গুলশানের পথনাটক ও বারেক সাহেবের উপলব্ধি
১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:০৭
অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ।।
ফেসবুক লাইভে নিজের পরিচয় দিয়ে বুক চিতিয়ে মনোন্নয়ন বাণিজ্যের জন্য দলীয় সর্বোচ্চ কর্তার বিরুদ্ধে কি জ্বালাময়ী ভাষনটাই না দিলো ছেলেটা- বারেক সাহেব পারেন তো তার পা ধরে সালাম করে আসেন। তার আর যাই হোক আর নাই হোক, এই সাহসটা কোনদিনও হলো না। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন বারেক সাহেব। ছেলে-পেলেগুলোর বুকের পাটার প্রশংসা না করে পারেন না তিনি। কি দুঃসাহস! ভাবা যায়? দলের চেয়ারম্যানের অফিসের গেইটটাতো অল্পের জন্য ভাঙ্গেনি। ইট ছুড়ে ভেঙ্গেছে চেয়ারম্যানের অফিসের জানালার কাচ, সাথে মহাসচিবের গাড়িরটারও। আর দলের ইজ্জত-টিজ্জত যাও বা টুকটাক বাকি ছিল তাও যে ফুটো হয়ে গেছে সে আর বলতে? নেচে-কুদে নমিনেশন বাণিজ্য বিরোধী শ্লোগানতো সাথে ছিলই।
রাতে টিভি টকশোগুলো এই বিষয়েই গরম। সারা দেশে যেন আর কোন আলোচনার বিষয়বস্তু নেই। কানটা জ্বলে যাচ্ছিল বারেক সাহেবের। ‘আচ্ছা, এই লোকগুলো এরকম আত্মবিধ্বংসী হলো কেন?’ সবকথার শেষ কথাতো ক্ষমতায় যাওয়া। আর ক্ষমতায় যাওয়ার দরকারতো বারেক সাহেবের চেয়ে এই লোকগুলোর অনেক বেশি। বারেক সাহেবরাতো সরকারী লোকজন ম্যানেজ-ট্যানেজ করে ব্যবসা বাণিজ্য ভালোই চালাচ্ছেন। পুলিশের লাঠির বাড়ি এরাই খায়। হাজতের মেঝেতেও শুয়ে থাকে এরাই। বারেক সাহেবদেরতো পুলিশও পারলে সালাম না দিয়ে কথা বলেনা। তাহলে ওদের এমন ফুসে ওঠার কারনটা কি? এসব দেখার আর বোঝার কেউ কি নেই? দলটা কি লিল্লা বোর্ডিং হয়ে গেল? দলটাকে দেখার জন্য কোথাও কি কেউ নাই?
পত্রিকায় এসেছে একজন প্রভাবশালীর আত্মীয়ার নির্দেশে বৃহত্তর কুমিল্লার কোন একটা আসনের মনোন্নয়ন শেষ মুহুর্তে বদলে যাওয়াই নাকি গুলশানে এই পথনাটক মঞ্চায়নের মূল কারণ। এটা কিছু হলো? ভাবেন বারেক সাহেব। দলের এই বেহাল অবস্থায় মনটা খারাপ বারেক সাহেবের। ক্যান্টনমেন্টে ডেলিভারি আর তার পর সত্যি-মিথ্যা, জামাতি-বামাতি খিচুড়ীতে দলটাতো ভালোই বেড়ে উঠেছিল। এক চিমটে চীনপন্থী, এক মুঠ সুবিধাবাদী আর এক জগ পাকিস্তানপন্থী মিলে আওয়ামী লীগকেতো একুশটা বছর ক্ষমতার বাইরেও রেখে দিয়েছিল। মাঝে একবার ক্ষমতায় আসলেও টিকতে পারেনি ওরা।
কিন্তু তারপর কেমন যেন সব কিছু ছেড়া-বেড়া হয়ে গেল। সাজানো বাগান খেয়ে শেষ করলো চতুস্পদে। দশ বছর ধরে সরকারের বেতের বাড়ি খেয়েও দলের আলো টিম টিম করে জ্বালিয়ে রাখছিলেন তার মত কিছু লোক। না হয় একটু আপোষ আর কিছুটা সরকারী তোষামদীও ছিল। তাতে কি? দলটাতো ছিল। এখন হঠাৎ করে সরকারী দলের কিছু উচ্ছিস্ট আর অবশিষ্ট মিলে দলটাকে নিয়ে ফুটবল খেলায় মেতে উঠেছে। কি বলছে এরা আর করছেটাই বা কি তাল গোল পাচ্ছেন না বারেক সাহেবরা। এরা কখনো মুজিবকোট পরে দলীয় জনসভায় আওয়ামী শ্লোগান দিচ্ছে তো কখনো দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তি চাইতে ভুলে যাচ্ছে। সাথে যোগ হয়েছে জামাতের একদঙ্গল এমপি পদ প্রত্যাশি। দাড়িপাল্লা হারিয়ে কি সুন্দর করেই না এরা ধানের শীষের ঘাড়ে সাওয়ার হয়েছে।
বারেক সাহেব একা একা হিসেব করেছেন। যে যাই বলুক না কেন উচ্ছিষ্ট আর জামাতিরা মিলে নিয়ে গেছে একশর বেশি টিকেট। ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন এখন আর দেখেননা বারেক সাহেব। আশা ছিল বিরোধী দলে বসে পুলিশের লাঠি-গুতো এড়িয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য দলটাকে গুছিয়ে নেবেন। এখন সে আশায়ও গুঁড়েবালি। এখনতো দলটাই ছিনতাই হয়ে গেল। দল বিরোধী দলে গেলে দল গুছাবে ওরা! আর যদি বাইচান্স দল ক্ষমতায় চলেই আসে তাহলেতো ওদের সোনায় সোহাগা। আচ্ছা এই যে, আওয়ামী লীগাররা বলে চলেছে ক্ষমতায় তারা না আসলে দেশ যাবে উচ্ছন্নে আর আওয়ামী লীগাররা হবেন ঘর-বাড়ি ছাড়া, বিষয়টা কি অতই সহজ? দেশে কি টিকতে পারবেন বারেক সাহেবরাও? শুধুকি আওয়ামী লীগ, ডলা কি খাবেন না তার মত তার দলের মূলস্রোতের লোকগুলোও? এত কষ্টে এই যে এত দিনের সাজানো এতকিছ, ভোগ কি করা যাবে এসব? জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে নিচতলায় পার্ক করা প্রিয় প্রাডো আর কালো কুচকুচে মার্সিডিজটায় চোখ আটকায় বারেক সাহেবের। নিজের অজান্তেই বড় একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে ভেতর থেকে। এর চেয়ে ক্ষমতায় না আসাই মনে হয় ভালো।
আনমনেই স্বগোক্তি করেন বারেক সাহেব।
অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।