অভিবাসী দিবসে অভিবাসীদের অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের অঙ্গীকার
১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:০২
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস আজ। অভিবাসী কর্মীদের মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখার প্রয়াসে প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
‘অভিবাসী অধিকার, মর্যাদা ও ন্যায় বিচার’— এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকার জাতীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাণীতে শোষণ, বঞ্চনা ও হয়রানিমুক্ত অভিবাসন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরির মাধ্যমে পৃথিবীকে আরও বৈচিত্র্যময় ও বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রেও অভিবাসী জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অভিবাসনকে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে সভ্যতার অগ্রগতিতে অভিবাসনের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক অভিবাসী জনগোষ্ঠী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাদের কষ্টার্জিত আয় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করছে। দেশের উন্নয়নে তাদের অবদান আমি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি।
আবদুল হামিদ বলেন, যুদ্ধ, বিগ্রহ ও ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন কারণে অভিবাসন আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। অভিবাসীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, কনভেনশন ও সনদে বর্ণিত বিধান যথাযথ প্রতিপালন অত্যন্ত জরুরি।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অভিবাসন প্রক্রিয়াকে নিরাপদ ও স্বচ্ছ করে তুলতে বাংলাদেশ সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরাপদ অভিবাসনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে, ভবিষ্যতেও দিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, দেশের এই অভাবনীয় সাফল্যের অংশীদারদের মধ্যে সকল অভিবাসী ভাই-বোন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের শ্রম, অবদান ও ত্যাগ অনস্বীকার্য। ২০১৮ সালে অভিবাসীদের কল্যাণে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এ সংক্রান্ত আইনি কাঠামো সংস্কারের কাজও চলমান রয়েছে। অভিবাসনে আগ্রহীদের আশানুরূপভাবে দক্ষ করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ চলমান রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রয়াসে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও অগ্রগতি অর্জন হোক এবারের অভিবাসী দিবসের অঙ্গীকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উদ্যোগে চলতি ডিসেম্বর মাসেই জাতিসংঘে গৃহীত হচ্ছে অভিবাসন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দলিল গ্লোবাল কম্প্যাক্ট ফর সেফ, অর্ডারলি অ্যান্ড রেসপন্সিবল মাইগ্রেশন। অভিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই নতুন দিক নির্দেশনা নিরাপদে অভিবাসনে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রতিশ্রুতি বেগবান হবে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে গৃহীত সব ধরনের কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, অভিবাসী দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এক সাংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রৌনক জাহান এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সচিব বলেন, চলতি বছর ৭ লাখ ১২ হাজার ৩৪২ জন কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। এছাড়াও জাপানসহ বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণপাপ্ত কর্মীদের পাঠানো হচ্ছে। জাপানসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগে আগ্রহ জানিয়েছে। সে অনুযায়ী দেশের কর্মীদের বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে তিনি আন্তর্জাতিক অভিবাসী মেলা উদ্বোধন করবেন। দিনের দ্বিতীয় ভাগে বিকেলে বিতর্ক প্রতিযোগিতা অভিবাসী মেলায় নির্বাচিত সেরা স্টলকে পুরস্কৃত করা হবে। বাসস।
আরও পড়ুন-
অভিবাসন চুক্তির বিরুদ্ধে ব্রাসেলসে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ
সারাবাংলা/টিআর