কক্সবাজারে মতবিনিময় সভায় প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ২২:০৩
।। ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
কক্সবাজার: কক্সবাজারের চারটি আসনের প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, ভাঙচুরসহ নানা অভিযোগের ঝড় তুলেছেন। বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভায় তারা এসব অভিযোগ জানান। জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের মহাজোটের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, বিরোধী দলের প্রার্থীর লোকজন আমার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নাজেহাল ও মারধর করছে। বিএনপির প্রার্থীর লোকজন খুবই উত্তেজিত অবস্থায় আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির প্রার্থী সবাইকে লাঠি হাতে নিতে বলেন। উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে সমর্থকরা উত্তেজিত হয়েছে।
এছাড়া, তার দলের এক নেতার মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ তুলেন।
একই আসনের বিএনপি প্রার্থী লুৎফর রহমান কাজল পাল্টা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, রামুতে আমাকে কোন অফিস করতে দেওয়া হয়নি। নির্বাচনি প্রচারণার গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আমাদের উপর হামলা করে উল্টো আমাদেরকে মামলা দেয়া হয়েছে। এরকম মামলার সংখ্যা ১১ টি। এসব মামলায় বিএনপির সাড়ে ৩ শ‘ লোকজনকে আসামি করা হয়েছে। এসব ঘটনার পর সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করাও মুশকিল।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের বিএনপি প্রার্থী হাসিনা আহমেদের প্রতিনিধি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা স্বপ্না বলেন, গণসংযোগ চলাকালে গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আহত বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হাসপাতালে দেখার পর হাসিনা আহমেদ থানায় গেলে সেখানে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। ওই সময় থানাতেই দুই রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। ডুলাহাজারায় গণ-সংযোগকালে হাসিনা আহমেদের উপর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন হামলা চালায়। এসময় ৩৫ জনের মত আমাদের নেতাকর্মী সমর্থক আহত হয়। এছাড়াও অনেক জায়গায় ফাঁকা গুলিবর্ষণ করার ঘটনা ঘটেছে।
একই আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাফর আলমের প্রতিনিধি মো. নুরুল আবছার বলেন, হাসিনা আহমেদ আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তৈরির জন্য থানার ভেতর থেকে নিজেই বের হননি।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) মহাজোটের প্রার্থী শাহিন আক্তারের পক্ষে তার স্বামী ও সাবেক আলোচিত সাংসদ আব্দুর রহমান বদি বলেন, বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী গতকালকেও একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এর আগেও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বারবার অনুরোধ করেছি যাতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিএনপির প্রার্থীর কারণে যেকোনো মুহূর্তে অঘটন ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই আমি অনুরোধ করছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অতীতেও তিনি এরকম ঘটনা ঘটিয়েছেন। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে এসব পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধে আপনার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
একই আসনে বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ওনার (বদি) দেয়া বক্তব্যটাকে আপনি তদন্ত করে আপনি একশনে যান জেলা প্রশাসক মহোদয়। আমরা মিথ্যের আশ্রয় নেই না। আপনার সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে দেখেন।
এছাড়াও সভায় হামলা, ভাঙচুর, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ নানান বিষয়ে অভিযোগ করে শাহজান চৌধুরী আরও বলেন, পুলিশ একজন প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করছে। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে একজন প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার জন্য তারা সিরিয়াস ভূমিকা পালন করছে। আমাদের ভোট না দেওয়ার জন্য তারা ভোটারদেরকে আহ্বান করছে। আমি এধরনের নজির কখনো দেখিনি। বিভিন্ন জায়গায় মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
সভায় রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে কক্সবাজারের নির্বাচনি পরিস্থিতি অনেক ভাল। আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে ইতোমধ্যে মাঠে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সবার অভিযোগগুলো বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সারাবাংলা/এনএইচ