Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বস্তিবাসীর জন্য স্যাটেলাইট টাউনের প্রতিশ্রুতি নাজমুল হুদার


২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:০৩

নাজমুল হুদা

।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত হলেও ঢাকা-১৭ আসনে কড়াইল ও ভাসানটেকসহ কয়েকটি বস্তির অবস্থান। নির্বাচিত হলে এখানকার বস্তিবাসীর জীবনমান উন্নয়নে স্যাটেলাইট টাউন গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার উচ্ছেদে না গিয়ে বস্তিবাসীর মতামতের ভিত্তিতেই তাদের পুনর্বাসন করা হবে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনি প্রচারণায় বস্তিবাসীর জন্য এই প্রতিশ্রুতিকেই বিশেষ প্রাধান্য দিচ্ছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। এছাড়াও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার উপযোগী একটি সমাজ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাও লক্ষ্য তার।

মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে গুলশানের কালাচাঁদপুরে নির্বাচনি প্রচারণা শেষে সারাবাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এসব কথা বলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী লড়ছেন এ আসনে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ লাঙ্গল প্রতীকে এই আসনের প্রার্থী। যদিও মহাজোটের নৌকা প্রতীকেও প্রার্থী রয়েছে এই আসনে— তিনি চলচ্চিত্র নায়ক আকবর হোসেন পাঠান ওরফে ফারুক। এছাড়া ধানের শীষ প্রতীকে লড়াই করছেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। এই আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।

এর আগে, মহাজোটের হয়ে নিজ এলাকা ঢাকা-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে প্রার্থিতা চেয়েছিলেন তিনি। তবে ওই আসনে তার চাচা ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান পেয়েছেন নৌকা প্রতীক। নাজমুল হুদাও পরে ঢাকা-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেননি, বেছে নিয়েছেন গুলশান-বনানী এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৭ আসনকে। নির্বাচন কমিশনে নিজের দল তৃণমূল বিএনপির নিবন্ধন না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নির্বাচনে।

বিজ্ঞাপন

তিন লাখের বেশি ভোটারের এ আসনটিতে গুলশান-বনানী, ঢাকা সেনানিবাসের মতো অভিজাত এলাকা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে কড়াইল বস্তি, আদর্শ নগর বস্তি, টি অ্যান্ড টি কলোনি ও ভাসানটেক বস্তির অবস্থান। ভোটের যুদ্ধে এই বস্তিবাসীরাও বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ান। তাই তাই তাদের মনোযোগ কাড়তেই বস্তিবাসীদের নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন বলে জানান নাজমুল হুদা।

বস্তিবাসীরা বলছেন, গত ১০ বছরে বস্তির অনেক উন্নয়ন হলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ পানি ও গ্যাসের সমস্যা রয়েছে। মঙ্গলবারও (১৮ ডিসেম্বর) কয়েকটি বস্তি ঘুরলে বস্তিবাসীরা এসব অভিযোগই তুলে ধরেছেন। এর মধ্যেই নাজমুল হুদা জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত হতে পারলে বস্তিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করবেন।

মঙ্গলবার রাতে গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকায় নির্বাচনি প্রচার শেষে সারাবাংলার সঙ্গে খোলামেলা কথা হয় নাজমুল হুদার। তিনি মনে করছেন, তরুণ ভোটাররা তাকেই বেছে নেবেন এই আসনে।

এক প্রশ্নের উত্তরে সাবেক মন্ত্রী নাজমুল হুদা বলেন, এখানে অনেকেই আছেন যারা এনলাইটেড ভোটার, তারা তাদের বিবেচনা দিয়ে ভোটের সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা অবশ্যই একজন প্রার্থীর মূল্যায়ন করবেন বিভিন্ন ধরনের যোগ্যতার মাপকাঠিতে। সেদিক থেকে আমি আশাবাদী, যোগ্যতার মাপকাঠিতে তাদের পরীক্ষায় পাস করব।

উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্য প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের চেয়ে ভিন্ন কিছু রয়েছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক কিছু করার আছে। আমি জাতীয় কিছু এজেন্ডা আপনাদের সামনে দিয়েছি। এই এলাকার মানুষদের জন্য আবাসন প্রকল্প খুব গুরুত্বপূর্ণ। যারা বস্তিবাসী, তাদের প্রত্যেকেরই প্রত্যাশা আরও উন্নত জীবনের দিকে যাবে। এটার জন্য আমি চেষ্টা করব। বস্তির বদলে তাদের জন্য পাকা দালানে ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আছে আমার। একটা কমিউনিটি স্যাটেলাইট টাউনের মতো যদি যায়গা পাওয়া যায়, স্যাটেলাইট টাউন করে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। সেখানে ছোট ও নিম্নতম মজুরির যারা আছেন, তাদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা থাকবে। সুনির্দিষ্টভাবে যাদের চাকরি নেই বা বেকার, তাদের থাকার জন্যও বিভিন্ন ধরনের আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই ধরনের বিল্ডিং বা স্যাটেলাইট টাউন গ্রো করার পরিকল্পনা আছে আমার। শিক্ষা থেকে চিকিৎসাসেবা— সব ধরনের সাপোর্ট সেখানে থাকবে।’

তাহলে কি বস্তি উচ্ছেদের কোনো পরিকল্পনা আছে আপনার— এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হুদা বলেন, ‘উচ্ছেদের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এটা হচ্ছে সিম্পলি পুনর্বাসন। তাদের দালানে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা বস্তি ছেড়ে যাবে। আর এটা পর্যায়ক্রমে করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ভাসানটেকে আমি দেখেছি, স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ সিস্টেমগুলো উন্মুক্ত। এগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। আর যা কিছুই করা হোক না কেন, সেগুলো বস্তিবাসীর সঙ্গে আলোচনা করেই করা হবে।

নির্বাচনি প্রচারণায় কোনো বাধা পেয়েছেন কি না— জানতে চাইলে ঢাকা-১৭ আসনের স্বতন্ত্র এই প্রার্থী বলেন, ‘না, আমার বেলায় সেটা হয়নি এখন পর্যন্ত। যেহেতু কোনো ধরনের নোংরা রাজনীতিতে আমি বিশ্বাস করি না, তাই আমার আসলে কোনো ধরনের শত্রুও নেই।’

ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। দলটির সর্বকনিষ্ঠ স্থায়ী কমিটির সদস্যও হন। বিএনপি সরকারের আমলে তিনি তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০ সালে দলটি থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে। পরে অবশ্য দলের সদস্যপদ ফিরিয়েও দেওয়া হয়। ২০১২ সালে তিনি নিজেই বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন।

এবারের নির্বাচনি প্রচারণায় ভোটারদের কাছে শেষবারের মতো ভোট চেয়েছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। এর সূত্র ধরে এটাই তার শেষ নির্বাচন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার তিনি বলেন, ‘বয়স তো হয়ে গেছে। হায়াত-মওত তো আল্লাহর হাতে। এখন যতদিন বাঁচব, যতদিন সামর্থ্য থাকবে, ততদিনই গণতন্ত্রান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার ইচ্ছা থাকবে। সবকিছু নির্ভর করছে শারিরীক সক্ষমতার ওপর।’

এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতি আসনে গড়ে ছয় জন করে প্রার্থী থাকলেও ঢাকা-১৭ আসনে মহাজোট, ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১ জন। এর মধ্যে টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) এস এম আবুল কালাম আজাদ। ২০১২ সালে বিএনপি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এই দল গড়ে তুলেছিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। পরে তাকেই বহিষ্কার করা হয় দলটি থেকে। পরে তৃণমূল বিএনপি গড়ে তোলেন তিনি।

এই আসনের অন্য প্রার্থীরা হলেন— প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের আলী হায়দার (বাঘ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) এস এম আহসান হাবীব (মই), জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান (গোলাপ ফুল), মোহাম্মদ আবদুর রহিম (স্বতন্ত্র), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আমিনুল হক তালুকদার (হাতপাখা) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের লে. কর্নেল ডা. (অব.) এ কে এম সাইফুর রশিদ(কুলা)।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

নাজমুল হুদা পরিকল্পনা বস্তিবাসী স্যাটেলাইট টাউন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর