন সৎ ও পরিচ্ছন্ন মানুষ। যিনি আপাদমস্তক গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বাস করেন— তার ওপর হামলা হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশন সরাসরি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘যখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িতে হামলা, মঈন খানের গাড়িতে হামলা, খন্দকার মোশাররফ হোসেনের গাড়িতে হামলা, সারাদেশে প্রার্থীদের গ্রেফতারের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটছে, তখন নির্বাচন কমিশন বলছে, ‘খুঁজে দেখতে হবে, আপনারাও খুঁজে দেখেন, এরমধ্যে ৫ জানুয়ারির কোনো ঘটনা আছে কী না?
মান্না বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনি প্রচারণায় প্রোটোকল নিয়ে যেতে পারেন না। আমাদের পরিষ্কার দাবি প্রধানমন্ত্রীর সমস্ত প্রোটোকল প্রত্যাহার করা হোক, সমস্ত মন্ত্রীর প্রোটোকল প্রত্যাহার করা হোক, গ্রেফতার বন্ধ করা হোক। আর তা যদি না হয়, যদি মনে করেন, এ রকম করে নির্বাচন পার হয়ে যেতে পারবেন— পারবেন না। আমরা ২৯ তারিখ পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে আছি। কিন্তু ৩০ তারিখে এই কামড় অন্যদিকে চলে যাবে। ৩০ তারিখে জনগণ ব্যালট বিপ্লব করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিদসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/এজেড/জেএএম