Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপির পোস্টার নেই, অভিযোগ আ.লীগের


২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৫:২৪

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ঢাকা-১২ সংসদীয় আসন জুড়েই নৌকার প্রচারণা চোখে পড়ছে। মাঝে মাঝে কোদাল মার্কায় জোনায়েদ সাকি আর হাত পাখা মার্কায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদারের পোস্টার-প্রচারণা চোখে পড়লেও এই আসনে বিএনপি প্রার্থী সাইফুল আলম নীরবের কোনো ধরনের পোস্টার বা প্রচারণা চোখেই পড়ছে না। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে তাদের ‘নীরব’ থাকতে হচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপি পোস্টার না লাগানো বা প্রচারণায় না নামার কৌশল নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা বলছেন, রাজধানীর মগবাজার-তেজগাঁওয়ের এই এলাকাটি বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে যুবদল নেতা সাইফুল আলম নীরবও স্থানীয়দের কাছে পরিচিত মুখ। কিন্তু নির্বাচন উপলক্ষে নীরবের কোনো প্রচারণা নেই, নেই তার পোস্টার।

বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা-১২ আসনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে এমনটাই দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, ১০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকেই এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে এই সংসদীয় আসনে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই ঢাকা-১২ আসন। এ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ৩৭০ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৮ জন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেব রয়েছেন বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বিএনপি থেকে রয়েছেন যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব। এছাড়া গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিও এই আসনের প্রার্থী। আরও রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ শওকত আলী হাওলাদার, মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির মো. নাসির উদ্দিন সরকার (লাঙ্গল) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাহীন খান (আম)।

বিজ্ঞাপন

পোস্টার-প্রচারণা-মাইকিং সবই নৌকার

২৪ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় আওয়ামী লীগের ১৪ ও ১৫ নম্বর ইউনিট কাজ করছ নির্বাচনি প্রচারণা কেন্দ্র হিসেবে। তার পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে বাঁশ, সামিয়ানা দিয়ে তৈরি হয়েছে নির্বাচনি প্রচারণা কেন্দ্র। সেই সঙ্গে রিকশায় করে চলছে মাইকিং। পুরো এলাকাজুড়ে কেবল নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের পোস্টার ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর পোস্টার বলতে গেলে নেই। বেগুনবাড়ি থেকে শুরু করে নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেছে মগবাজার রেলগেট থেকে মগবাজার চৌরাস্তা, মগবাজার ওয়্যারলেস, ডাক্তার গলিসহ নানা অলিগলি।

৭২ বছর বয়সী আব্দুল মতিনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারাগাঁওয়ে। কিন্তু প্রায় ৬০ বছর আগে তিনি এ এলাকাতে জায়গা কিনে বাড়ি করেছিলেন। ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন জানিয়ে আব্দুল মতিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা নৌকায় ভোট দিমু। আর কামাল সাহেব (আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল) এলাকাতে কাজ করছেন, বিএনপির কোনো বেইল নাই।’

আব্দুল মতিনের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন অনেকেই সেখানে এসে দাঁড়িয়েছেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ভিড় ঠেলে এসে এলাকার আরেক বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নৌকা-ধানের শীষ তো পরে, আগে চাই নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ। গত বছর তো ভোট দিতে গিয়া দেখি, আমার ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে। যদি এবারও তেমন হয়, তাইলে কাকে ভোট দেবো, সেই প্রশ্নই তো নাই। তাই সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যেন ভোট দিতে পারি, সেই পরিবেশ চাই।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এলাকাতে নীরবের (সাইফুল আলম নীরব) কোনো পোস্টার নেই। পুরো এলাকা ঘুরেও তার কোনো পোস্টার পাবেন না। এই যদি হয় নির্বাচনের আগের পরিবেশ তাহলে নির্বাচনের পরিবেশ কেমন হবে?— প্রশ্ন রাখেন আনোয়ারুল ইসলাম।

নিখোঁজ নীরব ও সমর্থকরা, ছিঁড়ে ফেলা হয় পোস্টার

‘যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি তার এলাকাতে নেই, নেই তার সমর্থকরাও। পুরো এলাকাতে তার পক্ষে নেই কোনো পোস্টার, প্রচারণা, মাইকিং। অস্থায়ী নির্বাচনি কেন্দ্র স্থাপন করা তো দূরের কথা।’

কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় এক চা বিক্রেতা, যদিও তিনি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বলেন, আমি বিএনপি করি না। কামাল সাহেব এলাকাতে কাজও করেছেন, ভোটও পাইবেন। কিন্তু এলাকার ভেতরে এগুলা দেখতে ভালা লাগে না। এলাকার সাধারণ মানুষ ঘরেও বসে থাকতে পারে না, জোর জবরদস্তি করে নৌকার মিছিলে যাইতে হয়।

স্থানীয় কয়েকজনের অভিযোগ, কয়েকদিন আগে বিএনপির পোস্টার লাগাতে গিয়েছিলেন দুই নারী। পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক শিক্ষার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি তো একটা বড় দল, তার দলের প্রার্থীরে এলাকাতে খুঁইজাই পাওয়া যাইব না, পাওয়া যাইব না তার কোনও সমর্থককেও। তারা তো রাস্তাতেই নামতে পারে না।’ কেন পারে না— জানতে চাইলে একজনের জবাব, রাস্তায় নামলেই পুলিশ ধরে, তাইলে কেমনে নামব?

এলাকাতেই কথা হয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তরুণ এই শিক্ষার্থীরা বলেন, এই এলাকাতে বিএনপির প্রার্থী কে, তাই তো জানি না। বিএনপির কোনো প্রচারণাও চোখে পড়ছে না। কিন্তু পুরো এলাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পোস্টার আর পোস্টার। অথচ দক্ষিণ বেগুনবাড়ি এলাকাতে বিএনপির কোনো মিছিল দেখেননি তারা।

পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শওকত আলী হাওলাদার ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিরও। শওকত আলী হাওলাদার সারাবাংলাকে বলেন, প্রচারণা করতে গিয়ে বাধার মুখে না পড়লেও মগবাজারের আমবাগানে লাগানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এক রাতে পোস্টার লাগানোর পর পরদিন সকালেই আর সেগুলো দেখা যায়নি।

কারা করেছে কিছু জানতে পেরেছেন কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এলাকায় নির্বাচন করছেন, জয়ের বিষয়ে কী ভাবছেন— জানতে চাইলে শওকত আলী বলেন, কামাল সাহেব ভালো মানুষ, সৎ লোক— এতে ভুল নেই। তাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমরা একটা আর্দশ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। কামাল সাহেব নির্বাচন করছেন দলীয় ইশতেহার নিয়ে। আমাদের লড়াই নীতি আদর্শের লড়াই, নৈতিকতা লড়াই। দু’টো জিনিস এক নয়, সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ দু’টো মিলবে না।

কেউ নেই বিএনপির

আওয়ামী লীগের ২৪তম ওয়ার্ডের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, এখানে প্রতিটি মানুষ আওয়ামী লীগের সমর্থক, বলা চলে নৌকার জোয়ার চলছে এখানে। এছাড়া তিনি (আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল) এলাকাতে অনেক কাজও করেছে, তাই নৌকা ছাড়া আর কাউকে এ এলাকার মানুষ ভোট দিতেই পারে না।

গৌরবের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, এই এলাকার সংসদ সদস্য যেহেতু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তাই মানুষ সুবিধাও পেয়েছে বেশি। কামাল সাহেবের কাছে তার এলাকার মানুষ সহযোগিতা পেয়েছেন, এলাকার যেকোনো মানুষ তার কাছে যেকোনো সময় যেতে পেরেছেন। তাই মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

পোস্টার-প্রচারণা না থাকা বিএনপির কৌশল!

এদিকে, নির্বাচনি এলাকায় ধানের শীষের কোনো পোস্টার বা প্রচারণামূলক কার্যক্রম না থাকাকে বিএনপির একটি কৌশল বলেও মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিএনপি চুপচাপ রয়েছে।

কথা হয় তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ, তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা-১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট ও সমন্বয়ক মো. আবদুর রশীদের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকা-১২ আসনে কামাল সাহেবের ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তাকে ঘিরে সকল পেশাজীবী, অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠন থেকে শুরু করে পুরো দল ঐক্যবদ্ধ।

এই আসনে বিএনপির পোস্টার নেই এবং পোস্টার লাগালেও ছিঁড়ে ফেলা হয়— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আবদুর রশীদ বলেন, ‘পুরো ঢাকা ঘুরে দেখেন, কোথাও তাদের পোস্টার নেই। শুধু এই আসন নয়, ধানের শীষের পোস্টার ঢাকা শহরেই দেখতে পাচ্ছি না আমরা। আপনারাই অনুসন্ধান করে দেখুন, ঢাকার ১৮টি আসনের ভেতরে কমপক্ষে ১২টি আসনে পোস্টার লাগাচ্ছে না বিএনপি।’

আবদুর রশীদ আরও বলেন, ‘এটা তারা করছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। যেহেতু বিদেশি পর্যবেক্ষকরা ঢাকায় আসবেন, তারা যেন ধানের শীষের পোস্টার না দেখতে পান, সে কারণেই তারা এই কৌশল নিয়েছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা নিজেরাই পোস্টার লাগাচ্ছে না।’

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় নির্বাচন নির্বাচন বিএনপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর