টক অব দ্য কান্ট্রি: ২৪ ডিসেম্বর সেনা নামছে
২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৯:১০
।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন এই ভোটকে কেন্দ্র করে সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) মাঠে নামছে সেনাবাহিনী। ‘ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী সশস্ত্রবাহিনী আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১০ দিন কাজ করবে। ভোটের পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সশস্ত্রবাহিনীর মাঠে নামার বিষয়টি এখন দেশজুড়ে আলোচিত হচ্ছে।
এ ছাড়া যে ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, সেখানে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। তারা বাহিনীর পোশাকে থাকবেন কিন্তু কোনো ধরনেরই অস্ত্র-গোলাবারুদ বহন করবে না।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভোটের তফসিল ঘোষণার পর সবগুলো রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল প্রতীক বরাদ্দের পর তা অনেকাংশেই মিইয়ে গেছে। মহাজোটের প্রার্থীরা প্রচারণা চালালেও ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন যে সরকারের বাধা, হামলা এবং আটকের কারণে তারা প্রচারণা চালাতে পারছেন না।
আরও পড়ুন- ৩৮৯ উপজেলায় সেনা, ১৮ উপজেলায় নৌ সদস্য নামছে রাতে
এরই মধ্যে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে যে ভোটের মাঠে সকল দলের সমান সুযোগ নেই। তাই ২০ দলীয় জোট সুযোগমতো মাঠে নামবে। এই জোটটি আরো বলছে যে, ২৪ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনী মাঠে নামবে, তখন মাঠে সমতা থাকবে এবং ২০ দলীয় জোট প্রচারণা চালাবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল কামাল হোসেন রোববার (২৩ ডিসেম্বর) বলেন, ‘আমাদের দেশের গর্বিত সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য জনগণের স্বার্থের পক্ষে কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন এবং কোনোভাবেই একজন ব্যক্তি বা একটি গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করবেন না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময়ই দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত; কোনো ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষার কারণে তাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে না।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার (২৩ ডিসেম্বর) বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, সেনাবাহিনী নিয়োগের ফলে নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যা এতদিন মোটেও বিদ্যমান ছিল না।’
এর আগে, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু গত শনিবার (২২ ডিসেম্বর) বলেছেন, ‘আগামী ২৪ তারিখ থেকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে সেনাবাহিনী মাঠে নামলে নির্বাচনি পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। তখন আর সরকারের দলীয় ক্যাডাররা ও সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর কোনো নির্যাতন ও অত্যাচার করতে পারবে না। তখন আমরা জোরোসোরে প্রচারণা চালাব।’
এদিকে সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোট উপলক্ষে সেনাবাহিনীর মাঠে নামার বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনা হচ্ছে। অফিস আদালত থেকে শুরু করে ফুটপাতের চায়ের দোকানেও এই উত্তাপ পাওয়া গেছে।
শাহবাগ মোড়ে পূবালী ব্যাংকের নিচের এক আড্ডার আলোচনা ছিল এমন, ‘একজন: আচ্ছা বিএনপি যে সেনাবাহিনী, সেনাবাহিনী করতেসে, তো ২৪ তারিখে তারা নামলে কী হবে। অন্যজন: কিছুই হবে না, এগুলো হল, মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা। আরেকজন: কেন কিছুই হবে না? প্রথমজন: আরে তাদের কী কোনো ক্ষমতা আছে নাকি? তারা নামলেও যা, না নামলেও তা।’
পুরানা পল্টনের এক চায়ের দোকানি জানতে চাইল, ‘মামা, হুনলাম, কাইল নাকি আর্মি নামব।’
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে সশস্ত্রবাহিনী’র কাজ করা প্রসঙ্গে গত বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভা থেকে জারি করা এক পরিপত্র জারি করা হয়। ওই পরিপত্রে সশস্ত্র বাহিনীর এই কর্মপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী সশস্ত্রবাহিনী কাজ করবেন।
পরিপত্রের নির্দেশানুযায়ী, ‘সোমবার ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১০ দিন মাঠে থাকবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।’
নির্বাচনে যেভাবে কাজ করবে সেনাবাহিনী: মূলত তারা জেলা, উপজেলা ও মহানগর এলাকার সংযোগ স্থলে (নডাল পয়েন্ট) অবস্থান করবেন, প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা সহায়তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবেন তারা। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনাকক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী।
সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের কাজে যাবতীয় সহায়তা দেবে সশস্ত্র বাহিনী। প্রয়োজনে পরিস্থিতি বিবেচনা বা নির্দেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এই বাহিনী।
পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারা অনুযায়ী কাজ করবে সশস্ত্র বাহিনী। অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সশস্ত্র বাহিনীকে ডাকা হলে এ ক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা না গেলে ঘটনাস্থলে থাকা সর্বোচ্চ পদের ম্যাজিস্ট্রেট সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ ও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারবেন।
এছাড়া জরুরি পরিস্থিতিতে যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, সে ক্ষেত্রে কমিশন্ড অফিসার সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারবেন।
সামরিক শক্তি প্রয়োগের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিত নির্দেশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মৌখিক নির্দেশ দেওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা লিখিত আকারে দেবেন।
ইভিএমের ছয়টি আসনে সেনাবাহিনী পরিচালনা করবে: যে ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, সেখানে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। তারা বাহিনীর পোশাকে থাকবেন কিন্তু কোনো ধরনেরই অস্ত্র-গোলাবারুদ বহন করবে না। ইভিএম কেন্দ্রে যেসব সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য থাকবেন, তাদের নিরাপত্তার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর নিকটতম টহল দল ও স্থানীয় ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’
সারাবাংলা/জেআইএল/একে