যথাযোগ্য মর্যাদায় নিউইয়র্কে বিজয় দিবস উদযাপিত
১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:১৯
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন নিউইয়র্ক এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্ক এর যৌথ আয়োজনে ৪৮তম বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। রোববার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপনের শুভ সূচনা হয়। এসময় মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সবাই এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
সন্ধ্যার অনুষ্ঠান শুরু হয় মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে। আলোচনা অনুষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী প্রবাসী বাঙালিদের মিলন মেলায় পরিণত হয়।
উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে উঠে আসে জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে সূদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, বাঙালির বিজয় অর্জনের ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন স্মৃতি, দেশের ব্যাপক উন্নয়ন এবং রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দিবসটি উপলক্ষে দেয়া রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সর্বস্তরের প্রবাসী বাঙালিদের সমাগমে মুখরিত এ আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যের শুরুতেই স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ এবং জাতীয় উন্নয়নে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা এবং বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন,বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ির সেই সময় থেকে আজ অনেক দূরে চলে এসেছে। আজ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, তথ্য-প্রযুক্তি, দারিদ্র্য বিমোচন প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটেগরি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করে আজ উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়ে চলছি। মহান বিজয়ের এই দিনে আমরা আমাদের অর্জনসমূহের আনন্দ উদযাপন করতে পারি আর যা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে।
রাষ্ট্রদূত মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের অবদান এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ বিশেষ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান স্থায়ী প্রতিনিধি।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইয়র্ক এর কনসাল জেনারেল মিজ্ সাদিয়া ফয়জুননেসা তাঁর বক্তব্যে বিজয়ের এইদিনে দেশের উন্নয়নে প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশীর অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তারা শুধু রেমিটেন্সই প্রেরণ করছেন না, তারা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দূত হিসেবে প্রবাসে সগৌরবে বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন।
কনসাল জেনালেল আরও বলেন,বাংলাদেশ আজ মহাদেশ থেকে মহাকাশে উন্নীত হয়েছে আর এই উন্নয়নের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজয় দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের পেটারসন শহরের মেয়র প্রদত্ত ঘোষণাপত্র তিনি উপস্থিত সুধীমন্ডলীর সামনে প্রদর্শন করেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্যে লিখিত অংশটি পড়ে শোনান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বাতেন এবং যুদ্ধাহত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ডা: মাসুদুল হাসান।
বক্তারা একাত্তরের রাজাকার, আলবদর ও আলশামস্ ও তাদের দোসরদের যে কোনো দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র রুখতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তিতে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তারা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং জাতির পিতার নীতি ও আদর্শ ধারণ করে প্রবাসে বাংলাদেশের ভূমিকা সমুজ্জ্বল করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ ও জাতির উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে শুরুতে মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। আলোচনা পর্ব শেষে স্থানীয় সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পারফর্মিং আটর্স (বিপা)’ দেশাত্ববোধক ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করে। একক ও দলীয় উপস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশিত হয় ‘আমি আমার দেশের স্বাধীনতার কথা বলছি’, ‘আজো আমি বাতাসে লাসের গন্ধ পাই’, ‘দারুণ মিছিল আসে, মানুষের মুক্তির মিছিল’ এর আবৃত্তি এবং ‘যেখানে মাটির দাওয়ায় পিদিম জ্বলে’, ‘আজ যত যুদ্ধবাজ দেয় হানা’, ‘সাধের একতারা আমার’ এর মতো গানগুলো। সঙ্গীত ও কবিতার সাথে নৃত্যের পরিবেশনা অনুষ্ঠানটিতে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়।
অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকগণ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, গত বছরের ন্যায় এবারও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ১৫ ডিসেম্বর স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ‘বিজয় দিবস প্রীতি টেবিল টেনিস টুর্নামেন্ট’-এর আয়োজন করা হয়। স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেট জেনারেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতিসংঘ সদরদপ্তরে কর্মরত বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাগণ এবং বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী এই টেবিল টেনিস টুর্নামেন্টে অংশ নেন।
উৎসবমুখর পরিবেশে বিপুল প্রবাসীদের সমাগমে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হন মোকাররাম আহমেদ ও মেজর মো: আলতাফ আলী এবং এককভাবে চ্যাম্পিয়ন হন মো: আসিফ চৌধুরী।আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের মাঝে ‘বিজয় দিবস টেবিল টেনিস ক্রেস্ট’ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
সারাবাংলা/এনএইচ