সৈয়দ আশরাফকে বিজয়ী করবেন, এটা আমি চাই: শেখ হাসিনা
১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:১১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এক-এগারোর সময়ের সাহসিকতার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জবাসীকে নৌকার মার্কায় ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফ যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আপনাদের মাঝে ফিরে আসে আমিও দোয়া করি আপনারাও দোয়া করবেন। সে যেন নির্বাচিত হয়, সেটা আপনারা নিশ্চিত করবেন—এটা আমি চাই।
মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে ধানমন্ডির সুধাসদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে নির্বাচনি প্রচার সভায় সংযুক্ত হয়ে কিশোরগঞ্জের দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় যোগাযোগে মহাপরিকল্পনা আ.লীগের
কিশোরগঞ্জ ছাড়াও নড়াইল ও বান্দরবানে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে নির্বাচনি সভায় মতবিনিময় করেন শেখ হাসিনা। সুধাসদন প্রান্তে যৌথভাবে কনফারেন্সিং পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান। এ সময় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সৈয়দ আশরাফের অনুপস্থিতিতে কথা বলতে গিয়ে বারবার ঘুরে শেখ হাসিনা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের কথা বলেন। সৈয়দ আশরাফ বর্তমানে অসুস্থ—বিদেশে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় যোগাযোগে মহাপরিকল্পনা আ.লীগের
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু সৈয়দ আশরাফ অনুপস্থিত। কমিটির সকল সদস্য মিলে আপনারা সৈয়দ আশরাফের জন্য কাজ করবেন এবং ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনে সে যেন জয়লাভ করে।’
কিশোরগঞ্জের আসনগুলি উপহার দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘কারণ কিশোরগঞ্জ সবসময় নৌকার জায়গা। হাওর অঞ্চলে প্রচুর মাছ উৎপাদন হয়। মাছ শুধু উৎপাদন করলেই হবে না সেটা প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বাজারজাতকরণ করে মূল্য বৃদ্ধি করা যায় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নেবো। আমরা প্রত্যেকটি মানুষের জীবনমান উন্নত করতে চাই। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম শুরু করেছিলেন। আমরা সেই গুচ্ছগ্রামের সঙ্গে আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং গৃহায়ন তহবিলের মাধ্যমে যাদের জমি আছে তাদেরকে ঘরবাড়ি করতে টাকা দিচ্ছি। প্রত্যেকটি মানুষ যেন বসবাসের জন্য সুন্দর ঘর পায় সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’
‘আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে—দেশের মানুষের উন্নয়ন করে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে। দেশের মানুষ জীবনমান যাতে উন্নত হয় তার জন্য কাজ করে। আর তার সুফল দেশের মানুষ আজকে পাচ্ছে। ইনশাল্লাহ ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হবে এবং সে নির্বাচনে আমাদের কিশোরগঞ্জের ৬টি আসন। এই ৬টা সিটের ৫টা নৌকা এবং ১ টা লাঙল, আপনারা ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করবেন।’
ইশতেহার দেখতে ক্লিক করুন এখানে: আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আজহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু সৈয়দ আশরাফ অসুস্থ তাই আমি অনুরোধ করবো—সকলে মিলে তার জন্য কাজ করে যাবেন। যেন সে নির্বাচনে জয়ী হয় এবং সুস্থ হয়ে আমাদের কাছে ফিরে আসে। আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন।’
‘ইনশাল্লাহ জয় আমাদের হবেই। কারণ বাংলাদেশের মানুষ আজকে যে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। তাদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে, আমরা আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে, বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলবো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ।’
যেন আবার বিজয়ী হয়ে আপনাদের মাঝে আসতে পারি এবং কথা বলতে পারি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিজয় নৌকার হবে এবং নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।’
সৈয়দ আশরাফের পক্ষে তার ভাই সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফ অসুস্থ হওয়ার পরও আপনি তার উপরে যে আস্থা রেখেছেন সে জন্য নেত্রীকে পরিবারের পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি আরও বলেন, আমি বিদেশে থাকি এই দেশে আপনিই আমাদের পরিবারের অভিভাবক। আর আপনিও এখন সৈয়দ আশরাফের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন।’
নৌকার প্রার্থী ও স্থানীয় নেতাদের কথা বলা শেষ হলে শেখ হাসিনা পুনরায় বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফ অসুস্থ, তারপরও তাকে আমরা প্রার্থী করেছি। আমি সবার কাছে তার জন্য দোয়া চাই। আপনারা দোয়া করবেন। তার নির্বাচনটা আপনারা নিজেদের মনে করে নির্বাচন করবেন। এটাই আমি আপনাদের কাছে চাচ্ছি। আপনারা সবাই মিলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। কারণ আমাদের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে গেছে। আবার সেই এক এগারোর সময় যেভাবে সাহসিকতার ভূমিকা নিয়েছে; কাজেই সবকিছু বিবেচনা করে সে যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আপনাদের মাঝে ফিরে আসে, আমিও দোয়া করি, আপনারাও দোয়া করবেন।’
‘তার অবর্তমানে সাধারণ মানুষের কাছে তার বার্তা পৌঁছে দেবেন সে যেন নির্বাচিত হয়, সেটা আপনারা নিশ্চিত করবেন, এটা আমি চাই।’
নির্বাচনের পর সরকার গঠন করি আর না করি, আমি হোসেনপুরে আসবো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক শরীফ সাদিক বলেন, ‘নেত্রী আপনি সৈয়দ আশরাফকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আপনি তাকে ছোট ভাইয়ের মতো অত্যন্ত স্নেহ করেন। যে সস্মানটুকু দেখিয়েছেন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের মানুষ আপনাকে সেই সম্মান ফিরিয়ে দেবে। আশরাফ ভাই হয়তো অনুপস্থিত কিন্তু এই অনুপস্থিত আশরাফ ভাই উপস্থিত আশরাফ ভাইয়ের চেয়েও শক্তিশালী।’
এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে বান্দরবানের নির্বাচনি প্রচার সভার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বলেন, ‘বান্দরবান একটি চমৎকার পর্যটন সমৃদ্ধ জায়গা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এ অঞ্চল। আবার এখানে পর্যটন সম্ভাবনাও আছে। পার্বত্য বান্দরবানে আমি প্রথম সফর করি ১৯৭০ সালে। একসময় বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্রিজ ছিল না, আমি সেটি করে দিয়েছি। আমরা যদি আবারও ক্ষমতায় আসি আমাদের চলমান উন্নয়ণ কাজগুলো করতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘আমি আরও খুশি হয়েছি, কারণ আমার নতুন ভোটাররা বলেছে তারা নৌকা মার্কায় ভোট দিবে। পরপর দুবার সরকার ক্ষমতায় থাকার পর আমরা একের পর এক উন্নয়ণ করেছি। প্রতিটি মানুষ যেন সুস্থ্য থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা আবারও ক্ষমতায় আসি বান্দরবানের আরও সার্বিক উন্নয়ন এবং পার্বত্য অঞ্চলকে একটি উন্নত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে পারবো। এ বান্দরবান হবে একটি উন্নয়ন ও পর্যটনের মডেল হবে। তাই আগামী ৩০তারিখ আপনারা সবাই আবারও নৌকায় ভোট দিন।’
মঙ্গলবার বিকেলে বান্দরবানের রাজার মাঠে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্স রাজধানীর সুধাসদন থেকে সংযুক্ত হন শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/এনআর/এমআই
আরও পড়ুন: