শীতে ঠাণ্ডা সেগুনবাগিচার ভোট!
১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:০৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সেগুনবাগিচা বালিকা হাইস্কুলের প্রধান ফটকের সামনেই নৌকার প্রার্থী রাশেদ খান মেননের নির্বাচনি কার্যালয়। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ এখন থেকেই নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে।
প্রচারণার দশম দিন বুধবার (১৯ ডিস্বের)। বেলা নেহায়াত কম হয়নি। ঘরির কাটা সব গুলো ঘর স্পর্শ করে ১২ নম্বর ঘরটি ছুঁই ছুঁই করছে। আর কিছুক্ষণ পরই পৌষের সূর্যটা লালচে হতে শুরু করবে। জেঁকে বসা শীতে জুবুথুবু ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনার এটাই উত্তম সময়। পড়ন্ত বেলায় হয়তো কাউকেই বাইরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু কই ভোট প্রার্থীরা?
নির্বাচনি প্রচারণার জন্য স্থাপিত ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয় বাইরে থেকে তালা মারা। গেটের ফাঁক দিয়ে দেখা যায়, ভেতরটা লোকজনশূন্য। চেয়ার-টেবিল, সামিয়ানা সব আছে ঠিক-ঠাক; নেই কেবল নেতাকর্মীর, সমর্থকদের ভিড়।
স্কুলের সামনেই নেয়ামত হোসেনের চায়ের দোকান। নির্বাচনি উত্তাপে তার চায়ের কেতলির ফুটন্ত পানির শব্দ এখন একটু বেশিই শোনে মানুষ। কিন্তু হঠাৎ জেঁকে বসা শীত সেগুন বাগিচা এলাকায় নির্বাচনি উত্তাপ যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে নেয়ামতের চা বিক্রির পরিমাণ।
নেয়ামত জানান, নির্বাচনি প্রচারণার জন্য সেগুন বাগিচার এই জায়গাটায় যুবলীগ কার্যালয় বানানোয় সব সময় লোকজনে সরগরম থাকে। সোমবার রাত পর্যন্ত এখানে ছিল প্রচুর লোক। কিন্তু শীতের তীব্রতা বাড়ায় আজ আর লোক আসেনি।
আশপাশের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুরু থেকেই সেগুনবাগিচা এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রচার-প্রচারণা বেশি। প্রচারণার ষষ্ঠ দিন মির্জা আব্বাসের ওপর সেগুনবাগিচা কাচাবাজার এলাকায় হামলা হওয়ায় ধানের শীষের পক্ষে আর কেউ ভোট চাইতে আসেনি।
হাতপাখার প্রার্থী ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী আবুল কাশেম, মই প্রতীকের প্রার্থী বাসদের শম্পা বসুর পক্ষে মাইকিং করা হলেও প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে কেউ ভোট চাইতে আসেননি। তবে নৌকার প্রার্থী রাশেদ খান মেনন মাঝে মধ্যেই সেগুনবাগিচা এলাকায় ভোটের জন্য ঢুঁ মারছেন। সর্বশেষ সোমবার বিকেলে সেগুনবাগিচা বালিকা হাইস্কুল এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি।
সেগুনবাগিচার মুদি দোকানি মোশারফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকালও নৌকার প্রার্থী এসে ভোট চেয়ে গেছেন। অন্য দলের কোনো প্রার্থীকে এখন পর্যন্ত দেখি নাই। শুনেছি, তাদের আসতে দেওয়া হয় না। কয়েকদিন আগে মির্জা আব্বাসের ওপর হামলা হওয়ায় ধানের শীষের কেউ এলাকায় ভোট চাইতে আসে না।’
ঘড়িতে তখন বেলা ১২ টা। সেগুনবাগিচা শিল্পকলা একাডেমি মোড়। সেখানে স্থাপিত রাশেদ খান মেননের আরেকটি নির্বাচনি ক্যাম্প। ২০ নম্বর ওয়ার্ড শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনি ক্যাম্প একেবারেই জনমানব শূন্য। ক্যাম্পের ভেতরে ঝালোর ঝুলানো ফাঁকা একটা টেবিল পড়ে আছে। নেই কোনো লোকজন, নেতাকর্মী, সমর্থক।
পাশেই ভ্যানের ওপর ডাব বিক্রির কাজে ব্যাস্ত সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘নৌকা ছাড়া এলাকায় আর কারো কোনো তৎপরতা নেই। হাতপাখা-মই মার্কায় মাঝে মাঝে মাইকিং করা হয়। কিন্তু প্রার্থীরা আসেন না ভোট চাওয়ার জন্য। ধানের শীষের প্রার্থী একদিন এসে হামলার শিকার হয়ে চলে গেছেন। আর আজ কেউ আসেননি ভোট চাওয়ার জন্য। মনে হয় শীতের কারণে কেউ বের হচ্ছেন না।’
শীতের কারণে সেগুনবাগিচা এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা না থাকলেও বৃষ্টিতে ছিড়ে যাওয়া পোস্টার নতুন করে লাগানো হয়েছে বলে মনে হলো। এলাকার সড়কগুলোর ওপর পাটের রশিতে ঝুলানো হাজার হাজার পোস্টার চোখে পড়েছে।
এই পোস্টারগুলোর অধিকাংশই নৌকার। তবে নৌকার পাশাপাশি হাতপাখার পোস্টার দেখা গেছে বিপুল পরিমাণে। মই প্রতীকের কিছুসংখ্যক পোস্টারও চোখে পড়েছে। নেই কেবল ধানের শীষের পোস্টার, নির্বাচনি কার্যালয় ও গণসংযোগ।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর