Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আ.লীগের ইশতেহার আজ: থাকছে শিল্পোন্নত দেশ গড়ার অঙ্গীকার


১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:৪৯

।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির সংশ্লেষণের লক্ষ্যে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি শিল্পোন্নত দেশ হিসাবে গড়ে অঙ্গীকার থাকছে আওয়ামী লীগের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে। এই ইশতেহারের মূল স্লোগান রাখা হয়েছে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’।

আজ মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটির নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইশতেহার ঘোষণা করবেন। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে ইশতেহার উপকমিটি।

আরও পড়ুন- ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা’র অঙ্গীকার নিয়ে আ.লীগের ইশতেহার আজ

ইশতেহার উপকমিটির একাধিক সূত্র জানায়, এবারের ইশতেহারে তরুণদের কর্মসংস্থানসহ আগামীর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনিমার্ণের লক্ষ্যে বিশেষ অঙ্গীকার রয়েছে। বিশেষ করে তরুণ ও নারী ভোটারদের ভোট টানতে ইশতেহারে বিশেষ কিছু অঙ্গীকার প্রাধান্য পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রজন্ম পরম্পায় উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনিমার্ণের হাতছানি দিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে শিল্পায়নে।

ইশতেহারে শিল্প উন্নয়নে পটভূমিতে দলের অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, ‘উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনিমার্ণে শিল্পায়নের গুরুত্ব অনেক বেশি। জনসংখ্যাধিক্যের কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত তরুণ-যুব সমাজের কর্মসংস্থান ও কাজের উৎস তৈরি করা প্রয়োজন। এই অবস্থার অবসানে মুখ্য ভূমিকা রাখবে শিল্পায়ন। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিপুল শ্রমশক্তি কাজে লাগাতে শ্রমঘন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পভিত্তিক শিল্প উন্নয়ন কৌশলে জোর দিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে গুরুত্ব পাচ্ছে ভারী ও মৌলিক শিল্প, যার ওপর ভিত্তি করে বহুমাত্রিক সংযোজন শিল্প গড়ে উঠবে। ফলে কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য নিরসন ও আর্থসামাজিক সুস্থিতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞাপন

শিল্পায়নে সরকারে টানা ১০ বছরের মেয়াদে গৃহীত পদক্ষেপও তুলে ধরা হয়েছে ইশতেহারে। বলা হয়েছে, পোশাক শিল্পের সম্প্রসারণে সরকার অব্যাহতভাবে সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনা দিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ ধ্বংসকারী পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধ করার বিপরীতে পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এরই মধ্যে সরকারের সহায়তায় বিজ্ঞানীরা পাটের জন্ম রহস্য উন্মোচনসহ পলিথিনের বিকল্প পলিব্যাগ উদ্ভাবন করেছে। বহুমুখী পণ্যের সংখ্যা ৩৫টি থেকে বর্তমান সরকারের সময় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৫’তে।

দেশে একশটি সরকারি ও বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ৮৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বিইজেডএ) গঠন করা হয়েছে। আটটি ইকোনমিক জোনের কাজ প্রায় শেষ এবং ২১টির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়াও মিরসরাই ও ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৩১৭৭ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নাফ নদীর অভ্যন্তরে ২৯১ একর জমির ওপর নাফ ট্যুরিজম পার্ক স্থাপিত হচ্ছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো এরই মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে ইশতেহারে বলা হয়, বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য কয়েক হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কর অবকাশসহ বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব রোধে প্রতিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিকল্পিত উপায়ে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়াও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুপ্রতিম দেশ চীন, জাপান ও ভারতের জন্য তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল সংরক্ষিত করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নারী উদ্যোক্তা ইউনিট খোলার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা যেন জামানতের অভাবে ব্যাংক থেকে বঞ্চিত না হয়, সে লক্ষ্যে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইজ অব ডুইং বিজনেস ক্রম উন্নয়নের জন্যও সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সরকারের দুই মেয়াদের এসব কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারেও এ সম্পর্কিত বিভিন্ন অঙ্গীকার যুক্ত হয়েছে। এবারের ইশতেহারে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা হিসেবে দ্রুত শিল্পনায়নের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারের দ্রুত বিকাশ, আইনশৃঙ্খলা ঘুষ, দুর্নীতি, প্রশাসনিক জটিলতা ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতামুক্ত, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ, প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থা, উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, ভৌত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, উদ্যোক্তা শ্রেণিকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম এবং অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারণ প্রভৃতি নীতিমালাকে রাখা হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা হয়েছে ইশতেহারে।

ইশতেহারে বলা হয়েছে, শিল্পায়ন ও বহুমাত্রিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের ফলে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির সংশ্লেষণের লক্ষ্যে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশ একটি শিল্পোন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তোলার মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাশাপাশি কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। রফতানি বহুমুখী করতে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে পাটজাত পণ্যের রফতানিতে আর্থিক প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। শিল্পায়নের প্রবৃদ্ধি অর্জনে সম্পদ ও উৎপাদন হিসেবে প্রযুক্তির উদ্ভাবনে দেশীয় গবেষণাকে উৎসাহিত করতে গবেষণায় ব্যয় বাড়ানোসহ নীতি নির্ধারণ ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য হারে রফতানি-বিরুদ্ধ বাধা ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় জটিলতা দূর করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে আহ্বায়ক ও উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে সদস্য সচিব করে এবারের ইশতেহার উপকমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন— আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ড. মসিউর রহমান, হোসেন তওফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম) ড. অনুপম সেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল মান্নান, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শেখর দত্ত, ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ ও ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের ইশতেহার নির্বাচনি ইশতেহার সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর