বস্তিবাসীরাও ফ্ল্যাটে থাকবেন, অঙ্গীকার শেখ হাসিনার
২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:০২
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বস্তিবাসীসহ নিম্ন আয়ের মানুষরাও যেন ফ্ল্যাটে থাকতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, এই এলাকায় বস্তিবাসী রয়েছেন। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কিন্তু আপনারা যে অবস্থায় বসবাস করছেন, এই অবস্থা থাকবে না। আপনারা যেন ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আমরা করে দেবো।
শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে গুলশান-২-এর ইয়ুথ ক্লাব মাঠে আওয়ামী লীগের এক নির্বাচনি জনসভায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। জনসভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত রাজধানীর সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চান তিনি।
আরও পড়ুন- ধানের শীষ মানেই দুর্নীতি, নৌকা মানে সমৃদ্ধি: শেখ হাসিনা
জনসভায় স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার অঙ্গীকার জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বহুতল ভবন করে সেখানে স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করব। সেইসব ফ্ল্যাট কেউ দৈনিক হিসেবে ভাড়া দিতে চাইলে দিতে পারবেন, সাপ্তাহিক হিসেবে ভাড়া দিতে চাইলেও দিতে পারবেন, মাস হিসেবে ভাড়া দিতে চাইলে সেটাও পারবেন। যে যেভাবে চান, সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা করব। আমাদের লক্ষ্য একটাই, ক্ষমতায় এলে নিম্ন আয়ের মানুষ যেন আরেকটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দেবো।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে যখন ক্ষমতায় আসি, তখন ঢাকা শহরে পানির অভাব ছিল। পানির জন্য হাহাকার ছিল। বিদ্যুতের সমস্যা ছিল। সবসময় লোডশেডিং হতো। রাস্তাঘাট ছিল ভাঙাচোরা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা পানির সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি, এখন আর পানির সমস্যা নাই। তবে আমি অনুরোধ করব, পানির যেন অপচয় না হয়।
তিনি আরও বলেন, আগে আট-দশ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হতো। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা করি, নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে বিদ্যুতের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। আমরা ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন রেখে গিয়েছিলাম, তারা ৩ হাজার ২শ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনে। সেখান থেকে শুরু করে আজ আমরা ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। আল্লাহর রহমতে এখন আর লোডশেডিং নেই। কিন্তু এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের ভর্তুকি দিতে হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচের টাকাও আমরা নেই না। তাই সবার কাছে অনুরোধ, বিদ্যুৎ যেন অপচয় না হয়। এতে বিদ্যুতেরও সাশ্রয় হবে, বিদ্যুতের বিলও কমবে।
আরও পড়ুন- ‘প্রিয় লোকেরাই তার নামে এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলা দিয়েছিল’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা ঢাকা শহরের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছি। গুলশান-বনানী থেকে শুরু করে অনেক এলাকাই আগে ছিল ইউনিয়ন। আমরা সব ইউনিয়নকে সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত করে দিয়েছি, যেন সব ইউনিয়নের মানুষ নাগরিক সুবিধা পায়। মানুষ যেন বেশি বেশি সেবা পায়, সেজন্য ঢাকা সিটিকে উত্তর ও দক্ষিণ— দুই সিটি করপোরেশনে ভাগ করে দিয়েছি। লক্ষ্য একটাই, মানুষ যেন নাগরিক সুবিধা পেতে পারে। যারা অর্থশালী, যারা বিত্তশালী, আমরা তাদের কথা চিন্তা করি না। আমরা চিন্তা করি নিম্নবিত্তদের কথা। তাদের কথা ভেবেই সুযোগ-সুবিধা তৈরিতে আমরা কর্মসূচি নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষের উন্নয়ন করা। একটা সময় ছিল, একজন দিনমজুর যা কামাই করতেন তা দিয়ে দুই-তিন কেজি চাল কিনতে পারতেন। আজ সেই অবস্থা নেই। একজন দিনমজুর এখন তার একদিনের কামাই দিয়ে ৮-১০ কেজি চাল কিনতে পারেন। সঙ্গে মাছ, মাংস কিনতে পারেন। এখন আর বাংলাদেশ ভিক্ষুকের দেশ নয়, বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। একসময় পোশাক শ্রমিকদের বেতন ছিল ১৬শ টাকা, আমরা সেটাকে ৮ হাজার টাকা করে দিয়েছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আমরা এসব করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি, এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই।
আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিচ্ছি। আমরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছি। শিক্ষাকে বহুমুখী করে দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি, যেন তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। তরুণরা আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যেন করতে পারে, আর ১০ জনকে যেন চাকরি দিতে পারে— সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। মানুষের সার্বিক উন্নয়ন, মানুষকে সুন্দর একটি জীবন দেওয়া— সেটাই আমাদের লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।
আগামীতে আরও উন্নত দেশ গড়ার অঙ্গীকার জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের ইশতেহারে বলেছি, আমরা দুর্নীতি দূর করব, তরুণদের উন্নয়ন করব। তাদের জন্য খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক চর্চা, শিক্ষা, কর্মসংস্থানসহ সব সুযোগ করে দিয়েছি। আমরা তরুণদের সুযোগ করে দিয়েছি। আমরা তরুণ সমাজের শক্তি, তাদের মেধা, তাদের জ্ঞান কাজে লাগাব। তাদের মেধা, জ্ঞান দিয়েই আগামীতে দেশ গড়ব।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আমরা নৌকা মার্কায় ভোট চাই। এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই জনগণ মাতৃভাষায়, বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। এই মার্কায় ভোট দিয়েই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এই মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই সবার জীবনমান উন্নত হচ্ছে, লেখাপড়া, উচ্চশিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই মার্কাতেই ভোট দিয়েছেন বলেই পানির সমস্যা, বিদ্যুতের সমস্যা দূর হয়েছে, আপনারা ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছেন।
জনসভার বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনা ঢাকা-১১, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১৬, ঢাকা-১৭, ঢাকা-১৮ ও ঢাকা-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। এসময় তিনি এসব প্রার্থীকে নিজ নিজ আসনে জয়ী করতে আরও একবার সবার ভোট প্রার্থনা করেন।
সারাবাংলা/টিআর