সব প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারে জমজমাট ঢাকা-৯
২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:১২
।। আব্দুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: প্রধান দুই দলের প্রার্থীসহ সবগুলো দলের প্রার্থীদের সরব উপস্থিতিতে জমে উঠেছে ঢাকা-৯ নির্বাচনি এলাকা।
অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে সকাল থেকে রাত অবধি নির্বাচনি প্রচা-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। একের পর এক বিভিন্ন প্রার্থীর নির্বাচনি মিছিলে জমজমাট হয়ে উঠছে ঢাকা-৯-এর নির্বাচনি এলাকা।
জনসংযোগ, ঘরোয়া মিটিং, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিংসহ ভোটারদের কাছে গিয়ে নিজ নিজ দলের পক্ষে অবিরাম প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থীদের কর্মীরা। ভোটারদের জানাচ্ছেন এলাকার উন্নয়নে প্রার্থীদের দেওয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিগুলোও কথা।
শনিবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর খিলগাওঁ, বাসাবো ও মুগদা এলাকা ঘুরে দেখা যায় এসব দৃশ্য।
আজ সকাল সাতটায় সবুজবাগ থানার দক্ষিণগাঁও এলাকা থেকে নির্বাচনি প্রচার শুরু করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী।
অন্যদিকে সকাল ১১টার দিকে বিশাল মিছিল নিয়ে নির্বাচনি প্রচারে নামেন বিএনপি প্রার্থী আফরোজা আব্বাস। এরপর তিনি খিলগাঁও থানার সিপাহীবাগ, তিলপা পাড়া, উত্তর ও দক্ষিণ গোড়ান এলাকার ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।
এ সময় অন্যান্য প্রার্থীদের পক্ষ থেকেও মাইকিং করে ভোট চাইতে দেখা যায়।
এসব এলাকার ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের নির্বাচনি আমেজ তৈরি হয়েছে বলেও জানা গেছে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে।
তিলপা পাড়ার বাসিন্দা মুদি দোকানদার আব্দুল আউয়াল জালালী জানান, ‘আমরা এমন নির্বাচনই চাই—যেন সকলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারি। এবং আমাদের কাছে যেন সব প্রার্থীই ভোট চাইতে আসতে পারেনে।’
এখন পর্যন্ত কতজন প্রার্থী আপনার কাছে ভোট চেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বলা যায় সব প্রার্থীই আমাদের কাছে এসেছেন। যেটা দুএকদিন আগেও দেখা যায়নি।’
কনফেকশনারি দোকানের মালিক তোফাজ্জল মিয়া জানান, ‘নির্বাচনে সব প্রার্থী আমাদের কাছে ভোট চাইবে এটাই নির্বাচনের সৌন্দর্য। আমরা ভোটার হিসেবে এটুকুই চাই। এলাকার উন্নয়নে যিনি কাজ করবেন—আমরা তাকেই ভোট দেব।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার নির্বাচনি এলাকা ঢাকা-৯ আসনের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। সামনেও করে যাব।’
এ ছাড়া তিনি তার নির্বাচনি এলাকাকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এলাকা হিসেবে গড়ে তোলারও প্রতিশ্রুতি দেন।
সাবের হোসেন তার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘এরই মধ্যে এ এলাকায় পাঁচশ শয্যার একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কাজ করছি। যাতে এলাকার বাসিন্দাদের চাহিদা পূরণে এলাকার বাইরে যেতে না হয়—সেটাই আমার লক্ষ্য।’
এলাকার পানি সমস্যা নিরসে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পানি সমস্যা ঢাকার সব এলাকাতেই রয়েছে। তবে এবার আমাদের এখানে প্রায় ৬৪টি পাম্প প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যা ঢাকার যেকোন নির্বাচনি এলাকার থেকে অনেক বেশি। এখানে এখন পানি সরবরাহের কোনো সংকট নেই। আমাদের এই এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ১২ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হয়। তবে কয়েকটি জায়গায় জলাবদ্ধতার কিছু কারণ রয়েছে। এসব সমস্যা দূর করতে নতুন করে অতিবর্ষণ একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব—তারা কীভাবে কত দ্রুত কাজ করবে সেটি এখন দেখার বিষয়।’
বিএনপির প্রার্থীদের প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে—এমন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘উনারা (বিএনপির প্রার্থী) সুনিদির্ষ্টভাবে বলতে পারবে না—কোথায় কোথায় তাদের পোস্টার লাগাতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কোথায় তাদের পোস্টার ছেড়া হয়েছে। উনি তো (বিএনপি প্রার্থী) ওনাদের প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র ঢালাওভাবে এসব বলে তিনি রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চান। এই প্রার্থী সাধারণ মানুষ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ায় নিউজে থাকার জন্য বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে মিথ্যা দাবি করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।’
‘তাদের অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে না দিয়ে শুধু মিডিয়াতে বলে যাচ্ছে। আমার এলাকায় অনেক ঘটনা ঘটে এগুলো নিয়ে আমরা কখনো কোনো মিডিয়ার সামনে বলিনি। বরং নিয়ম অনুযায়ী আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করি। তারপরও কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে থানায় মামলা দায়ের করুক।’
আফরোজা আব্বাসের প্রচারের সময় তার সঙ্গে চিহ্নিত সন্ত্রাসী থাকে উল্লেখ করে—আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘ওইখান থেকে অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কম করে হলেও দুডজন করে মামলা আছে। এরা চিহ্নিত সন্ত্রাসী। ওনি (আফরোজা আব্বাস) সন্ত্রাসীদের নিয়ে কেন প্রচারে যাবেন। হয়তো কোনো অঘটন ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল। তা না হলে তাদের কেন নিয়ে যাবেন। আপনি এলাকার লোকদের নিয়ে মিছিল করেন। অন্য এলাকার লোকদের নিয়ে কেন মিছিল করবেন এমন প্রশ্নও করেন তিনি। বাঁশ বা লাঠি নিয়ে গণসংযোগের মিছিল হতে পারে না’—বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী আফরোজা আব্বাস দাবি করেছেন—একজন প্রার্থী হিসেবে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তিনি পাননি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীসহ সকলের নিরাপত্তা চাই। প্রত্যেকটা গণসংযোগের পরে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়ে যায়। রাতে প্রত্যেকে বাড়িতে হামলা করে ধরে নিয়ে যায়। তারা আরামে গণসংযোগ করবে অন্যদিকে আমাদের ধরে নিয়ে যাবে—এটাতো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলো না।
যেভাবে আমাদের প্রচার-প্রচারণা করার কথা সেভাবে করতে পারছি না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিনবার আমি হামলার শিকার হয়েছি। এখন যেভাবে করছি—এটাতো গণসংযোগ, সেভাবে বলা যায় না। কেবল রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষ দৌঁড়ে এসে আমার কাছ থেকে লিফলেট নিচ্ছে। আমি জনগণের কাছে যেতে পারছি না। আজকে শুধু এই সুযোগটুকু পেলাম যে আমরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে পারছি।’
তারপরও পুলিশের আজকের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আজকে পুলিশের ভূমিকা ভালো ছিল। পুলিশ আমাদের যেভাবে সোঁজা যেতে বলেছে আমরা সোঁজা গিয়েছি। প্রতিপক্ষ প্রার্থীর মতো আমাদেরও পুলিশ সহযোগীতা করুক।’
তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রার্থী পুলিশের সাহায্য নিয়ে যেভাবে ভোটারদের কাছে যেতে পারছেন তেমন সুযোগটি তিনিও চাচ্ছেন বলে জানান।
চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রচার চালানোর বিষয়ে সাবের হোসেন চৌধুরীর এমন বক্তব্যের উত্তরে আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘একজনের বিরুদ্ধে ১২-১৩টি মামলা থাকলেই সে চিহ্নিত সন্ত্রাসী হয়ে যায় না। আমার বিরুদ্ধেও তো ১২-১৩টি মামলা রয়েছে। তাহলে কী তিনি আমাকেও চিহ্নিত সন্ত্রাসী বলতে চাচ্ছেন।’
ঢাকা-৯ আসনটি খিলগাঁও, সবুজবাগ, মুগদা, মাদারটেক ও গোড়ান এলাকা নিয়ে গঠিত। এ আসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪ ও৭৫ নম্বর ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ২৫ হাজার ৫৮২।
এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন সাবের হোসেন চৌধুরী, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপির আফরোজা আব্বাস, আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মাহফুজা আক্তার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ মানিক মিয়া, টেলিভিশন প্রতীক নিয়ে ন্যাশনালিস্ট পার্টি বিএনএফ এর শফি উল্লাহ চৌধুরী, মুসলিম লীগের হারিকেন প্রতীক নিয়ে আব্দুল মোতালেব ও জাকের পার্টির গোলাপ ফুল নিয়ে হুমায়ন কবীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
উল্লেখ্য ২০০৮ সালে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের ঢাকা-৮ আসনও ঢাকা-৯ এর সঙ্গে ছিল। এ আসন থেকে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে মির্জা আব্বাস নির্বাচন করেছেন। এর মধ্যে ১৯৯১ ও ২০০১ সালে তিনি জয়লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে এখান থেকে সাংসদ হন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। ২০০৮ সালে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই