অভিবাসন চুক্তির বিরুদ্ধে ব্রাসেলসে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ
১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০০
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
গেল সপ্তাহে মরক্কোতে পাস হওয়া জাতিসংঘের অভিবাসন চুক্তির বিরুদ্ধে বেলজিয়ামের ব্রাসেলকে বিক্ষোভ করেছে দেশটির ডানপন্থি রাজনৈতিক দল ফ্লেমিশ রাইট-উইং পার্টি। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ও জলকামান ব্যবহার করে।
বিবিসি ও আল জাজিরার খবরে বলা হয়, সদ্য সই হওয়া জাতিসংঘের চুক্তির ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে অভিবাসনের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে— এমন আশঙ্কা থেকেই বিক্ষোভের ডাক দেয় ফ্লেমিশ পার্টি। এই বিক্ষোভ ব্রাসেলনের যে অংশটিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই অংশেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিভিন্ন দফতর অবস্থিত। এতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মানুষ অংশ নেন।
পুলিশ বলছে, তারা বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভস্থল ত্যাগ করতে অনুরোধ জানালেও তারা সেখান থেকে সরে যায়নি। বরং এসময় তারা পুলিশের ওপর চড়ায় হতে থাকে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও জলকামান ব্যবহার করে।
জানা গেছে, সহিংসতার আশঙ্কায় পূর্বঘোষিত এই বিক্ষোভ কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তবে আদালত শান্তিপূর্ণভাবে যেকোনো কর্মসূচি পালনের অধিকারের অংশ হিসেবে কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেন। আদালত বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে যেকোনো কর্মসূচি পালনের অধিকার সবার আছে।
এদিকে, জাতিসংঘের ওই চুক্তিতে সমর্থন জানিয়ে পাল্টা একটি সমাবেশের ডাক দেয় বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো। এই সমাবেশে প্রায় এক হাজার মানুষ যোগ দেয়।
এর আগে, জাতিসংঘের অভিবাসন চুক্তিতে অন্যান্য দেশের মতো সই করে বেলজিয়াম সরকারও। তবে এর জের ধরে জোট সরকারের অন্যতম অংশীদার, ডানপন্থী এন-ভিএ পার্টি সরকার থেকে সরে দাঁড়ায় রোববারই।
জাতিসংঘের ১৯৬টি সদস্য দেশ ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর সেফ, অর্ডারলি অ্যান্ড রেগুলার মাইগ্রেশন’ শীর্ষক অভিবাসন চুক্তিতে সম্মত হয় গত জুলাই মাসে। পরে গত সপ্তাহে মরক্কোতে ১৬৪টি সদস্য দেশ এই চুক্তিতে সই করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রিয়া, হাংগেরি, ইতালি, পোল্যান্ড ও স্লোভাকিয়াসহ ইউরোপের বেশকিছু দেশ এই চুক্তি মেনে নিতে রাজি হয়নি। বেলজিয়াম এই চুক্তিতে সই করেছে।
এই চুক্তিতে নিজস্ব অভিবাসন নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি দেশকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় অভিবাসনকে দেখার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বৈধ অভিবাসনের ‘মৌলিক’ গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে।
এই চুক্তির শর্তাবলী চুক্তিতে সই করা দেশগুলোর ওপর বাধ্যতামূলক নয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই চুক্তির ফলে ইউরোপে অভিবাসনের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে ওই অঞ্চলের দেশগুলোর। এরই মধ্যে ইউরোপের অনেক দেশই গত কয়েক বছরে অভিবাসন ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতালির প্রচণ্ড বাধার মুখে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারকেও (এমএসএফ) ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে তাদের কার্যক্রম সরিয়ে নিতে হয়েছে। গত জুনে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনাকারীদেরও অবৈধ ঘোষণা করেছে হাংগেরি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসীর সংখ্যা ২ কোটি ১৩ লাখেরও বেশি। এই সংখ্যা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। এর মধ্যে ২০১৫ সালে কেবল ইউরোপের দেশগুলোতেই নতুন করে ১০ লাখেরও বেশি অভিবাসী আশ্রয় নেয়। এর মধ্যে অনেকেই যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়া, আরেকটি বড় অংশ আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলো থেকে ছুটে যাওয়া মানুষ। ইউরোপের বেশকিছু দেশই নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখেও ওই সময় অভিবাসীদের সাদরে গ্রহণ করে। তবে এসব দেশেও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ডানপন্থি দলগুলোর।
২০১৫ সালে ইউরোপে অভিবাসীদের এমন ঢল নামার পর থেকেই জাতিসংঘ অভিবাসন বিষয়ক একটি বৈশ্বিক সমঝোতা তৈরির প্রক্রিয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।
সারাবাংলা/টিআর