Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজশাহীর ১৯ লাখ ভোটারের দ্বারে ২৫ প্রার্থী


১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৬:১৭

।। সুমন মুহাম্মদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

রাজশাহী: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি ১৬ দিন। দলীয় মনোনয়ন, প্রার্থী বাছাই এবং প্রতীক বরাদ্দও এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। রাজশাহীর ২৫ প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা যেতে শুরু করেছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। দলীয় প্রার্থীদের বিজয় মুকুট পরাতে নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এ সময় ভোটাররা যেমন তাদের দাবির কথা বলছেন, তেমনি প্রার্থীরাও তাদের প্রতিশ্রুতি দিতে ভুল করছেন না। তবে প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে থাকতে চান না এলাকার মানুষ। জনসাধারণ যেমন জঙ্গি বা যুদ্ধাপরাধীদের দাপট চান না। তেমনি চান না সর্বহারা বা চরমপন্থিদের লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড।

বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে রাজশাহীতে কর্মসংস্থানের জন্য শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। বাস্তবে হয়নি। বরং রেশম কারখানা চালু করার নামে নাটক চান না। বাস্তবে চালু করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবি তুলছেন ভোটাররা।

ভোটাররা বলছেন, রাজশাহীতে কৃষিভিত্তিক ইপিজেড গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছিল। ঐ পর্যন্ত। গেল দশ বছরে তা অন্ধকারেই রয়েছে। চরাঞ্চলে মিল্কভিটার মতো কারাখানা গড়ে তুলে এলাকার খামারিদের উৎপাদিত দুধ বিপণনের ব্যবস্থা করার কথা ছিল। কিন্ত এ নিয়ে কোনো প্রার্থী কথা বলছেন না।

ভোটাররা দাবি করছেন এ সব বিষয় প্রার্থীরা নজরে নিয়ে আসুক এবং তা বাস্তবায়নের ব্যাপারে অঙ্গীকার করতে হবে। বরং নতুন নতুন প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন মুখে প্রার্থীরা। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে যুবসমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, শিল্পজোন তৈরিসহ নানান কিছু।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বলছেন, পবা-মোহনপুর ও পুঠিয়া-দূর্গাপুর আসনে খুব শক্তিশালী লড়াই না হলেও বাকি আসনগুলোতে হবে জমজমাট লড়াই। এতে কেবল মার্কা দেখেই ভোট হবে না ব্যক্তি ইমেজও ফ্যাক্টর হবে প্রার্থীদের ক্ষেত্রে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন বিএনপি-আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভোটের ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোও প্রাধান্য পাচ্ছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের প্রার্থী আবু সাঈদ চাঁদ কারাবন্দি থাকায় ভোটের মাঠে অনুপস্থিত। বাকি প্রার্থীদের সামনে ১৯ লাখ ভোটারের দরজা। ভোটের মাঠে মূল লড়াইয়ে রয়েছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। তবে দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া জেলায় নির্বাচনি পরিবেশ এখন পর্যন্ত সুন্দর।

রাজশাহীর-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের বিএনপি প্রার্থী শফিকুল হক মিলন ও ৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের বিএনপি প্রার্থী আবু সাঈদ চাঁদ এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের ডা. মনসুর রহমান ছাড়া ভোটের মাঠে বাকিরা হেভিওয়েট প্রার্থী। রাজশাহী সদর আসনের বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু এবং পবা-মোহনপুরের আওয়ামী লীগ প্রার্থী আয়েন উদ্দিনের গলায় একবার করে বিজয়ের মালা উঠেছিল।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর ছয়টি আসনে এবার মোট ভোটার ১৯ লাখ ৪২ হাজার ৫৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭১০ জন এবং নারী ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫২ জন।

রাজশাহীতে সাত জন্য প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৫ জন প্রার্থী।

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী, বিএনপির সাবেক ও ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, ইসলামী আন্দোলনের আব্দুল মান্নান ও বাসদের আফজাল হোসেন।

বিজ্ঞাপন

গোদাগাড়ীর পিরিজপুর গ্রামের ব্যবসায়ী তৃতীয়বারের মত ভোট দিতে যাওয়া তিতুমীর বলছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকারের আমলে এলাকার উন্নয়ন হয়েছে। তবে প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী ও বিএনপির ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। ফারুক চৌধুরী দলগত দেখে সাধারণ মানুষের কাজ করার আগ্রহ দেখান আর ব্যারিস্টার আমিনুলের কাছে সর্বস্তরের মানুষ কাজের জন্য যাবার সুযোগ পান।

রাজশাহী-২ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ফজলে হোসেন বাদশা, বিএনপির সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু, ইসলামী আন্দোলনের ফয়সাল হোসেন ও সিপিবির এনামুল হক।

মহানগরীর হড়গ্রাম এলাকার রুবেল ২০০২ সাল থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ‘মিজানুর রহমান মিনু দীর্ঘ ১৬ বছর সিটি করপোরশনের মেয়র হিসেবে মহানগরীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। সেই সাথে খুব সহজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন তিনি। কিন্ত নৌকা প্রাতীকের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা টানা ১০ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে থেকেও ভোটারদের মনে জায়গা করতে পারেননি। তবে এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই মহানগরী অনেকটা এগিয়ে গেছে তার চেষ্টায়।

মহানগরীর বন্ধ হয়ে যাওয়া আজিজ ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে কাজ করা শ্রমিক সপুরা এলাকার সেলিম হোসেন বলেন, ম্যাচ ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অনেকটা বেকার হয়ে পড়েছি। যখন যে কাজ পায় তাই করেন। বর্তমানে বিসিক শিল্প নগরীতে কাপড় রংয়ের কাজ করছেন। গেল ১০ বছর থেকে শুনে আসছি রাজশাহীতে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ বেশ কিছু শিল্পকারখানা হবে। কিন্ত এখন পর্যন্ত একটাও হয়নি। এবারের নির্বাচনেও একি কথা বলছেন প্রার্থীরা। ধানের শীষের প্রার্থী বলছেন শিল্প জোন হবে। আর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বলছেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এই ধরনের প্রতিশ্রুতি চাই না। বাস্তবায়ন চাই।

মহানগরীর ছোট্ট বনগ্রাম এলাকার শিউলি হাবিব বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুব সমাজকে কর্মসংস্থানের সুযোগের কথা বলছেন। কিন্ত এর অপব্যহার রোধের ব্যাপারে প্রার্থীরা কিছু বলছেন না। ইদানিং যুব সমাজের মধ্যে যে সামাজিক অবক্ষয় তৈরি হয়েছে তার অধিকাংশই তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনের দৃঢ় অঙ্গীকার চান প্রার্থীদের কাছে।’

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিন, বিএনপির শফিকুল হক মিলন, ইসলামী আন্দোলনের ফজলুর রহমান, যুক্তফ্রন্টের মনিরুজ্জামান ও সাম্যবাদী দলের সাজ্জাদ আলী। এই আসনে বিএনপি প্রার্থী মিলন এই প্রথমবার সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছেন।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রকৌশলী এনামুল হক, বিএনপির সাবেক এমপি আবু হেনা ও ইসলামী আন্দোলনের তাজুল ইসলাম খান।

রাজশাহীর বাগমারার তাহেরপুর এলাকার হাবিব আহম্মেদ বলেন, ‘কৃষকদের ফসল নায্যমূল্যে বিক্রয়ের জন্য বিভিন্ন এলাকায় কৃষি বাজার গড়ে তোলা হয়েছিল। যেখানে চাষিরা তাদের ফসল নায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারতেন। সেই ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়েছে বললেই চলে। এখন ফড়িয়াদের দাপটে কৃষকরা তাদের নায্য মূল্য পাচ্ছেন না। যার কারণে চাষাবাদে অনিহা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। প্রার্থীরদের কাছে এই সকল বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। তারা আগামীতে হবে এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে জঙ্গি, যুদ্ধাপরাধী, সর্বহারা বিষয় তুলে ধরছেন বলে জানান তিনি।

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের ডা. মনসুর রহমান, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফা, জাতীয় পার্টির আবুল হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের রুহুল আমিন ও জাকের পার্টির শফিকুল ইসলাম। মুল প্রতিদ্বন্দ্বির দুই দলের প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ডা. মনসুর রহমান এবার প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিএনপির আবু সাঈদ চাঁদ, ইসলামী আন্দোলনের আব্দুস সালাম সবুজ ও জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন। বিএনপি প্রার্থী মিলন চাঁদ প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। তিনি উপজেলা ভোটে পরপর দুবার চারঘাটের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। সংসদ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

সারাবাংলা/একে/এমএইচ

জাতীয়-নির্বাচন নতুন ভোটার রাজশাহীর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর