Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সপ্তাহ পেরোলেও দেখা নেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কনকচাঁপার


২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:৫৬

।। রানা আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

সিরাজগঞ্জ: আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সদরের একাংশ) আসনটি। এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এখানেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে হেভিওয়েট মোহাম্মদ নাসিমের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন তিনি— এমনটিই প্রত্যাশা ছিল বিএনপির।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু প্রচারণা শুরুর পর কয়েকদিন সিরাজগঞ্জে অবস্থান করলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় একবারও যাননি কনকচাঁপা। শুধু তাই নয়, তার কোনো পোস্টার, ব্যানার বা ফেস্টুন— কিছুই নেই এলাকায়! সিরাজগঞ্জের এই আসনটিতে দলীয় প্রার্থীর অনুপস্থিতি নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেই চলছে আলোচনা-সমালোচনা। স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামতে মুখিয়ে থাকলেও খোদ প্রার্থীর দেখা না মেলায় তারা ক্ষোভও জানিয়েছেন। যদিও কনকচাঁপা বলছেন, হুমকি-ধমকির কারণে তিনি নির্বাচনি এলাকায় যেতে পারছেন না।

এদিকে, নির্বাচনি এলাকায় না গেলেও সিরাজগঞ্জ থেকে সাংবাদিক নিয়ে বগুড়ার একটি অভিজাত হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কনকচাঁপা। নিরাপত্তার দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে কয়েকটি গণমাধ্যমের কর্মীদের নিয়ে গেলেও বগুড়ার কোনো সাংবাদিককেও ডাকা হয়নি ওই সংবাদ সম্মেলনে।

বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১০ ডিসেম্বর থেকে রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা সিরাজগঞ্জে জেলা শহরের হোসেনপুর মহল্লায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বাসভবনে অবস্থান করছেন। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই। কাজিপুরে কনকচাঁপার বাড়ি না থাকায় কোথায় অবস্থান করে তিনি নির্বাচন করবেন, তা এখনও ঠিক করতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

কাজিপুর উপজেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা লাকী খাতুন সারাবাংলাকে বলেন, প্রার্থিতা ঘোষণার পর একবারও কনকচাঁপা এলাকায় আসেননি, ভোটও চাননি। আমাকে তো কাজিপুরের লোকজনই বলেন, লাকী তোমার কনকচাঁপা কোথায়? ভোট চাইতে আসেন না কেন? কোননোজবাব দিতে পারি না।

লাকী খাতুন আরও বলেন, গত কয়েকদিন আগে টুকু সাহেবের বাড়িতে আমাদের নিয়ে নির্বাচনি মিটিং করলেন কনকচাঁপা। গাড়ি ভাড়া করে নেতাকর্মীরা তার মিটিংয়ে এলেন, অথচ গাড়িভাড়ার টাকাও দেওয়া হয়নি। সেদিন অধিকাংশ কর্মীরা খাবার না পেয়ে রাগ করে চলে যান। ওই মিটিংয়ের পরও তিনি কাজিপুরে পা রাখেননি। আমি ও আমার স্বামী বলেছি, আপা আপনার সব পোস্টার আমরা লাগিয়ে দেবো। রক্তের বন্যা বয়ে গেলেও আমরা মাঠে নামব, আমরা ভোট দেবো। কিন্তু তিনি পোস্টারও দেননি, আমাদের সঙ্গেও আর কোনো ধরনের যোগাযোগ করেননি।

কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য ও বিআরডিবির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান বাবলু বলেন, আমাদের মতো আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে প্রার্থী না বললে কর্মীরা কিভাবে প্রচারণায় নামবে? আসলে উনি নির্বাচন করতে এসেছেন নাকি নাসিম সাহেবের প্রতিদ্বন্দ্বী— সেই সার্টিফিকেট নিতে এসেছেন, সেটা বোধগম্য নয়। কাজিপুরে উনার কোনো বাড়ি নেই। ২০১৪ সালে একবার নির্বাচন করতে তিনি কাজিপুরের সোনামুখী এলাকায় এক আওয়ামী লীগ পরিবারের বাড়িতে উঠেছিলেন। কাজিপুরের কে বিএনপি করেন, উনি তো চেনেন না। টুকু সাহেবের বাড়িতে প্রথম নির্বাচনি সভা হলো, সেখানে খাবার না পেয়ে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। পরে ২৫/৩০ জনকে আমি পুরি খাইয়ে বিদায় করেছি।

কাজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ২০১৪ সালে কনকচাঁপার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। ওই সময় আমি তার প্রোগ্রাম করে দিয়েছি। এবার দলীয় মনোনয়ন পেলেও আমার সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করেননি।

কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা বলেন, আমি নিজেও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। দল আমাকে না দিয়ে কনকচাঁপাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো ক্ষোভ নেই। তিনি এলাকায় এলে আমরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। গত সপ্তাহে ১৮টি ইউনিয়নের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ডেকে নিয়ে আমরা সিরাজগঞ্জে একটি সভা করেছি। শোনা যাচ্ছে, ২২ ডিসেম্বরের আগে তিনি কাজিপুরে আসবেন না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা বলেন, আমি ১০ ডিসেম্বর থেকে কাজিপুরের পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ দিয়ে ঘুরছি। কিন্তু হুমকি-ধমকিতে ভয়ে কাজিপুরে ঢুকতে পারছি না।

দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই— স্থানীয়দের এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি সব নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। অনেকেকেই ফোন দিয়েছি। দুয়েকজনকে ফোনে পাইনি। তাদের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করছি।

নির্বাচনি এলাকায় নিজের বাড়ি নেই স্বীকার করে তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুরে খালাত ভাইয়ের বাড়ি আছে। সেখান থেকেই নির্বাচন করব।

সারাবাংলা/এসএমএন/টিআর

কনকচাঁপা সিরাজগঞ্জ-১

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর