সংবাদ সংগ্রহে মোটরসাইকেল ব্যবহারে ‘নিষেধাজ্ঞা’ ইসির
২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংবাদিক নীতিমালা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে সাংবাদিকরা যেন মোটরসাইকেল ব্যবহার করে সংবাদ সংগ্রহ করতে না পারেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নীতিমালায় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা ও তথ্য সংগ্রহ করতে পারার কথা বলা আছে। তবে একসঙ্গে একাধিক সাংবাদিক একই ভোটকেন্দ্রের একই ভোটকক্ষে একসঙ্গে প্রবেশ করতে পারবেন না। এমনকি ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরাসির প্রচার করা যাবে না।
শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব (জনসংযোগ শাখা) এস এম আসাদুজ্জামানের সই করা ওই নীতিমালায় সাংবাদিকদের জন্য এক ডজনেরও বেশি দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসব নীতিমালা অমান্য করলে বা নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আইন, বিধি ও কোড অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নীতিমালাটি এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচনের সকল রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে— সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভোটগ্রহণের দিনসহ বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকরা যেন সহজে ও নির্বিঘ্নে নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেন, সেজন্য সহযোগিতার প্রয়োজন। তবে তা অবশ্যই নির্বাচনের সময়, ভোটগ্রহণ ও ভোট গণনার সময় প্রযোজ্য বিধিনিষেধ মেনে করতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। এজন্য ভোটকেন্দ্রের সংবাদ সংগ্রহের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে সাংবাদিকদের বিশেষ কার্ড সরবরাহ করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার কার্ড দেবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সাংবাদিকদের কার্ড প্রদানের ক্ষমতা দিতে পারবেন। এছাড়া ঢাকা থেকে যেসব সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি সংবাদ সংগ্রহ করতে যাবেন, তাদের কার্ড নির্বাচন কমিশন থেকে দেওয়া হবে। এতে আরও বলা হয়, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত এবং অনুমোদনসূচক স্টিকারযুক্ত যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন। তবে মোটরসাইকেল ব্যবহার করার জন্য কোনো ধরনের স্টিকার ইস্যু করা হবে না।
এখানে উল্লেখ্য, সাংবাদিকদের মোটরসাইকেলের স্টিকার না দেওয়ার ঘটনা এই প্রথম। এর আগে, নির্বাচনের আগে-পরে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সাংবাদিকরা নির্বাচন কমিশনের দেওয়া স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল ব্যবহার করে সংবাদ সংগ্রহ করতে পারতেন। এবারে, এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ভোটের সময় মোটরসাইকেল চালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ২ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত, ক্ষেত্র বিশেষ আরও বেশি সময়ের জন্য মোটরসাইকেল বা অনুরূপ যানচলাচলে নিষেোজ্ঞা থাকবে। ফলে ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে-পরে মোট চার দিন সাংবাদিকরাও মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারছেন না। সংবাদ সংগ্রহের জন্য তাদের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ব্যবহার করতে হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন। তবে কোনোভাবেই গোপন কক্ষের ছবি সংগ্রহ কিংবা ধারণ করতে পারবেন না।
একইসঙ্গে একাধিক গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী একই ভোট কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোট কক্ষের ভেতর থেকে কোনোভাবেই সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোটকেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোট কক্ষ থেকে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে তা করতে হবে। কোনোভাবেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাধা তৈরি করা যাবে না।
ইসি’র নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সাংবাদিকরা ভোট গণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না। ভোট কক্ষ থেকে ফেসবুকসহ কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা যাবে না। ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়— এমন যেকোনো ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকরা প্রিজাইডিং অফিসারের আইনি নির্দেশ মেনে চলবেন। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোনো ধরনের নির্বাচনি উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না।
নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যেকোনো ধরনের প্রচারণা বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনি আইন ও বিধিবিধান মেনে চলতেও নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর