Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকারের চার বছর আজ, সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ


১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:০১

হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমান মেয়াদের চার বছর পূর্ণ করছে আজ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে দলটি। টানা দ্বিতীয় বারের মতো দলটি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে সে বছর ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

চার বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার সরাসরি সম্প্রচার করবে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণটি।

দ্বিতীয় মেয়াদের এই চার বছরে আওয়ামী লীগ সরকার অনেক ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান সাফল্য অর্জন করেছে। দেশের সড়ক, মহাসড়ক, উড়াল সড়ক, মেট্রো রেল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল থেকে শুরু করে পদ্মাসেতুর মতো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্প নিজ অর্থায়নের শুরু করার মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার জানান দিয়েছে এই সরকার।

বাজেট বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, রপ্তানি বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে দেশে অর্থনীতিকে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে শক্ত ও মজবুত ভীতের ওপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের লাগাতার অবরোধের কারণে প্রথম বছরে কিছুটা বেগ পেতে হলেও পরবর্তী তিন বছর অনেকটা ঝামেলাহীন ভাবে পার করেছে। বিগত চার বছরে মধ্যে এই সরকারের সামনে নানা সমস্যা এলেও দক্ষতার সঙ্গে তা মোকাবেলা করেছে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

গত বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক সমস্যায় পরতে হয়। এছাড়া মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে সরকার ও নিজের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছেন শেখ হাসিনা। যে কারণে মাদার অব হিউমেনিটি উপাধিও পান তিনি।

বিজ্ঞাপন

দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও চাপ উপেক্ষা করে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর নিজস্ব অর্থায়নে এ যাবত কালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী সেতুর কাজ শুরু হয়।এতে নিজেদের শক্তি ও সক্ষমতার জানান দেন বর্তমান সরকার। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই দ্বিতল সেতুটি নির্মাণ নিয়ে শুরুতে পড়তে হয় নানা সমালোচনা আর জটিলতার মুখে। নানা মহল থেকে সেতুর কাজ শেষ করা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।

বর্তমান সরকারের আরেকটি সফলতা হচ্ছে ঢাকার ভেতরে সর্ববৃহৎ ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শেষ করা।  মগবাজার মালিবাগ ফ্লাইওভারটি এই বছর অক্টোবরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

শেখ হাসিনার সরকার যেভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তার জন্যও বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের হত্যা, তাদের ঘরবাড়িতে আগুন ও নারীদের ধর্ষণ শুরু করে সেদেশের সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এ অবস্থায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। আগের চার লাখের সঙ্গে নতুন প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা আসে বাংলাদেশে। প্রায় দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে দেশে আশ্রয় দিয়ে চরম মানবিকতার পরিচয় দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর সাহসী এই পদক্ষেপে পুরো বিশ্বের প্রশংসা কুড়ায় বাংলাদেশ।  সমস্যা সমাধানে পাশে থাকার অঙ্গিকার করে অনেক রাষ্ট্র। শেখ হাসিনা নিজেও ছুটে যান অসহায় রোহিঙ্গাদের শিবিরে। এছাড়া সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

গত বছর নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়ে বাংলাদেশ। পাহাড়ি ঢলে অসময়ে হাওরের লাখ লাখ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে যায়। সাধারণ কৃষকের এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য সরকার তাদের পাশে দাঁড়ায়। একই সময় দেশে দেখা দেয় অকাল বন্যা। উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু জেলা প্লাবিত হয় এই বন্যাতে। এসব দুর্যোগ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায় সরকার।

বর্তমান সরকার ও দেশের জন্য বড় অর্জন হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি ইউনেস্কো কর্তৃক ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ-এ অংশ হিসেবে স্বীকৃতি।

জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকারের সফলতা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। গত বছরগুলোর মতো ২০১৭ সালের সফলতার সঙ্গে জঙ্গি বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয় বছর জুড়ে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে প্রাণ দেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্যও। জঙ্গিবাদ বিরোধী অবস্থানে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে অনেকটাই অনুকরণীয়।

কিন্তু ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ এমপি ও তৃণমূল নেতাদের কোন্দল এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের খবরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয় সরকারকে। এমপি ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের অপকর্মের জন্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে দেখা গেছে। এছাড়া নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে প্রাণ দিতে হয়েছে দলের ভেতরের অনেককেই। তবে এ বিষয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন দলীয় নেতাকর্মী ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে। স্পষ্ট বলে দেন, ‘মুখ দেখে নয়, কাজ ও জনপ্রিয়তার বিচারে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে’। এরই মধ্যে সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে সফর শুরু করবে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

আন্তর্জাতিক পরিসরেও রয়েছে বর্তমান সরকার প্রধানের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি। সম্প্রতি পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স, বিশ্বের পাঁচজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিহ্নিত করেন, যাদের দুর্নীতি স্পর্শ করেনি, বিদেশে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, উল্লেখ করার মতো কোনো সম্পদও নেই। বিশ্বের সবচেয়ে সৎ পাঁচজন সরকার প্রধানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর আগে টাইম ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের প্রভাবশালী ১০ নারী নেত্রীর একজন মনোনীত হন তিনি। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাজ সাধারণ মানুষের উন্নয়ন। আমার রাজনীতি সাধারণ মানুষের জন্য, নিজের জন্য নয়।

পঞ্চম বর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান চ্যালেঞ্জই হচ্ছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নিজ দলের চেইন অব কমান্ড গড়ে তোলা। দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধান করে দলকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের যে কোন ষড়যন্ত্র ও আন্দোলন মোকাবেলা করা। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে অতীতের মতো শক্ত হাতে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র দমন করে সুখী-সমৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলাই এখন এই সরকারের লক্ষ্য।

 

 

সারাবাংলা/এইচএ/জেডএফ/এমএ

 

আওয়ামী লীগ চার_বছর দশম_জাতীয়_সংসদ

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই। ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর