ময়মনসিংহ-৬: মহাজোটে প্রার্থী জট, ঐক্যবদ্ধ বিএনপি
১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৯:৪৫
।। মো. গোলাম কিবরিয়া, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
ময়মনসিংহ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে ‘মহা জট’ দেখা দিয়েছে। মহাজোটের পক্ষ থেকে এই আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও এ আসনে ভোটের মাঠে এখন পর্যন্ত আছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থীও রয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে সিংহ মার্কায়। নির্বাচনি প্রচারণায় তারা কেউ কাউকে একচুল ছাড় দিচ্ছেন না। জোট শরিকরা ভোট থেকে সরে না দাঁড়ালে এই আসনে মহাজোটের ভেতরেই তীব্র প্রতিদ্বনিন্দ্বিতা দেখা যাবে।
মহাজোটের এই ‘জটে’র সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিশেষত ঐক্যফ্রন্টের বৃহত্তম শরিক দল বিএনপিতে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে আসনটিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন একক প্রার্থীর পক্ষে একাট্টা। জোরেশোরে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা।
মহাজোট সূত্রে জানা যায়, ‘কাঁচা হলুদ’ আর ‘লাল চিনি’ খ্যাত এই উপজেলায় মহাজোট থেকে প্রথমেই মনোনয়ন পান বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন আহমেদ। কিন্তু গত ২৭ নভেম্বর জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন বাগিয়ে আনেন স্বচ্ছ ব্যাক্তি হিসেবে পরিচিত ডা. খন্দকার রফিকুল ইসলাম। অন্যদিকে মহাজোটের মনোনয়ন না পেয়ে আগেভাগেই ক্ষমতাসীন আরেক শরিক জাসদের প্রার্থী সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টুও স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ফলে এই একটি আসনেই মহাজোটের তিন প্রার্থী লড়ছেন একে অন্যের বিরুদ্ধে।
মহাজোটের প্রার্থী নৌকা প্রতীক পাওয়া বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, মহাজোটের সিদ্ধান্তেই আমি নৌকা পেয়েছি। শেষ পর্যন্ত জোটের অন্য দলগুলোও ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকায় বিজয় নিয়ে আসবেন বলে আশা করছি।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ডা. খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলছেন, ফুলবাড়িয়া সরকারের উন্নয়নের মহাযজ্ঞ থেকে বঞ্চিত। পিছিয়ে পড়া ফুলবাড়িয়াকে এগিয়ে নিতে এখানকার জনগণ আমাকে চায়। তাদের অনুরোধেই আমি প্রার্থী হয়েছি।
এদিকে, মহাজোটের আরেক শরিক দল জাসদের দলীয় প্রতীক মশাল হলেও সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু একাদশ জাতীয় সংসদে লড়ছেন স্বতন্ত্র সিংহ মার্কা নিয়ে। তিনি বলেন, দুর্নীতি, লুটপাট আর যুদ্ধাপরাধ— এই তিন ইস্যুতেই নৌকাকে বয়কট করেছে ফুলবাড়িয়াবাসী। ফুলবাড়িয়ার মানুষ পরিবর্তন চায়। তাদের পাশে দাঁড়াতেই শেষ পর্যন্ত আমি ভোটে লড়ছি।
মহাজোটের প্রার্থীদের নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই আসনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষের একক প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শামস উদ্দিন আহম্মেদ। সাংগঠনিকভাবে নেতাকর্মীদের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয় তিনি। সাধারণ মানুষের কাছেও তার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত বলে জানান বিএনপির নেতাকর্মীরা।
অবশ্য এই আসনটিতেও বিএনপি সম্পূর্ণ নির্ঝঞ্ঝাট ছিল না। শামস উদ্দিনের ভাতিজা আখতারুল আলম ফারুক প্রধান চেয়েছিলেন দলের মনোনয়ন। পরে অবশ্য চাচা-ভাতিজার মিলন ঘটেছে, ভোটের মাঠে এখন চাচার পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন ভাতিজা।
আখতারুল আলম বলেন, এই নির্বাচন ব্যক্তিগত কোনো অর্জনের নির্বাচন নয়। আমরা মহাজোটের প্রার্থীদের নিয়েও চিন্তিত নই। আমাদের চাওয়া ন্যূনতম সুষ্ঠু ভোট। আর তা হলেই আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।
সারাবাংলা/টিআর