ঠাঁই নাই ঢাকা শিশু হাসপাতালে
২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:২৫
।। জাকিয়া আহমেদ,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ১১ বছরের সিয়াম খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর শীতের তীব্রতায় বেড়ে যায় এই খিঁচুনি। এর আগের বছর গুলোতে চাঁদপুরে স্থানীয় চিকিৎসক চিকিৎসা দিলেও এবার আর তাতে কাজ হয়নি। সেখান উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে( ঢামেক) নেওয়া হয় । এসময় চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে রাখার পরামর্শ দেন। কিন্তু ঢামেক হাসপাতালে আইসিইউ সংকটের কারণে গত ১৭ ডিসেম্বর সিয়ামকে ঢাকা শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়।
সিয়ামের মা হনুফা বেগম বলেন, তার তিন সন্তানের মধ্যে সিয়াম দ্বিতীয়। স্বাভাবিক প্রসবে জন্ম হয় সিয়ামের। কিন্তু সেসময় মাথায় আঘাত পাওয়াতে তিন মাস বয়সে সন্তানের অসুস্থতা ধরা পরে। ১৪ মাস বয়সেই তারা জানতে পারেন সিয়াম খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত। সে সময় থেকেই শীতের মৌসুমে সিয়ামকে নিয়ে তার দূর্ভোগ বেশি হয়। এ সময়ে ছেলেটা কেমন কুঁকড়ে যায়-এতো ভয়ে থাকি শীতের সময়টাতে, মায়ের মনতো কেবল ‘কু’ ডাকে -বলেন হনুফা বেগম।
শুক্রবার ( ২১ ডিসেম্বর) শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত ঢাকা শিশু হাসপাতাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শিশু হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে, কেবিনে, এনআইসিউতে একটি বেডও খালি নেই। বরং বেড না দিতে পারায় অনেক রোগীকে ফেরত দিতে হচ্ছে বলে জানালেন চিকিৎসকরা।
গাজীপুর থেকে নাসির উদ্দিন এসেছেন শ্বাসকষ্ট এবং নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত ৩ মাসের ছেলে আযানকে নিয়ে। নাসির উদ্দিন বলেন, তিন চার দিন ধরে সমস্যা, প্রথমে আযানকে ভর্তি করানো হয় মিরপুরের একটি হাসপাতালে। সেখান থেকে চিকিৎসকরা আইসিইউতে রাখার পরামর্শ দিলেও ওই হাসাতালে আইসিইউ না থাকায় ছেলে আযানকে নিয়ে আসেন শিশু হাসপাতালে। কিন্তু এখানেও আইসিইউ খালি না পাওয়ায় সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসা হচ্ছে আযানের।
চিকিৎসকরা জানান, শীত মৌসুমে সাধারণত শিশুরা কমন কোল্ড, নিউমোনিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, ডায়রিয়াতেই বেশি আক্রান্ত হয়। এবারে ডায়রিয়াতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। খিঁচুনি, মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যাও কম নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, শীতের সঙ্গে অপুষ্টিও শিশুদের আক্রান্ত হবার অন্যতম কারণ। শিশুদের শরীরে এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, সেই সঙ্গে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত যারা রয়েছেন যারা সচেতনতার অভাবেই শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তানজিলা আফরিন সারাবাংলাকে বলেন, শিশুরা এবারে নিউমোনিয়া, ব্রংকিউলাইসটিস ও ডায়রিয়াতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আর এবারে শীতের তীব্রতায় রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে বলে জানান তিনি। প্রতিদিনই শিশুরা ভর্তি হচ্ছে বরং, হাসপাতালে সিট না পেয়ে অনেকে ফেরত যেতে বাধ্য হচ্ছে বলেও জানান।
তিনি বলেন, শীতের শুরুতেই শিশুরা সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয় বেশি, কিন্তু তার সঠিক চিকিৎসা না করানো হলে সেটি নিউমোনিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমাতে পরিণত হয়। আর এর সঙ্গে রয়েছে অপুষ্টি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাহমিনা হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, হঠাৎ গরম থেকে শীতের তীব্রতায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আবার এসময়টাতে শিশুদের যেভাবে পোশাক পরানো দরকার সেখানেও বাবা-মায়ের অসচেতনতা রয়েছে।
আবার ঘুমের মধ্যে শিশুরা যখন টয়লেট করে তখন সেগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। কাথা বদলাতে দেরি হলে সেখান থেকেও শিশুরা আক্রান্ত হয়। মাথা ঢাকা থাকে না, হাত এবং পায়ের পাতা খোলা থাকে, খোলা বাতাসে গোসল করানো, কুসুম গরম পানি গোসলের সময় ব্যবহার না করা এসবও শিশুদের আক্রান্ত হবার অন্যতম কারণ বলেন ডা. তাহমিনা।
এসময়টায় শিশুদের সুরক্ষা দিতে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে, এসময় একটু অবহেলাতেই সামান্য জ্বর-সর্দি নিউমোনিয়া বা ব্রংকিউলাইটিসে রূপ নিতে পারে বলেন তিনি।
গ্রীণ লাইফ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের প্রধান ডা. রাকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, শীতের সময়ে শিশুদের যেমন ঠাণ্ডাজনিত রোগের সম্ভবনা বেড়ে যায়, তেমনি কমে যায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাই এ সময়ে শিশুদের বিশেষ সতর্কতায় রাখতে হবে।
রাকিব উদ্দিন আহমেদ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মায়ের বুকের দুধ পান করানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরমর্শ দেন। তিনি বলেন, জন্মের পরপরই শিশুকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে, ব্রেস্ট ফিডিং করাতে হবে। মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুর পুষ্টির অভাব হবে না । একইসঙ্গে বয়স অনুযায়ী অন্যান্য খাবারও খাওয়াতে হবে। পূরণ করতে হবে শিশুর সবগুলো টিকা। এছাড়া
সেই সঙ্গে শিশুদের শীতের বাতাস, ধুলা ও ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার থেকে দূরে রাখতে হবে বলেন ডা. রাকিব উদ্দিন আহমেদ।
সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ