সতর্ক করার পরও নিয়ম মানেননি রুবি ভিলার মালিক
১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:৫২ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ১৯:০২
মো. শামীম রিজভী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : রাজধানীর নাখালপাড়ার রুবি ভিলায় এর আগেও একাধিকবার জঙ্গি কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র্যাব ও স্থানীয় থানা পুলিশ বারবার ওই বাড়ির মালিককে সতর্ক করার পরও পরিচয় নিশ্চিত না হয়েই বেশ কয়েকজনকে মেস ভাড়া দেওয়া হয়।
তেজগাঁও থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, একবছর আগে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি অভিযোগে র্যাব তিনজনকে আটক করে। পরে যাচাই-বাছাই শেষে একজনের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অগাস্ট এবং ২০১৩ সালে এ বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাব।
দিন বিশেক আগেও পুলিশ গিয়ে ওই বাড়ির মালিককে মেস ভাড়া না দেওয়ার জন্য বলে আসে। আর যদি মেস ভাড়া দেওয়া হয় তাহলে যেন জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব তথ্য রাখতে বলা হয়। কিন্তু তারা এবারও তা করেননি।
র্যাব ও এলাকাবাসী জানায়, ছয়তলা রুবি ভিলার পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় মেস ভাড়া দেওয়া নিয়ে বহুদিন ধরেই তারা আপত্তি জানিয়ে আসছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই বাড়ির মালিক শাহ মোহাম্মদ সাব্বির হোসেন (৫৫) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু। তার বাড়িতে যখন অভিযান চলে, তখন তিনি ফ্লাইটে ডিউটিতে ছিলেন।
১৩/১ রুবি ভিলার পাশের বাড়ির বাসিন্দা খলিলুদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, ওই বাড়ির প্রতিটি তলায় দুটি করে ইউনিট আছে। মেস অনেক আগে থেকেই ভাড়া ছিল। মেসের ছেলেরা কেমন জানা নেই, কারণ আমি সকালে কাজে যাই আর রাতে ফিরি। তবে আগেও এ বাড়ি থেকে জঙ্গি গ্রেফতার করা হয়।
পশ্চিম নাখালপাড়ার ৬০ নম্বর বাড়ির মালিক মো. নাসির হোসেন সারাবাংলাকে জানান, সাব্বির হোসেনের আচরণে আমাদের কখনো সন্দেহ হয়নি। তবে এর আগেও ওই বাড়ি থেকে একাধিকবার জঙ্গি ধরে নিয়ে গেছে র্যাব।
তেজগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, নাশকতার মামলায় জামায়াত-শিবিরের ৩ জনকে গতবছর ওই বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয়।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র পারভেজ। তিনি ওই বাড়ির ৬ তলায় মেসে ছিলেন। একবছর আগে তিনি ওই বাড়িতে ভাড়া ওঠেন। মধ্যরাতে যখন র্যাবের অভিযান শুরু হয় তখন পারভেজ আতংকিত হয়ে বাবা কামাল হোসেনকে ফোন করেন। গাজীপুর থেকে বড় ছেলের জন্য নাখালপাড়া ছুটে আসেন কামাল হোসেন।
কামাল হোসেন সারাবাংলাকে জানান, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘেরাও হওয়া ভবনটিতে অনেক বাসিন্দার মতো তার ছেলেও আটকা পড়েছে। ৭-৮ মাস আগে কামাল হোসেন এই বাসায় এসেছিলেন। তখন ১৫ মিনিটের মতো অবস্থান করেন। তখন তিন রুমের এই বাড়ির ভেতর যাদের তিনি দেখেছেন, তাদের সবাই ব্যাচেলর ছিল।
সন্ধ্যায় র্যাবের অভিযান শেষ হওয়ার পর কামাল হোসেন র্যাব কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে ছেলে পারভেজের সঙ্গে দেখা করেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এর আগেও ২০১৩ ও ২০১৬ সালে রুবি ভিলায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন জেএমবি সদস্যকে আটক করে র্যাব। রুবেলই মেসের ভাড়াটিয়া ঠিক করত। কিন্তু তাকে জিজ্ঞাসাবাদে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থল থেকে ১৪টি ডেটোনেটর, ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ২টি পিস্তল, ৩টি আইইডি বোমা ও ৪টি পাওয়ার জেল (বিস্ফোরক) উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা একটি লাশের নিচে থেকে একটি গ্রেনেড ও গ্যাসের চুলার উপর থেকে একটি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে। যে ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
বাসাটির ভেতরের সদর দরজা দিয়ে ঢুকলে প্রথমে বড় একটি কক্ষ। তার পিছনে আরও তিনটি বেডরুম। বড় কক্ষটির হাতের বাম পাশের বেডরুমটি ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। ওই কক্ষে একটি চৌকির ওপর কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র স্তূপ করে রাখা রয়েছে এবং মেঝেতে পড়ে আছে দুটি পিস্তল, ৪৪টি গুলির খোসা ও সাদাকালো রঙের তিনটি স্কার্ফ।
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজির আহমেদ বলেন, বাড়িওয়ালা সাব্বির হোসেন জানেনই না তার বাড়িতে নতুন ভাড়াটিয়া উঠেছে। তিনি তার বাড়িটি ভাড়া দেওয়ার জন্য রুবেল নামে একজনকে দায়িত্ব দেন। রুবেলই মেস ভাড়া দিয়ে থাকে।
সারাবাংলা/এসআর/জেডএফ