Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গাদের ফেরত এনে দুইটি শিবিরে রাখা হবে: মিয়ানমার


১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৮:৫১

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে গত আগস্টে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ থেকে ফেরত নিবে। তবে তাদের ঘোষণা অনুসারে এই জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আরও প্রশ্ন উঠেছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় আরাকান সমাজের সঙ্গে এই বিষয়ে কোনো আলাপ না করায়। এই পরিস্থিতিতে রাখাইন অঞ্চলের অভিবাসী ও জনসংখ্যা বিভাগের প্রধান উ আন মিঙ-এর একটি সাক্ষাৎকার ছেপেছে দ্য ইরাওয়াদি (The Irrawaddy) নামক গণমাধ্যম। সারাবাংলার পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি হুবহু প্রকাশ করা হল—

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ থেকে মুসলমান শরণার্থীদের ফেরত আনার প্রক্রিয়াটা কেমন?
রোহিঙ্গাদের ফেরত এনে প্রথমে আমরা তাদেরকে তাওংপলেটি (Taungpyoletwe) এবং না-খু-ইয়া (Nga Khu Ya) এই দুইটি শিবিরে রাখব। অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিভাগ, সাধারণ প্রশাসনিক বিভাগ, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ এই প্রক্রিয়ার তদারকিতে থাকবে। সরকারের ভাষ্য মতে, ১৯৯৩ সালের চুক্তি অনুযায়ী এই প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন ফরম বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। যারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে চায় তারা ওই ফরম পূরণ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠাবে।

পূরণ করা ফরমের তথ্য আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব যে তারা আমাদের দেশে (মিয়ানমারে) বসবাসের উপযুক্ত কিনা। তারপর আমরা জানাব যে পূরণ করা ফরমের মধ্য থেকে কাদেরকে আমরা মিয়ানমারে ফেরত আসার অনুমতি দিচ্ছি। যাদেরকে অনুমতি দেওয়া হবে, তাদেরকে প্রথমে জাতীয় শণাক্ততরণ পত্র (এনভিসি) ও তারপর তাদেরকে ডিজিটাল নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।

বিজ্ঞাপন

কখন প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া শুরু হবে?
প্রত্যাবসন প্রক্রিয়ার জন্য আমরা এরই মধ্যে সব কিছু চূড়ান্ত করেছি। যাবতীয় ফরম, এনভিএস ও ডিজিটাল নিবন্ধনের জন্য সবকিছু চূড়ান্ত করেছি। উপর মহলের সংকেত পেলেই আমরা প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া শুরু করব।

প্রতিদিন কী পরিমাণ মানুষকে ফেরত আনা হবে? ফেরত প্রক্রিয়া কতদিন চলবে?
প্রতিটি কেন্দ্রে ১৫০জন মানুষকে প্রতিদিন গ্রহণ করা হবে। আমরা অভিবাসী কর্মকর্তরা বলতে পারব না যে কতদিন এই প্রক্রিয়া চলবে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারাই এটা বলতে পারবে।

জাতীয় শণাক্ততরণ পত্র (এনভিসি) দেওয়ার ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা পোহাতে হচ্ছে?
সবাই তো এনভিসি পেতে চায়। আর কিছু মানুষ এই প্রত্রিয়া ভণ্ডুল করতে সর্বদা উদ্যোগী ভূমিকায় রয়েছে। এই কারণে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এনভিসি’র প্রক্রিয়া কফি আনান কমিশনের সুপারশি এবং ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের সিটিজেন আইনের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এনভিসি প্রক্রিয়াকে কিছু লোক ব্যাহত করতে চাচ্ছে কেন?
কিছু মানুষ চিন্তা করে যে তারা এনভিসি’র জন্য উপযুক্ত না। তখন তারা আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে মিশে গিয়ে এই কার্যক্রম ব্যাহত করার চেষ্টা চালায়। যদি সবাই এনভিসি’র আওতায় আসে তবে অভিবাসী কর্মকর্তা এবং পুলিশ ও সীমান্ত কর্মকর্তারা সহজেই অবৈধ অভিবাসীদের শণাক্ত করতে পারে। মূলত আরসা এনভিসি’র এই কর্মকাণ্ড ভণ্ডুল করতে প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছে এবং কার্যক্রম ব্যাহত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সিটউ ও পাওকটের মুসলমানরা কেন স্বেচ্ছায় এনভিসি নিবন্ধনে আগ্রহী নয়?
এদের অনেকেই মনে করে যে তারা এই প্রক্রিয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। তারা বিশ্বাস করে যে তারা মিয়ানমারের নাগরিক হওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। এই জন্য তারা এই প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে উদ্যোগী ভূমিকা রাখে। আমরা দেখেছি যে যারা এনভিসি নিবন্ধন করতে এসেছে তারা সকলেই গোপনীয়তা রক্ষা করে এসেছে।

যারা ভয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করে এনভিসি নিবন্ধন করে তাদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি?
তারা চিন্তা করে যে যারা এনভিসি নিবন্ধন করবে তাদেরকে আরসাসহ অনেকের আক্রোশের মোকাবিলা হতে হবে। এ জন্য তারা প্রকাশ্যে নিবন্ধন করে না। তবে আমরা তাদের জন্য নিরাপত্তা বাড়ালেও তারা ভীতই থাকে।

এনভিএস প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কতজন গ্রাম প্রশাসক নিহত হয়েছেন?
আমাদের কাছে থাকা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ১৯জন গ্রাম প্রশাসক নিহত হয়েছেন।

সারাবাংলা/জেআইএল/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর