Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আল্লাহ যদি দিন দেয়, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করব’


২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:০৩

।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

সিলেট থেকে: ফের ক্ষমতায় আসতে পারলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার রায় কার্যকর করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘ওই লন্ডনে বসে নাটাই ঘোরায় একজন, যে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আল্লাহ যদি দিন দেয়, ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ধরে নিয়ে এসে বাংলাদেশে তার বিচারের রায় কার্যকর করব। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে দেবো না।’

আরও পড়ুন- আপনারা লাঙলেও ভোট দিয়েন: শেখ হাসিনা

শনিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা সরকারের টানা মেয়াদে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়নের পদক্ষেপ ও কর্মসূচিগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের সরকারের পদক্ষেপ তুলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের জন্য ভোট চান।

জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, এই নৌকা হচ্ছে মানুষের বিপদের বন্ধু। সেই নূহ নবীর আমলে মহাপ্লাবন থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল নূহ নবীর নৌকা। এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ পেয়েছে স্বাধীনতা, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়ে আজকে আমরা ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ৯৬ ভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। ইনশাল্লাহ, ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালব। কোনো ঘর অন্ধকার থাকবে না।

‘এই নৌকায় ভোট দিয়ে মা-বোনেরা অধিকার পাচ্ছে। জীবনের সব জায়গায় তাদের পদচারণা শুরু হয়েছে। আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে আজকে মা-বোনদের স্থান আছে। সবাই আজ সমান সুযোগ পাচ্ছে। কাজেই এই দেশকে আমরা সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। স্বাধীন জাতি হিসাবে আমরা চাই, একটা মর্যাদাশীল জাতি হিসাবে বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে চলব। কারও কাছে মাথা নিচু করে নয়,’— বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: আরও পড়ুন: নৌকা মানুষের বিপদের বন্ধু

বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। কারণ আমি দুর্নীতি করতে আসিনি। আমি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি, নিজের ভাগ্য না। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সুন্দর জীবন পাবে— সেটাই ছিল লক্ষ্য। সেই চ্যালেঞ্জ দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের সব অভিযোগ ভুয়া, বানোয়াট। আমি বলেছিলাম, বিশ্বব্যাংকের টাকা লাগবে না। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব। আল্লাহর রহমতে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি। এই একটা সিদ্ধান্ত সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে অনেক উচ্চ আসনে নিয়ে গেছে। সেই উচ্চ আসনটা ধরে রাখতে হবে।’

বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ওই বিএনপি-জামায়াত জোট বাঙালি জাতির মানসম্মান ভুলুণ্ঠিত করেছিল। হত্যা, খুন, অগ্নিসন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি— এগুলোই ছিল তাদের নীতি। রাতারাতি তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। আজকে নির্বাচনের নমিনেশনে তারা কী করেছে? একেক সিটে চার-পাঁচ জনকে নমিনেশন দিয়েছে। তারপর একেকটা সিট অকশনে দিয়েছে। যে বেশি টাকা দেবে, সে নমিনেশন পাবে। এই অকশনে দিতে গিয়ে তাদের ছেঁড়াবেড়া অবস্থা। কেউ আর তাদের বিশ্বাস করে না।

তিনি বলেন, এই সিলেটে ইনাম চৌধুরী সাহেব, তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। আমি তাকে স্বাগত জানাই। তিনি আছেন, এখানে নেই। ওনাকে রাখা উচিত ছিল। কিন্তু বিএনপি কী করেছ? একেক জনের কাছে টাকা চায়, দিতে না পারলে নমিনেশন নাই। দিতে পারলে নমিনেশন আছে। একজন যদি এক কোটি দেয়, আরেকজন দুই কোটি দেয়। কেউ দুই কোটি দিলে আরেকজন দেয় পাঁচ কোটি, কেউ দেয় সাড়ে পাঁচ কোটি। তাহলে পাঁচ কোটি বা সাড়ে পাঁচ কোটি আসো। এইভাবে তারা অকশন দিয়েছে। আপনারা বলেন, এরা কি রাজনীতি করে?

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশ সারাবিশ্বে যে সম্মান অর্জন করেছে, এই সম্মান নিয়ে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ আজ বিদেশে গেলে সম্মান পায়। সেই সম্মান নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। তাহলে কী করতে হবে? একটাই কাজ করতে হবে। সিলেটবাসীর কাছে আবারও এসেছি, কেন এসেছি? আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। নৌকায় ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করবেন, সেই আশায় আপনাদের কাছে এসেছি। আমি শুধু নৌকা মার্কা না, আমরা মহোজাট করেছি। মহাজোটের প্রার্থীও আছে। তাদের লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দেবেন।

আরও পড়ুন- মাজার জিয়ারত শেষে জনসভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী

এরপর একে একে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের নৌকা ও মহাজোটের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। প্রার্থীরা সবাই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

পরিচয়পর্ব শেষে সিলেট বিভাগের মানুষের কাছে ভোট আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এসেছি, সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হলো না। কিন্তু আপনাদের কাছে এই নিবেদনটা রেখে যাই— আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন। এই নির্বাচনে আমরা নৌকা মার্কায় ভোট চাই। কারণ নৌকা মার্কায় উন্নয়ন, আর ধানের শীষ মার্কা মানে কী? দুর্নীতি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অগ্নিসন্ত্রাস। আর ওই স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের যারা নমিনেশন দিয়েছে, যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে শাস্তি দিয়েছি। তাদেরকে আজকে তারা কাছে টেনে নিয়ে নির্বাচনের অংশীদার হয়েছে। এরা বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসা মানে দেশকে ধ্বংস করবে। দেশের সকল অর্জন নসাৎ করে দেবে। কারণ এরা স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না। তাই নৌকা মার্কায় আমরা ভোট চাই।

‘ইনশাল্লাহ নৌকার বিজয় হবে এবং এই নৌকা মার্কাই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তুলবে। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবার্ষিকী উদযাপন করব। ২১০০ সালের মধ্যে ডেলটা প্ল্যান বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ বিশ্বে সব চেয়ে উন্নত দেশ হবে। তাই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন,’— বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান জনসভায় সভাপতিত্ব করেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সভায় বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী।

আরও পড়ুন- রেজা কিবরিয়া ধানের শীষে, এর চেয়ে লজ্জার কিছু নেই: শেখ হাসিনা

সভা পরিচালনা করেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরান চৌধুরী। জেলা ও  মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আসাদ, মৌলভীবাজা জেলার সাধারণ সম্পাদক মেসবাউর রহমান, সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমনসহ অন্যরা। এছাড়াও প্রার্থীদের মধ্যে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন-

সিলেটে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী, দুপুরে জনসভা

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনি জনসভা শেখ হাসিনা সিলেট

বিজ্ঞাপন

বিজয়ের মাসে ‘নয়া মানুষ’
২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২১

আরো

সম্পর্কিত খবর