জনতার ঢল স্মৃতিসৌধে, ফুলে ফুলে ছেয়েছে প্রাঙ্গণ
১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:০১
।। তহিদুল ইসলাম, সাভার থেকে।।
ঢাকা: গুমোট আবহাওয়া। যেন মন খারাপ করে আছে প্রকৃতি। ক্রমে বেলা বাড়লেও দেখা মেলেনি না সূর্যের। রোববার সকালের প্রকৃতিটি এমন থাকলেও সাভারের স্মৃতিসৌধে বিজয় দিবসে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। স্মৃতিসৌধের পাশ থেকে ভেসে আসছে দেশাত্মবোধক গান। এমন আবহে এক এক করে এগিয়ে আসে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন। এরপর স্মৃতিসৌধ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছেন এ সব সংগঠনের পক্ষের লোকজন। একের পর এক বিনম্র শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে যায় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ।
এদিন ভোরে মহান বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধান বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান।
পরে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর শ্রদ্ধা-ভালোবাসা নিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শুরু করে জনতা। তবে সবাই যে সংগঠনের পক্ষে কিংবা ব্যানারে এসেছে বিষয়টি এমন নয়। পরিবার-পরিজন, সঙ্গী নিয়ে কিংবা কেউ কেউ একাকি এসেছেন স্মৃতিসৌধে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সী মানুষের ভিড় জমে এখানে। উদ্দেশ্য একটাই- শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো।
ধামরাইয়ের ঢুলি ভিটা থেকে বাবা-মায়ের সাথে স্মৃতিসৌধে এসেছে ছোট্ট শিশু সাইফা মৃধা। সাইফা মৃধা বলছিল, আজ বিজয় দিবস। এ জন্য সে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে এসেছে। পাশাপাশি স্মৃতিসৌধ ঘুরে দেখবে
একটি প্রতিবন্ধী সদস্যদের সংগঠনের ব্যানারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জিরানী থেকে স্মৃতিসৌধে এসেছেন বেশ কয়েকজন শারীরিক প্রতিবন্ধী।
এদেরই একজন মো. সোনা মিয়া বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমার জন্ম। যুদ্ধের সময়ের কোনো স্মৃতি আমার নেই। তবে এটা জানি মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ প্রাণ দিয়েছেন। দেশের জন্য আরো অনেকেই সংগ্রাম করেছেন। এ জন্য তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এখানে এসেছি।’
তবে সবাই যে শ্রদ্ধা জানাতে এখানে এসেছেন এমন নয়। জীবিকার তাগিয়ে কেউ কেউ ছুটে এসেছেন স্মৃতিসৌধে। টঙ্গী থেকে পতাকা বিক্রি করতে স্মৃতিসৌধে এসেছেন মো. শহীদ মিয়া। কথা হয় তার সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘অন্যরা ফুল দিতে স্মৃতিসৌধে এলেও তিনি এসেছেন পতাকা বিক্রি করতে। তবে নিজে শ্রদ্ধা জানাতে না পারলেও সবাই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এটা দেখে তিনি তৃপ্তি পাচ্ছেন।’
স্মৃতিসৌধের এক পাশে পাতা দিয়ে শাপলা ফুল তৈরিতে ব্যস্ত ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, বাচ্চাদের কাছে এ ফুলের বেশ চাহিদা। একেকটি ফুল ২০ টাকায় বিক্রি হয়। সাধারণত উৎসবের সময় তিনি এখানে আসেন। তবে বাকি সময়টুকু তিনি বাইপাইল এলাকায় ফেরি করে চা বিক্রি করেন।
বিজয় দিবস সম্পর্কে কিছু জানেন কি না প্রশ্ন করতেই ৭৪ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ বললেন, আমি তো নিজেই যুদ্ধ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ট্রেনিং নিয়েছি বরিশালে। সেখানেই যুদ্ধ করেছি।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোন সুযোগ সুবিধা পান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে সার্টিফিকেট আছে। এটা নিয়ে অনেক অফিসে গিয়েছি। তবে তারা বলেছে এ সার্টিফিকেট দিয়ে কাজ হবে না। কিছু পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করিনি তবে শেষ বয়সে একটু সুযোগ-সুবিধা পেলে জীবনটা কোনোভাবে কাটিয়ে দিতে পারতেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সারাবাংলা/একে