নওগাঁ-৫: আ’লীগ চায় ধরে রাখতে, বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার
২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:১৩
।। আব্দুর রউফ পাভেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
নওগাঁ: সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নওগাঁ-৫ সদর আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও জোটের প্রার্থীরা নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনি গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রার্থীরা উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রচারণার মাঠে নেমেছেন।
ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে গণসংযোগ। এসবের মধ্যে আছে লিফলেট বিতরণ আর ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়। নিজ নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে শ্লোগান দিচ্ছেন কর্মী সমর্থকরা। এছাড়া খন্ড খন্ড ভাবে স্ব স্ব দলের নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণা করছেন। সাদা কালো পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট ও হাট-বাজারগুলো। এছাড়া, প্রার্থীদের বিভিন্ন শ্লোগান মোবাইলে রেকর্ড করে মাইকে চালানো হচ্ছে। এছাড়া, অটোচার্জার, রিক্সা ও মোটর সাইকেলে মাইক নিয়ে প্রচারনায় ছুটে চলছেন বিভিন্ন এলাকায়।
এ আসনে নির্বাচনি লড়াই হবে মূলত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মরহুম আব্দুল জলিলের ছেলে জেলা আ’লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন এবং বিএনপি প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু। তারা দু’জনে এবার সংসদ নির্বাচনে নতুন মুখ। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাত পাখা প্রতীকে আশরাফুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ এ আসনটি ধরে রাখতে চাইছেন আর বিএনপি তা পুনরুদ্ধারে দিচ্ছে উন্নয়নের নানান প্রতিশ্রুতি।
এ উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬৬৬ জন।
নওগাঁ জেলা সারা দেশের মধ্যে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিল নামে সুপরিচিত। আর জেলার মধ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে এটি ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের সাবেক প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিলের চমকপ্রদ ভূমিকার কারণেই নওগাঁয় আওয়ামীলীগের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন। ১৯৯১-৯৬ সালে এ আসনটিতে ছিলেন বিএনপির আলহাজ্ব শামসুদ্দিন আহমেদ। এরপর ২০০১ সাল থেকে ২০১৩ সালে ৬ মার্চ পর্যন্ত আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল জলিল ক্ষমতায় ছিলেন। ২০১৩ সালে উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন আব্দুল মালেক। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব রফিকুল ইসলামকে হারিয়ে তিনি আবার সাংসদ নির্বাচিত হন।
তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগ থেকে আব্দুল মালেক এমপি এবং জলিলপুত্র ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তবে সর্বশেষ চুড়ান্ত ভাবে ব্যারিস্টার নিজামউদ্দিন জলিল জনকে মনোনীত করা হয়। দলীয় প্রতীক পাওয়ার পর থেকে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। এ আসনটি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। অপরদিকে বিএনপি দীর্ঘ ১০ বছর পর এ আসনটি পুনরুদ্ধারে তৎপর হয়ে উঠেছে।
এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুল জলিল দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ভালবেসেছেন এবং কাছে টেনে নিয়েছেন। নওগাঁর জন্য তিনি অনেক উন্নয়ন করেছেন। আব্দুল জলিলের কারণে আজ তার ছেলের এতো জনপ্রিয়তা। দলমত কোনো কিছু না ভেবেই নিজাম উদ্দিন জলিলকে সবাই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। সে দিক থেকে বিবেচনা করে বাবার জনপ্রিয়তার কারণে নিজাম উদ্দিন জলিল বিজয়ী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বেশী।
ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন বলেন, আমি চেষ্টা করছি সবার দরজা পর্যন্ত যাওয়ার। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ তুলে ধরছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার আসনটা উপহার দিতে পারি এই চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমার বাবা সারাজীবন এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তিনি নওগাঁবাসীর জন্য অনেক উন্নয়ন করেছেন। আমি নির্বাচিত হতে পারলে বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে পারব ইনশাল্লাহ। এ কারণে, নওগাঁবাসীর ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমি তরুণ হওয়ায় তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করছি।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম ধলু বলেন, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে নওগাঁ সদর সহ অন্যান্য আসনে আমরা বিজয়ী হবে বলে আশাবাদী। আমরা তৃনমূল জনগণের বেশ ভাল সাড়া পাচ্ছি। নওগাঁর উন্নয়নে যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করার চেষ্টা করব। বিশেষ করে নওগাঁয় গ্যাস নিয়ে আসা, শহরের দক্ষিণ পার্শ্বে আরো একটি বাইপাস নির্মাণ, শহরের মধ্যে রাস্তাগুলো প্রশস্ত করে একমুখী এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। যদি ক্ষমতায় যেতে পারি তাহলে জনগণের প্রতিটি দাবী আমরা পূরণ করব ইনশাল্লাহ।
সারাবাংলা/জেএএম