Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পর্যবেক্ষক ইস্যুতে ব্রিটেনের উদ্বেগের পর যুক্তরাষ্ট্রের হতাশা


২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:৪০

।। এম এ কে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর্যবেক্ষক নিয়োগ ইস্যুতে ব্রিটেনের উদ্বেগ প্রকাশের পর এবার হতাশা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল/আনফ্রেল)-এর পর্যবেক্ষকদের আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ সরকার যথা সময়ে পরিচয়পত্র ও ভিসা দিতে না পারায় সংস্থাটি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। এই ঘটনায় হাতাশা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুন: ভোটের পর্যবেক্ষক নিয়োগে ব্রিটেনের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২১ ডিসেম্বর, শুক্রবার (বাংলাদেশ সময় ২২ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস আনফ্রেল-এর অধিকাংশ আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষককে বাংলাদেশ সরকার একটি বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ মিশন চালানোর মতো যথাযথ সময়ের মধ্যে পরিচয়পত্র ও ভিসা দিতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্র হতাশ।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ঐ মিশনে অর্থায়ন করেছিল। যথাসময়ে পরিচয়পত্র ও ভিসা না পেয়ে আনফ্রেল তাদের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।’

এর আগে ভোটের পর্যবেক্ষক নিয়োগ উদ্বেগ প্রকাশ করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড। পাশাপাশি ভোট উপলক্ষে সংগঠিত সহিংসতার প্রতি নিন্দা জানান ব্রিটিশ এই প্রতিমন্ত্রী।

যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্সে বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে (স্থানীয় সময়) অনুষ্ঠিত ‘রোহিঙ্গা রিফিউজিস ক্রাইসিস’ শীর্ষক এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড যুক্তরাজ্যের লিভারপুলের ওয়েস্টডার্বির এমপি স্টিফেন থুইগের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নাগরিক সমাজের বেশকিছু সংগঠনকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ ভোট অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে সহায়তা জোগায়।’

সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছে মার্ক ফিল্ড বলেন, ‘সহিংসতা পরিহার করে একটি গণতান্ত্রিক ভোট অনুষ্ঠান উপহার দিন। বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির স্বার্থে এবং সংসদে গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার জন্য গণতান্ত্রিক ভোট অনুষ্ঠানের বিকল্প নেই।’

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষকদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নিয়মাবলি ব্রিফের সময়ে গত ২০ নভেম্বর (মঙ্গলবার) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘ভোটের দিন কোনো পর্যবেক্ষক মিডিয়ায় কোনো কথা বা মন্তব্য করতে পারবে না। তাদেরকে মূর্তির মতো থাকতে হবে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পর্যবেক্ষকরা মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। কোনো ধরনের ছবি তোলা যাবে না।’

ইউরোপ-আমেরিকার পক্ষে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (আনফ্রেল) নামের বিদেশি এই সংস্থার ৩২ জনের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এই ৩২ জনকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য সময়মতো ভিসা ও পরিচয়পত্র না দেওয়ায় সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম বাতিল করেছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে ১১৮টি দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধিত, যার মধ্যে ৮১টি সংস্থা আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমতি চেয়েছে। ৮১টি সংস্থা থেকে ৩৪ হাজার ৬৭১ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আবেদন করেছে। যার মধ্যে নির্বাচন কমিশন সারাদেশে ৩০০ আসনে ২৫ হাজার ৯২০ জনকে অনুমতি দিতে পারে।

আরও জানা গেছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনুমতি চাওয়া ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে ১৪টি সংস্থার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন রয়েছে। পাশাপাশি একটি বড় রাজনৈতিক দল থেকে ৪টি সংস্থার বিপক্ষে অভিযোগ করা হয়েছে।

একাদশ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া (এফইএমবিওএসএ), অ্যাসোসিয়েশন অব আফ্রিকান ইলেকশন অর্থরিটিস (এএইএ), এ-ওয়েব-কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ভুটান এবং মালদ্বীপ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানো বলে দেশগুলো থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপিয় কমিশনের ৪ জন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অনেক আগেই ভোট পর্যবেক্ষণ করতে ঢাকায় এসছে।

ভিপেন্দ্র ইনিশিয়েটিভ কেন্দ্র নামের নেপালের একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৩ জন, ৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থা ৩২ জন এবং ৮ জন বিদেশি সাংবাদিক ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমতি চেয়েছে।

এর বাইরে, বাংলাদেশে ৫২টি বিদেশি মিশন থেকে প্রায় ১০০ জনের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। ৪টি বিদেশি সংস্থার ৩২ জন পর্যবেক্ষণের অনুমতি চেয়েছে। বিদেশি সাংবাদিকদের আবেদন এসেছে ৮টি।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই

পর্যবেক্ষক ইস্যু ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্র


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর