খাগড়াছড়িতে জমে উঠছে চতুর্মুখী ভোটের লড়াই
২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১১:৩০
।। ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট।।
খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটের লড়াই জমে উঠেছে। সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপির পাশাপাশি নির্বাচনে অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিপিএফ)। এছাড়া ভোটের ময়দানে থাকছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলেয়মান আলম শেঠ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অবদুল জব্বার গাজী।
নির্বাচনকে সামনে রেখে দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। সকাল থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ভোটারের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। তবে এখনো প্রকাশ্যে মাঠে নামেনি আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী। সীমিত প্রচারণা রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর।
২৬৯৯ বর্গ কিলোমিটারের পাহাড়ি জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৪ জন। নির্বাচনে জয়ের বড় নিয়ামক পাহাড়ি বাঙালি নির্বিশেষ সর্মথন। পাহাড়ি বাঙালি উভয়ের সমর্থন লাভ করতে পারলেই কাঙ্ক্ষিত জয় মিলতে পারে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটারের খাগড়াছড়ি ২৯৮নং আসনে বইছে ভোটের হাওয়া। প্রার্থীদের মধ্যে চলছে বিভিন্ন হোমওয়ার্ক। কে হবে আগামীর সংসদ সদস্য সেই নিয়ে রয়েছে ব্যাপক কৌতুহল। অন্যান্য জেলার তুলনায় পাহাড়ের ভিন্ন বাস্তবতার কারণে এখানকার রাজনৈতিক সমীরকণ অত্যন্ত জটিল। চার লাখের অধিক ভোটারের এই জেলা লড়াইয়ে নামবে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বিএনপির শহিদুল ইসলাম ভূইয়া, ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী নতুন কুমার চাকমা এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলেয়মান আলম শেঠ। চার দলের কম বেশি জনসর্মথন থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্ধিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মাঝে।
জানা গেছে, ১৯৭০ সালে তিন পার্বত্য জেলা মিলে একটি আসন ছিল। সেই সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে আসনটিতে জয়লাভ করেন জাসদ (আসম আবদুর রব) প্রার্থী উপেন্দ্র লাল চাকমা, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) প্রার্থী একেএম আলিম উল্ল্যাহ, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কল্প রঞ্জন চাকমা, ২০০১ ও ২০০৬ সালে বিএনপির প্রার্থী ওয়াদুদ ভুইয়া, ২০০৮ সালে যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা জয়লাভ করেন।
স্বাধীনতার পর থেকে বিগত দশটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে সর্বাধিক ৪ বার নির্বাচিত হয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আসনটি জয়ে ভালো অবস্থানে থাকলেও বিএনপি ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় আওয়ামী লীগের জন্য বুমেরাং হতে পারে নির্বাচনের ফলাফল।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা জয়লাভ করেন। নির্বাচনে তিনি ৯৯,০৫৮ ভোট পেয়ে ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারী আত্মবিশ্বাসী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
তিনি বলেন,‘খাগড়াছড়ি গত এক দশকে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। খাগড়াছড়িবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। সড়কে বেইলী ব্রিজের জায়গায় পাকা সেতু বসেছে। প্রত্যেক উপজেলায় ফায়ার সির্ভিস স্থাপিত হয়েছে। প্রতি উপজেলায় একটি করে কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। এভাবে এই সরকারের আমলের অভাবনীয় উন্নয়নের কারণে মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিবে। এছাড়া সোলারের মাধ্যমে দুর্গম এলাকাও আলোকিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী বিপরীতে রয়েছে বিএনপি তুলনামূলক নবীন প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া (ফরহাদ)। ২০০১ ও ২০০৬ সালে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে নির্বাচিত হন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইঁয়া। তিনি একাধারে উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু দুনীর্তি মামলার সাজার কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না ওয়াদুদ ভূইঁয়া। নির্বাচনে ওয়াদুদ ভূইঁয়া অংশ নিতে না পারার কারণে কিছুটা হোচট খায় বিএনপি। তবে দলের প্রার্থী হিসেবে ওয়াদুদ ভূইঁয়ার ভাতিজা শহীদুল ইসলাম ভূইঁয়াকে ফরহাদকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। ফরহাদ সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার অংশ নিলেও তিনি রামগড় উপজেলার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ।
বিএনপি’র প্রার্থী ফরহাদ জানান,’খাগড়াছড়ি বিএনপির দুর্গ। আমার চাচা ওয়াদুদ ভূইঁয়ার নেতৃত্ব জেলা বিএনপির সাংগঠনিকভাবে ব্যাপক বিস্তৃত। ফলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হলে মানুষ ধানের শীর্ষকে জয়ী করবে। এই মুহূর্তে সুষ্ঠ নির্বাচনই বড় চ্যালেঞ্জ।’
১৯৯৮ সালে শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে জন্ম নেয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ )। দূরবর্তী ও দুর্গম এলাকায় বিপুল ভোটার থাকলেও সেসব স্থানে আ’লীগ বা বিএনপির তেমন প্রভাব নেই। ফলে ভোটার ব্যবধান গড়ে দিবে দুর্গম পাহাড়ি অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলো। নির্বাচনে ইউপিডিএফ যে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিত গড়ে তুলবে সেই বিষয়ে কোন দ্বিধা নেই।
ইউপিডিএফ এর মুখপাত্র মাইকেল চাকমা জানান, ‘নির্বাচন নিয়ে আমরা শতভাগ শঙ্কা করছি। ইউপিডিএফ সমর্থিত জনপ্রতিনিধিসহ নেতাকর্মীদের চাপে রাখার জন্য হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া তিনি প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখলের আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন,‘বিগত নির্বাচনে ইউপিডিএফ ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন,‘ যদি দৈবক্রমে জনগণ তার ভোট সুষ্ঠুভাবে দিতে পারে তবে ইউপিডিএফ জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’
খাগড়াছড়ি জেলায় একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৯টি উপজেলায় ১৮৭ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে। এর মধ্যে তিনটি দুর্গম কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে হেলিকপ্টার। মোট ভোটরার ৪ লাখ ৪১ হাজার ৭৪৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২৬ হাজার ৪৯১ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৬ জন।
সারাবাংলা/এমএইচ