আ. লীগের ইয়ুথ প্ল্যান, বিএনপির ইয়ুথ পার্লামেন্ট
১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:১৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একই দিনে ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণ এবং যুবকদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। তরুণদের ভোট নিজেদের বাক্সে নিতে দুই দলই তাদের ইশতেহারে তরুণ এবং যুবকদের জন্য রেখেছে আলাদা চ্যাপ্টার।
আওয়ামী লীগ তাদের ইশতেহারে স্বল্প খরচে তরুণদের কাছে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে ‘ইয়ুথ প্ল্যান’ চালুর অঙ্গীকার করেছে। অন্যদিকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত তরুণদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ইয়ুথ পার্লামেন্ট গঠনের অঙ্গীকার করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বেলা সাড়ে ১১ টায় হোটেল লেকশোরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম নিজ নিজ দলের পক্ষে ইশতেহার ঘোষণা করেন।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যুবচ্যাপ্টারের শিরোনাম ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’। ইশতেহারের এই অংশে বলা হয়েছে- ‘যুবসমাজ দেশের মূল্যবান সম্পদ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবসমাজ— যা প্রায় ৫ কোটি ৩০ লাখ। সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধানতম শক্তি এই যুব সমাজ।’
ইশতেহারে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, দেশের যুবগোষ্ঠীকে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং উৎপাদনমুখী শক্তিতে রূপান্তরিত করতে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুবকদের মানসম্মত শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, বিনোদনের ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ও নাগরিক ক্ষমতায়ন এবং সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত যুবসমাজ গঠনে আওয়ামী লীগ অঙ্গীকারবদ্ধ।
দলটির ইশতেহারে যুব সমাজের জন্য অঙ্গীকার করা হয়েছে— একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ করা হবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অগ্রাধিকার পাবে।
তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রসারিত করা হবে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরীখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, প্রতিটি উপজেলায় ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে ‘তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে, দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে, ‘কর্মঠ প্রকল্পের অধীনে ‘স্বল্প শিক্ষিত/স্বল্প দক্ষ/অদক্ষ’ শ্রেণির তরুণদের শ্রমঘন, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উপযোগী জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
‘সুদক্ষ প্রকল্প’র অধীনে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, তা দূর করতে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে, জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের তথ্য সম্বলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে- এর মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে, কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে, ২০২৩ সাল নাগাদ নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে।
আত্মকর্মসংস্থান ও তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি, তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে ও সহজ শর্তে জনপ্রতি ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা ইতোমধ্যে প্রদান করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এই সুবিধা আরও বিস্তৃত করা হবে, তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা সম্ভাবনার ছাপ রাখতে সক্ষম হবে তাদের জন্য আর্থিক, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনসহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা হবে।
তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রণয়ন করা হবে যুগোপযোগী ‘তরুণ উদ্যোক্তা নীতি, বিনোদন, মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক বিকাশের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে, তরুণদের সুস্থ বিনোদনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় গড়ে তোলা হবে একটি করে ‘যুব বিনোদন কেন্দ্র—যেখানে থাকবে বিভিন্ন ইনডোর গেমসের সুবিধা, মিনি সিনেমা হল, লাইব্রেরি, মাল্টিমিডিয়া সেন্টার, সাহিত্য ও সংস্কৃতি কর্নার, মিনি থিয়েটার ইত্যাদি।
যুবসমাজ যাতে আদর্শিক ভ্রান্তিতে মোহাবিষ্ট হয়ে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত না হয়, সেজন্য কাউন্সিলিং এবং তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশকে ত্বরান্বিত করা হবে, তরুণদের মাদকের ভয়াল আসক্তি থেকে মুক্ত করতে প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র করা ও বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর জন্য সরকারি অনুদান বাড়ানো হবে।
প্রতিটি জেলায় একটি করে ‘যুব স্পোর্টস কমপ্লেক্স’ গড়ে তোলা হবে, নাগরিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের যাত্রায় যুক্ত করা হবে তরুণদের, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে আমলে নেওয়া হবে তরুণদের বক্তব্য এবং জাতীয় যুবনীতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পরিবীক্ষণেও যুক্ত করা হবে সমাজের সকল স্তরের তরুণদের।
এদিকে বিএনপি ঘোষিত নয় পৃষ্ঠার ইশতেহারের চতুর্থ পৃষ্ঠায় সংক্ষিপ্ত পরিসরে যুব, নারী ও শিশু চ্যাপ্টারে বলা হয়েছে— জাতীয় উন্নয়নে যুব, নারী ও শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে, ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত তরুণদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য ইয়ুথ পার্লামেন্ট গঠন করা হবে।
দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বিএনপি সকল কর্মকাণ্ডে নারী সমাজকে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত করবে, এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সকল বাধা অপসারণ করা হবে, ক্রিড়া ক্ষেত্রে নারীদের উন্নয়নে পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে, নারী নির্যাতন, যৌতুক প্রথা, এসিড নিক্ষেপ, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, নারী ও শিশু পাচাররোধে কঠোর কার্যকর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিশু-শ্রম রোধে কার্যকর বাস্তবানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, শিশু সন্তান রেখে নারীরা যাতে নিশ্চিন্তে কাজে মনোনিবেশ করতে পারে—সেই লক্ষ্যে অধিক সংখ্যক দিবা যত্ন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, নারী উদ্যোক্তাদের অধিকতর উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নে প্রয়োজনীয় সমর্থন, স্বল্প-সুদে ব্যাংক ঋণ এবং কর-ছাড় দেওয়া হবে।
শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে, এদের যৌক্তিক অর্থনৈতিক উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে, নারীদেরকে ন্যায়সঙ্গত সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রদান করা হবে এবং এই লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিদ্যমান আইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।
সারাবাংলা/এজেড/পিএ