Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিরামহীন প্রচার-প্রচারণায় উৎসবের আমেজ চট্টগ্রামে


২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ২০:০৮

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ‍ব্যুরো: ভোটের ৯ দিন আগে এসে বিরামহীন প্রচার-প্রচারণায় উৎসবের জনপদে পরিণত হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। মিছিল-স্লোগানে, গানে-গানে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা মুখরিত করে রেখেছেন নৌকা মার্কার প্রার্থীদের সমর্থকরা। প্রশাসনের কাছ থেকে বাধা পাওয়ার অভিযোগ করলেও গণসংযোগে, প্রচার-প্রচারণায় পিছিয়ে নেই ধানের শীষের প্রার্থীরাও। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীরাও যাচ্ছেন মানুষের দুয়ারে-দুয়ারে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিদিনই অব্যাহত গণসংযোগ, মিছিল-সভা চললেও ছুটির দিন শুক্রবারে এসে এই প্রচারণা ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে বন্দর নগরীতে ভোট উৎসবের আমেজও বাড়ছে।

আওয়ামী লীগ
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নে শুক্রবার সকাল থেকে প্রচারণা শুরু করেন। ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে-গ্রামে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও গাড়িতে করে প্রচারণা চালাচ্ছেন দুইবারের সংসদ সদস্য সামশুল। এর মধ্যে তিনি বিভিন্ন পথসভায়ও যোগ দিচ্ছেন। সামশুলের পক্ষে জিরি ইউনিয়নে প্রচারণা চালাচ্ছেন ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহানের নেতৃত্বে ১৪ দল।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শুক্রবার সকালে নগরীর শহীদ মিনারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ‘নৌকার বিজয় অভিযান যাত্রা’র উদ্বোধন করেন। এসময় নওফেল বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারকদের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছেন। আমরা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য প্রতীক্ষা করছি। চারদিক থেকে যেভাবে নৌকার জোয়ার উঠেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অবশ্যই জয়ী হবে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী ডা. মো. আফছারুল আমীন তার নির্বাচনি এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশী উর্দুভাষীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসময় তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে আটকে পড়া পাকিস্তানি উর্দুভাষীদের আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের নাগরিকের মর্যাদা দান করেছেন। এই জনগোষ্ঠী মানবেতর জীবনযাপন করত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামসহ সারাদেশে উর্দুভাষীদের উন্নত জীবনযাপনের জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব উন্নয়ন কাজের ধারা অব্যাহত রাখতে উর্দুভাষী ভোটারদের কাছে নৌকায় ভোট প্রত্যাশা করছি।’

এসময় উর্দুভাষীদের পক্ষে ওয়াজিদ আলী, সরদার বাহাদুর নগর স্কুল ক্যাম্পের এডহক কমিটির চেয়ারম্যান মো. সাহাবুদ্দিন বক্তব্য রাখেন।

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর) আসনের প্রার্থী এম এ লতিফ সকাল ১০টায় নগরীর দক্ষিণ মধ্য হালিশহর ওয়ার্ডের মেহের আফজল স্কুল প্রাঙ্গন থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। প্রচারণার মিছিল নিয়ে লতিফের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাকের আলী ফকিরের টেক-কলসী দিঘীর পাড়-ইপিজেড-বন্দরটিলা আলীশাহ মসজিদ পর্যন্ত যান। বিকেলে তিনি পশ্চিম গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় গণসংযোগ করেন।

এসময় লতিফের সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শেখ মাহমুদ ইসহাক, মুক্তিযোদ্ধা এনামূল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, জিয়াউল হক সুমন,সাবেক কাউন্সিলর মো. আসলাম ছিলেন।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের প্রার্থী মঈনউদ্দিন খান বাদল দিনভর বোয়ালখালী পৌরসভা, পশ্চিম গোমদন্ডী, বেঙ্গুরা, তালতলী, শাকপুরা ও আমুচিয়ায় গণসংযোগ করেছেন। এসময় তার সঙ্গে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদও ছিলেন।

এছাড়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের সমর্থনে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগির মোড়ে সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা সমাবেশ করেছেন। এতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের নৌকার প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সংস্কৃতিকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সাংবাদিকদের সংগঠন ‘উজ্জীবীত ৭১’র আয়োজনে নৌকার প্রতীকের প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারাভিযানের উদ্বোধন হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এর উদ্বোধন করেন।

বিএনপি
চট্টগ্রাম-১০ আসনের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান শুক্রবার দুপুরে নগরীর উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেছেন। এসময় তিনি এক পথসভায় বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। ওনার কথা ও কাজে কোনো মিল নেই। তিনি চোরকে চুরি করতে বলেন আবার গৃহস্থকে সজাগ থাকতে বলেন। এই নীতি অবলম্বন করে তিনি একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’

নোমান বলেন, ‘সিইসির কথা ও কাজে যদি মিল থাকতো তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে সবাই সমান সুযোগ পেত। কিন্তু এখনো পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। মানুষ বর্তমান দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তির প্রহর গুনছে। ৩০ ডিসেম্বর ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে এই দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে।’

নোমানের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন- মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুস সাত্তার সরোয়ার, যুগ্ম সম্পাদক আহমেদুল আলম রাসেল, কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের যুগ্ম সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার।

চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের প্রার্থী আবু সুফিয়ান বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়নে গণসংযোগ করেছেন। তিনি কধুরখীল মুসলিম হাই স্কুল, জলিল আম্বিয়া কলেজ, খোকার দোকান, ইমাম নগর, পূর্ব কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়, বেপারী পাড়া, নাজির দীঘির পাড়, বৈলতলী মাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চান।

এসময় পথসভায় আবু সুফিয়ান বলেন, ‘ধানের শীষ হচ্ছে জনগণের নির্ভরতার প্রতীক। ধানের শীষ উন্নয়ন ও শান্তির প্রতীক। মানুষ ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। সরকার জন রায় ছিনিয়ে নিতে পারে। এজন্য জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।’

এসময় নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক শওকত আলম, বোয়ালখালী পৌরসভা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইসহাক চৌধুরী ছিলেন।

চট্টগ্রাম-৯ আসনের প্রার্থী কারাবন্দী ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদে মুসল্লীদের কাছে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রায় দুই শতাধিক মসজিদে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

এসময় নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম সাইফুল আলমসহ দলের নেতারা ছিলেন।

বাম গণতান্ত্রিক জোট
চট্টগ্রাম-১০ আসনের টাইগার পাস, রেলওয়ে কলোনি, বাটালি হিল এলাকায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রার্থী হাসান মারুফ রুমি শুক্রবার দিনভর প্রচারণা চালিয়েছেন। এসময় তিনি সন্ত্রাসী-লুটেরা, কালো টাকার মালিক, পেশীশক্তি নির্ভর প্রার্থীর বিপরীতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

চট্টগ্রাম-৯ আসনে সিপিবি’র প্রার্থী মৃণাল চৌধুরী শুক্রবার বিকেল থেকে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন। এসময় তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বাংলাদেশ গড়তে সিপিবি’র প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

কাস্তে মার্কার প্রার্থী মৃণাল চৌধুরী বিভিন্ন পথসভায় বলেন, ‘এক জোট বলছে ভিশন-৩০। আরেক জোট বলছে ভিশন-৪১। এগুলো হচ্ছে ক্ষমতায় যাবার ভিশন। আমরা বলছি ভিশন ৭১। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি এবং চেতনাই হচ্ছে আমাদের মূল ভিশন, ৩০-৪১ বলে যেটা থেকে তারা দূরে সরে গেছে।’

এছাড়া ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সিনিয়র সাংবাদিক বদিউল আলম আর নেই
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩১

সম্পর্কিত খবর