রাজধানীর ভোটের মাঠ: ১১ তে কচ্ছপ গতি, ১৭ তে রাজত্ব এরশাদের
১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৪৪
।। মেসবাহ শিমুল,সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: রামপুরা ব্রিজ পার হওয়ার পর প্রগতি সরণী ধরে যতদূর যাবেন মনে হতে থাকবে আপনি সময়ের ব্যবধানে অন্তত দু’তিন মাস পিছিয়ে আছেন। কেননা নির্বাচনী আবহে সারাদেশের চেহারা যেখানে পাল্টে গেছে সেখানে বিশাল এ এলাকার কোথাও তার ছিটে ফোটাও চোখে পড়ে না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরকার দলীয় প্রার্থীদের একচ্ছত্র দখলে যখন প্রচারণার মাঠ ঢাকা-১১ আসনের নৌকার প্রার্থী একেএম রহমত উল্লাহর নির্বাচনী প্রচারণা চলছে কচ্ছপ গতিতে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এমপি সাহেব এখন বিএনপি দৌড়াইতে ব্যস্ত। তাই তো মাঠে সেভাবে দেখা মিলছে না। এখনও লাগানো হয়নি কোনো পোস্টারও।
রাজধানীর উত্তরপূর্ব সীমানা ঢাকা-১১ আসনটি বাড্ডা ও ভাটারা থানা এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১, ২২ ও ২৩ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট প্রার্থী আটজন। তবে এর মধ্যে ভোট যুদ্ধ হবে নৌকার প্রার্থী এ কে এম রহমতউল্লাহ এবং ধানের শীষের প্রার্থী শামীম আরা বেগমের সঙ্গে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) এ আসনের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ও ভোটারদের সঙ্গে বোঝা গেল ভোট উৎসব জমেনি এ আসনে। অনেকের আবার ভোট উৎসব শব্দটিতে আপত্তি রয়েছে। উত্তর বাড্ডা কাঁচা বাজার এলাকার মাংস বিক্রেতার এবারের নির্বাচন নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে এমন মন্তব্য করে বলেন, ‘এলাকায় তো কোনো সাড়া শব্দ নাই,ভোট হবে কি না আল্লাহই জানেন।’
তিনি বলেন, ‘রহমত উল্লাহ স্থানীয় লোক। বাকি সবাই এলাকায় ভাসা। অনেকে রাজনীতিতে আছে কিন্তু রহমত উল্লাহ তাদের গুরু। তবে নির্বাচনতো ভিন্ন জিনিস। ভোটের বেলায় অনেক হিসাব নিকাশ করকে হয়। বুঝতে পারছি না কী হইব।’
তার মতো সংশয় রয়েছে শাহ আলম নামের এক মুদি দোকানিরও। তিনি জানান, গত শুক্রবার এমপি সাহেব বাজার মসজিদে নামাজ পড়ছে। নির্বাচনী আলাপে মধ্যে এইটুকুই টের পাইছি। কোনো মিছিল নাই, রাস্তাঘাটে কোনো পোস্টার নাই।
১১ আসনের প্রায় পুরোটাই এমন নির্জীব। কোথাও নৌকার পোস্টার পর্যন্ত নেই। তবে রহমত উল্লাহর সমর্থনে বিভিন্ন ছোটোখাটো নেতার ছবি সংবলিত ব্যানার ও পোস্টার কিছু কিছু স্থানে চোখে পড়লেও সেগুলো অনেক আগের লাগানো।
বাড্ডা এলাকায় নৌকার প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সন্ধান পেলেও বেলা তিনটার দিকে সেখানে কোনো নেতকর্মীকে পাওয়া যায়নি। তবে আশপাশের কয়েকজন নারী জানান, সন্ধ্যার পরে এখানে অনেকে আসেন। বিশেষ করে যারা এটি বানিয়েছেন তাদের এখানে পাওয়া যায়।
এ আসনে ধানের শীষ নিয়ে রাজনীতি অভিষেক ঘটেছে বিএনপি নেতা এম এ কাইউমের স্ত্রী শামীম আরা বেগমের। একদিকে রাজনীতিতে নতুন অন্যদিকে বিভিন্ন প্রকার প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে। তার সহযোগীদের অভিযোগ পুলিশি হয়রানিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা যেখানে ঘরে থাকতে পারছেন না সেখানে জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাইবেন কীভাবে? তাই তো দলটির অনেক নেতাকর্মী থাকলেও তারা গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
আনন্দনগর এলাকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, তাদের এলাকায় এখনো কোনো মিছিল দেখেননি। এ পরিস্থিতি কোনো ভালো লক্ষণ নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ধানের শীষের কোনো কিছু নেই তার মানে তো দলটির সবাই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে এমন নয়। তার আশঙ্কা ভোটকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তে গোলযোগ হতে পারে। তবে ওই এলাকার একটি স্থানে নৌকা মার্কার সমর্থনে নির্বাচনী অফিস বানাতে বেশ কয়েকজনকে তৎপর দেখা গেছে।
ঢাকা–১৭ আসন রাজধানীর অন্যতম আলোচিত এলাকা। গুলশান-বনানী ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে গঠিত এ আসনে এবার মোট প্রার্থী ১০ জন। এ আসনে মহাজোট এবং জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচন করছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) এবং বিএনপির হয়ে লড়ছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির নেতা আন্দালিব রহমান। এছাড়া জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন সাবেকমন্ত্রী নাজমুল হুদা এবং বর্তমান সাংসদ বিএনএফের সভাপতি আবুল কালাম আজাদও নির্বাচন করছেন।
এদিকে নির্বাচনে অংশ নিলেও এইচ এম এরশাদ বর্তমানে রয়েছেন সিঙ্গাপুরে। কবে আসবেন পার্টির পক্ষ থেকে সে বিষয়ে কোনো বক্তব্য না আসায় এখানে তার নির্বাচনকে রহস্যজনক মনে করছেন ভোটাররা। যদি প্রচারণায় সবার চেয়ে এগিয়ে তিনিই। রাজধানীর শাহজাদপুর নতুন বাজার এলাকায় কথা হয় এক চা দোকানির সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘গত পাঁচবছর এইখানের কে এমপি ছিল তা জানি না। এবার কে হবে তাও জানি না। তবে এরশাদের পোস্টার মোটামুটি রাস্তাঘাট দখলে নিয়ে নিছে। শুনছি সে নাকি আবার দেশেও নাই। বুঝতাছিনা ক্যামেন কী করতেছেন?’
এ আসনে ধানের শীষ কিংবা নৌকার প্রার্থী কে সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই জানিয়ে তিনি বলেন,শুনছি সবাই নাকি বাইরের। তয় লোক তো বিষয় না। ভোট টানব মার্কায়।
গুলশান লেকপাড়ে কথা হয় কেরামত আলী নামের এক বৃদ্ধের সঙ্গে। তিনি এখনো কোনো প্রার্থীর পক্ষেই ভোটের মিছিল দেখেননি জানিয়ে বলেন, ‘ভোটে আগের মতো মজা নাই। এখন শুধু মানুষ মরে। নিজেরা নিজেরা মারামারি কইরা মরে, পুলিশে গুলি কইরা মারে।’
১৭ আসনের কিছু কিছু জায়গায় নৌকার পোস্টার এবং নির্বাচনী ক্যাম্প চোখে পড়লেও ধানের শীষের কোনো পোস্টার চোখে পড়েনি।
সারাবাংলা/এমএস/একে
আওয়ামী লীগ একাদশ নির্বাচন এরশাদ জাতীয়-নির্বাচন নির্বাচনি প্রচারণা