Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিরাজগঞ্জ-৩: নৌকায় নতুন প্রার্থী নিয়ে গুঞ্জন, নির্ভার বিএনপি


২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:১১

।। রানা আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনে নৌকা প্রতীকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. আব্দুল আজিজ। চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত হলেও রাজনীতির মাঠে পদচারণা না থাকায় তাকে ভোটাররা কীভাবে গ্রহণ করবেন, তা নিয়ে রয়েছে খানিকটা সংশয়। অন্যদিকে, বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনটিতে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসন থেকে একাধিকবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান তালুকদার। তাকেই প্রার্থী হিসেবে পেয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকটাই নির্ভর রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মান্নান তালুকদারকে হারিয়ে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন ইসহাক হোসেন তালুকদার। দশম জাতীয় নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছিলেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তবে তার মৃত্যুর পর ম ম আমজাদ হোসেন মিলন উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে আসেন। এই আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বর্তমান এই সংসদ সদস্য। পাশাপাশি ইসহাক হোসেন তালুকদারের ছেলে ইমন তালুকদারও ছিলেন মনোনয়নের দৌড়ে। তবে তাদের পেছেনে ফেলে এই আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় ডা. আব্দুল আজিজকে।

স্থানীয়রা বলছেন, চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদানের জন্য দেশে-বিদেশে সুনাম রয়েছে ডা. আজিজের। তবে রাজনীতির মাঠে পদচারণা না থাকায় ভোটের মাঠে তিনি অপরিচিত মুখ। এ নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে জল্পনা-কল্পনা। আর দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, নতুন মুখ হওয়ায় ভোটারদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। নানা জনে নানা মন্তব্যও করছেন। এ কারণে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রায়গঞ্জ-তাড়াশ আসনটি ধরে রাখা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থাকতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, স্থানীয় নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, ডা. আজিজের প্রচারণায় দলের পুরনো নেতাকর্মীরাও অংশ নিচ্ছেন না। নতুন মুখ নিয়েই প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। আর রায়গঞ্জ-তাড়াশের ভোটারদের অনেকেই বলছেন, ডা. আব্দুল আজিজকে তারা কখনও দেখেননি। এখনও নির্বাচনি এলাকাতেও যাননি তিনি।

তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাচ্চু জানান, ভোটের মাঠে অভিজ্ঞ ও পরিচিত মুখ নিয়ে শক্ত অবস্থান গড়া যায়। কিন্তু অপরিচিত মুখ নিয়ে ভোটের মাঠে লড়াই করে জেতা খুবই কষ্টকর।

তিনি বলেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. আব্দুল আজিজ অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। কিন্তু রায়গঞ্জ-তাড়াশে তার পরিচিতি নেই। সাধারণ ভোটাররা তাকে চেনেন না। অন্যদিকে, বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নান তালুকদার এই আসনে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। তিনি এখানকার হেভিওয়েট প্রার্থী। তারপরও জননেত্রী শেখ হাসিনা ডা. আজিজকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব নৌকার প্রার্থীকেই বিজয়ী করতে।

সলঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফনি ভূষন পোদ্দার জানান, বর্তমান সংসদ সদস্য ম ম আমজাদ হোসেন মিলন মনোনয়ন না পেলেও সবাইকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আমরা ডা. আজিজের পক্ষে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছি। ডা. আজিজ এলাকায় এসেছেন। বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। তিনি খুব ভালো মানুষ। আমরা তাকে নিয়ে আশাবাদী।

স্থানীয়রা বলছেন, এই আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোট প্রায় সমান সমান। এর বাইরে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভাসমান ভোট আছে। এই ভোটগুলোই নির্ধারক হয়ে দাঁড়ায়। ফনি ভূষন পোদ্দার বলেন, নতুন মুখ নিয়ে ভাসমান ভোটারদের ভোট পাওয়া কষ্টকর। তবে তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, এটাই তার বড় পরিচয়। আমরা দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে চেষ্টার কোনো ঘাটতি রাখব না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আব্দুল আজিজ সারাবাংলাকে বলেন, আমি এলাকায় খুব বেশি না গেলেও বিভিন্ন সময় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর নিয়েছি। তাই মানুষ আমাকে একেবারে চেনে না, বিষয়টি এমন নয়।

দলের মধ্যে কোনো ধরনের কোন্দল রয়েছে কি না— সে বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আজিজ বলেন, দলের ভেতরে কোন্দল ছিল। আমি মনোনয়ন পাওয়ার পর কোন্দল ভুলে সবাই আমার সঙ্গেই কাজ করছেন। দলের সবার কাছ থেকেই সহযোগিতা পাচ্ছি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে উন্নত করছে। সবদিকে বিবেচনা করে সাধারণ ভোটাররা এবার নৌকায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন বলে আমি আশাবাদী।

এদিকে, পুরনো সৈনিককেই এই আসনে প্রার্থী পেয়ে খুশি বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. আজিজের বিরুদ্ধে মান্নান তালুকদার শক্তিশালী প্রার্থী। সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষের প্রার্থীই জয়ী হবেন।

তবে নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ আব্দুল মান্নান তালুকদারের। তিনি বলেন, আমাকে প্রতিনিয়তই বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের মেরে আহত করা হচ্ছে। তারপরও সাধারণ ভোটররা আমাকে চায় এবং তারা আমার সঙ্গেই আছেন।

জয়ের বিষয়ে আশাবাদী জানিয়ে ধানের শীষের এই প্রার্থী বলেন, রায়গঞ্জ-তাড়াশ বিএনপির দুর্গ হিসাবে পরিচিত। এ আসন থেকে আমাকে বারবার নির্বাচিত করেছে জনগণ। এবারও জনগণ আমাকেই চায়। বিপুল ভোটের ব্যবধানে এবার আমাকে জয়যুক্ত করবেন বলে মনে করছি।

উল্লেখ্য, সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ-সলঙ্গা) আসনটি ১৯৯১ সাল থেকেই ছিল বিএনপির দখলে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে টানা তিনবার এই আসন থেকে জয়ী হন বিএনপির আব্দুল মান্নান তালুকদার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাকে হারিয়ে জয় পান আওয়ামী লীগের ইসহাক হোসেন তালুকদার। ২০১৪ সালেও তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। পরে তিনি মারা গেলে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন। আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৭  হাজার ৫৩৩ জন।

সারাবাংলা/টিআর

একাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রার্থী ভোটার সিরাজগঞ্জ

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর