অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে উদ্যোক্তরা
১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৮:৫৯
হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : অনুমোদিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে (ইজেড) চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাজ করতে পারছে না শিল্প উদ্যোক্তারা। এরইমধ্যে অনুমোদন পাওয়া ৭৯টির মধ্যে তিনটি শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন কাজ শুরু হয়েছে। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ২৩টি প্রকল্প। অন্যদিকে বাস্তবায়নাধীন, অনুমোদিত ও অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা উদ্যোক্তারা নিজেদের অঞ্চলগুলোতে প্রয়োজনীয় গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ নিয়েও শঙ্কায়-সংশয়ে রয়েছেন।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে একশ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) গড়ে তোলা হবে।
জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিপুল উৎপাদন ও রফতানির প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়া না গেলে- এসব এলাকায় বিনিয়োগ বাড়বে না। তাই গ্যাস ও বিদ্যুতের উৎপাদন-আমদানি বাড়াতে বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে বেজা’র নির্বাহী সদস্য এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. মো. এমদাদুল হক সারাবাংলা’কে বলেন, যে অঞ্চলগুলো স্থাপন করা হচ্ছে সেগুলোতে আমরা এখনও গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিচ্ছি না। চলতি বছরের মধ্য এবং শেষ ভাগে এলএনজি আমদানি শুরু করবে পেট্রোবাংলা এবং সামিট গ্রুপ। এছাড়া আরও এলএনজি আনার প্রক্রিয়া চলছে। শিগগির গ্যাস সংকট নিরসন হবে বলে আমরা মনে করছি।
এ পর্যন্ত চার ক্যাটাগরিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ৫০টি, বেসরকারি ২৩টি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ২টি এবং জি টু জি (বাংলাদেশ সরকার এবং বিদেশি সরকারের যৌথ অংশীদারিত্ব) অঞ্চল ৪টি। আরও দুইটি জি টু জি অঞ্চল শিগগির অনুমোদন দেওয়া হবে। সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পর্যায়ক্রমে পিপিপি জোনে রূপান্তরিত হবে।
বেজার সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অনুমোদিত শিল্পাঞ্চলগুলোর মধ্যে সরকারি অঞ্চলগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ এখনও শুরু হয়নি। অন্যদিকে অনুমোদিত বেসরকারি অঞ্চলের মধ্যে ৫টিকে চূড়ান্ত অনুমোদনপত্র দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মেঘনা, বে এবং আমান গ্রুপ উৎপাদন শুরু করেছে।
অনুমোদন পাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্বল্পমাত্রায় উৎপাদন শুরু করেছে। গ্যাস সংযোগ চেয়ে এখনও পায়নি শিল্পগ্রুপটি। একই জেলায় আমান অর্থনৈতিক অঞ্চলে অন্তত ৪টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী, ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেলেও গ্যাস পাচ্ছে না। গাজীপুরেও ৩টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করলেও গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে।
এদিকে মুন্সীগঞ্জে আবদুল মোনেম অঞ্চলে ৩টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। এ জোনে শিগগির মোটরসাইকেল নির্মাণ শুরুর কথা রয়েছে। তবে গ্যাস না পাওয়া গেলে সেটিও পিছিয়ে যাবে। নারায়ণগঞ্জে মেঘনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলেও চাহিদামতো গ্যাস না পাওয়ায় পুরোদমে উৎপাদন শুরু হচ্ছে না। ঢাকায় আরিশা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২টি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলেও গ্যাসের অভাবে থমকে যাচ্ছে উৎপাদন।
সম্প্রতি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় উপস্থিত বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতিনিধিরা জানান, প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ এবং গ্যাস না পাওয়ায় তারা কাঙ্ক্ষিত গতিতেও আশানুরূপ পরিমাণে উৎপাদন করতে পারছেন না। বিনিয়োগ নিয়েও তৈরি হচ্ছে হতাশা। ওই সভায় মেঘনা অর্থনৈতিক জোনের চেয়ারম্যান জানান, মেঘনার অঞ্চলে ছয়টি শিল্প-কারখানা পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। তাদের ইকোনমিক জোনে একশ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে বিদ্যুতের চাহিদা ৫৫ মেগাওয়াট। তবে সেখানে গ্যাস সংযোগ নিশ্চিত না হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের চেয়ারম্যান তাদের ইকোনমিক জোনে দ্রুত গ্যাস সংযোগ দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রসঙ্গে সারাবাংলা’কে বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে আমদানি করা এলএনজি মিশিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা হবে। এই গ্যাসই আপাতত শিল্পে সরবরাহ করা হবে। ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না- সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
সারাবাংলা/এটি/একে